জোড়াতালি দিয়ে চলছে ঢাকা-সিলেট রেলপথ, মারাত্মক ঝুঁকি
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ আগস্ট ২০১৭, ১:২৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
তিনটি ভাঙা সেতু জোড়াতালি দিয়ে চলছে ঢাকা-সিলেট রেলপথ। ওই তিনটিসহ এ পথের অধিকাংশ সেতুই অতি পুরোনো ও নড়বড়ে। ফলে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৭৬ কিলোমিটারের ঢাকা-সিলেট রেলপথটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি। এ রেলপথের অধিকাংশ সেতুও সেই সময়ের। ফলে সেতুগুলো ১০০ বছরের বেশি পুরোনো। তবে সেতুগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ বা নড়বড়ে বলতে রাজি নয় রেল বিভাগ। তাদের ভাষায়, এ পথের ১৫-২০টি সেতু মেরামতযোগ্য। তবে বাস্তবে সংখ্যাটা আরও বেশি হবে।
রেলের বিভাগীয় প্রকৌশলী হাসান জাহাঙ্গীর বলেন, ঢাকা-সিলেট রেলপথে এমন সেতুর সংখ্যা ১৫-২০টির বেশি হবে না। এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বা নড়বড়ে, এমন কথা সঠিক নয়। আসলে এগুলো মেরামতযোগ্য সেতু। সেগুলো চলতি বছরই ঠিকঠাক করে ফেলা হবে বলে আশা করছেন তিনি।
ঝুঁকিপূর্ণ ওই ১৫-২০টি সেতুর মধ্যে বেশি খারাপ অবস্থা অন্তত ছয়টির। সেগুলো হলো হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজিবাজারে ৭৩ নম্বর সেতু, সদর উপজেলার লস্করপুরে ১০২ নম্বর সেতু ও শায়েস্তাগঞ্জে ১০৫ নম্বর সেতু, সিলেটের ছাতকে ৩২ নম্বর সেতু, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের রশিদপুরে ১১৪ নম্বর সেতু ও কমলগঞ্জের ভানুগাছে ১৮৩ নম্বর সেতু।
হবিগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সদস্য ও সমাজসেবক হুমায়ুন সৈকত বলেন, ঢাকা-সিলেট রেলপথের অবস্থা খুবই দুর্বল। রেলপথটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উন্নয়নকাজ চোখেই পড়ে না। যে কারণে সময়ের ব্যবধানে পুরো রেলপথটি ঝুঁকিতে আছে। প্রায় সময়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
সাম্প্রতিক সময়ে সেতু-সংশ্লিষ্ট তিনটি ঘটনায় ঢাকা-সিলেট রেলযোগাযোগ বন্ধ ছিল। এর মধ্যে হবিগঞ্জের মাধবপুরের ইটাখোলায় ৫৬ নম্বর সেতুর পিলারের নিচ থেকে মাটি ও বালু সরে যাওয়ায় গত ৩০ মার্চ সেতুটি দেবে যায়। এতে টানা চার দিন রেলযোগাযোগ বন্ধ ছিল। এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ভাড়াউড়া এলাকায় ১৫৭ নম্বর সেতুর পিলারের নিচ থেকে মাটি সরে সেতুটি দেবে যায়। এতে রেলযোগাযোগ ১৪ ঘণ্টা বন্ধ হয়ে পড়ে। সর্বশেষ ৪ এপ্রিল শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও এলাকায় ১৪১ নম্বর সেতুর গার্ডার ধসে পড়ে। এতে এক দিন রেলযোগাযোগ বন্ধ ছিল। প্রতিটি ঘটনার পরই সেতু জোড়াতালি দিয়ে পুনরায় রেল যোগাযোগ স্থাপন করা হয়। এখনো নড়বড়ে সেতু দিয়েই ট্রেন চলছে।
মাধবপুরের ইটাখোলায় সেতু দেবে যাওয়ার পর ১ এপ্রিল রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, এটিসহ যেসব সেতু দুর্বল, সেগুলোর স্থানে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে। এর জন্য তাঁরা দরপত্র গ্রহণ করেছেন। কিন্তু চার মাস পার হলেও এ নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ২৫ জুলাইরেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে ফোন করা হলে একজন কর্মকর্তা জানান, শহীদুল ইসলাম রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়ে চলে গেছেন।
বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ঢাকা-সিলেট রেলপথে নানা দুর্বলতা আছে, এটা সত্য। তবে এ রেলপথকে ‘ডাবল লাইন’-এপরিণত করতে অর্থমন্ত্রী রেলপথ মন্ত্রণালয়কে আধা সরকারিপত্র (ডিও) দিয়েছেন। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। পাশাপাশি আখাউড়া-সিলেট ডুয়েলগেজ প্রকল্পের আওতায় রেলপথটির সেতুগুলো পুনর্বাসন (মেরামত) করা হচ্ছে। এ জন্য দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্য ঢাকা-সিলেট রেলপথ আধুনিক ও পূর্ণাঙ্গ রেলপথে পরিণত হবে বলে আশা করেন তিনি।- প্রথম আলো