ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে হিজড়াদের দাপট : বকশিশ না দিলে গাড়ি চলাচল করতে বাধা
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ জুলাই ২০১৭, ১২:৫০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
নির্ধারিত স্থান, পাড়া-মহল্লা ছাপিয়ে হিজড়াদের দাপট এখন দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও হাইওয়ে রাস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে। হাইওয়ে রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড বা কোন মোড়ে দলবেঁধে দাঁড়িয়ে থাকছে তারা। গাড়ির গতি কমলেই গ্লাসে টোকা দিয়ে ‘বকশিশ’ চায়। অনেক ক্ষেত্রে বকশিশ না দিলে গাড়ি চলাচল করতে বাধা দেয়।
গাড়ির সামনে দলবেঁধে দাঁড়িয়ে যায়। গত শুক্রবার কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত ভ্রমণ করে ১০টি স্পটে হিজড়াদের দাপট ও চাঁদাবাজির এ চিত্র দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ ছুটির দিনে হিজড়াদের দাপট বেড়ে যায়। হিজড়াদের কাছাকাছি দূরত্বে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দাঁড়িয়ে থাকলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায় ডিউটিরত পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিন জানান, মানসম্মান আমাদের সবার আছে। হিজড়াদের চাঁদাবাজিতে বাধা দিলে ওরা শরীর থেকে জামা খুলে ফেলে। অশোভন আচরণ করে। তাই মানসম্মানের ভয়ে আমরাও কিছু বলতে পারি না।
রূপগঞ্জের কাঞ্চনে টোল প্লাজা পার হয়ে ঢাকা সিলেট হাইওয়ে রাস্তায় উঠার জন্য ‘কাঞ্চন-ছনপাড়া’ নামে একটি বাইপাস রোড রয়েছে। ওই বাইপাস রোড দিয়ে কোনো রকমে দুটি গাড়ি চলাচল করতে পারে। ওই রাস্তা ধরে দুই কিলোমিটার যাওয়ার পর কানাডা রিচমন্ড সিটি নামে একটি হাউজিং কোম্পানির অফিসের সামনে গাড়ি আটকায় তিন হিজড়া। নানা অঙ্গভঙ্গি করে গাড়ির গ্লাস খুলতে বলে তারা। এরপর সহাস্যে বলে, ‘আমাদের কিছু বকশিশ দিয়ে যাও’। তাদের কথা শোনার পর গাড়ির গ্লাস বন্ধ করে দিলে রক্ষা নেই। গাড়ির সামনে দলবেঁধে দাঁড়িয়ে যায়। নানা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। গ্লাস খুলে ২০ টাকা দেয়ার পর তারা বলে উঠে আমাদের ভিক্ষা দিচ্ছ। আমরা ভিক্ষা নেই না। ভালোভাবে সম্মান করে চলে যাও। তখন ৫০-১০০ টাকা দেয়া মাত্রই গাড়ি ছেড়ে দেয় তারা।
হিজড়াদের এমন কার্যকলাপ দেখে এলাকার কিছু কিশোর জড়ো হয়। সোলেমান নামে এক কিশোর জানায়, শুক্রবার ছনপাড়া রোড দিয়ে প্রাইভেট গাড়ি বেশি চলাচল করে। তাই বেশি আয় হওয়ার কথা চিন্তা করে এ রাস্তার চলে আসে। মঙ্গলবারে ওরা (হিজড়ারা) ভুলতা গাউছিয়া মার্কেটের কাছে চলে যায়। এরপর মৌলভীবাজার পর্যন্ত যেতে পাঁচদোনা, মাধবদী, নরসিংদী বাসস্ট্যান্ড, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্বরোড মোড়, সরাইল ও শাহজীবাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে হিজড়াদের তৎপরতা দেখা যায়। পছন্দমতো নজরানা না দিলে বাস, প্রাইভেটকার ও সিএনজি চালককে হেনস্থা করে প্রকাশ্যে। হিজড়াদের এই চাঁদাবাজির কারণে অতিষ্ঠ মহাসড়কে চলাচলরত সাধারণ মানুষ।
সরজমিনে আলাপ করে জানা যায়, প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল-বিশ্বরোড মোড়, শাহবাজপুর ও চান্দুরাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয় সংঘবদ্ধ কয়েকটি হিজড়া চক্র। এই হিজড়াদের মূল টার্গেট থাকে বরযাত্রীদের গাড়ি। তবে শুক্রবার এলেই বেড়ে যায় হিজড়াদের উৎপাত। বরযাত্রীদের গাড়ি দেখলেই থামার সংকেত দিয়ে চাঁদা দাবি করে তারা। প্রতিটি গাড়ি থেকেই ৫০০ থেকে শুরু করে হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে অপমান করে। তাই সম্মান বাঁচাতে বাধ্য হয়েই চাঁদা দেন সাধারণ মানুষ।
সরজমিনে সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, বরযাত্রীবাহী একটি গাড়ি আটকে হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে দুইজন হিজড়া। পরে দর কষাকষি শেষে ৫০০ টাকা দিয়ে ছাড়া পান বরসহ ও বরযাত্রীবাহী গাড়িটি। এছাড়া কয়েকটি যাত্রীবাহী বাস থেকেও হিজড়াদের চাঁদা আদায় করতে দেখা গেছে।
অথচ সরাইল-বিশ্বরোড মোড়েই খাটিহাতা হাইওয়ে পুলিশের থানা ভবন। কিন্তু পুলিশ চাঁদাবাজি বন্ধে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।