দাপুটে কয়েদী থেকে মালীর কাজে রাগীব আলী : লাইব্রেরির কাজ আব্দুল হাইর
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জুলাই ২০১৭, ১২:০৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক রাগীব আলী। বেশ কয়েকটি চা বাগানও আছে তার। বাগান করার শখ আগে থেকেই। তবে সময়ের ব্যবধানে তিনি এখন মালীর ভূমিকায়। আর আব্দুল হাই কারাগারের লাইব্রেরিতে কাজ করে যাচ্ছেন। কারাগারের ভেতরেও ঠিকঠাকভাবে অর্পিত দায়িত্বটি পালন করে যাচ্ছেন বাপ-বেটা দুজনই।
এদিকে গত সাপ্তাহ থেকে দুজনকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। দুটি মামলায় রাগীব আলী ২৭ বছর এবং তার ছেলে আবদুল হাই ২৯ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করছেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি এবং প্রতারণা করে তারাপুর চা বাগান দখলের মামলায় তারা সাজাপ্রাপ্ত।
কারাগার সূত্রে জানা যায়, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সাবেক সিনিয়র জেল সুপার ছগির মিয়ার দায়িত্বকালীন সময়ে রাগীব আলী ও আব্দুল হাই ছিলেন কারাগারের দাপুটে কয়েদী। কারাগারে থেকেও তাদের বিলাসী জীবনের কোন কমতি ছিলনা। তবে কারাগারের ভেতরে তারা কয়েদীর পোশাক পরেন না।
যদি কোন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কারা পরিদর্শনে যান তাহলে দুজনকেই পরানো হয় কয়েদীর পোশাক। কারাগারের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে ৯২৮৯/এ নম্বর কয়েদি রাগীব আলী ও ছেলে আবদুল হাইয়ের কয়েদি ৯২৮৮/এ। আইন অনুযায়ী, সশ্রম কারাদ-প্রাপ্ত আসামিকে কারা ভোগের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক পরিশ্রমও করতে হয়।
কারাগারের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান- রাগীব আলী ও তার ছেলে কারাগারে বন্দিবস্থায় যে সাজা ভোগ করছেন এটা অন্যায় কাজের ফল। প্রভাবশালী রাগীব আলীর বর্তমান অবস্থা সমাজকে শিক্ষা দেবে। যারা অপরাধ করছেন বা অন্যায়ভাবে প্রভাব খাটাচ্ছেন এ থেকে তাদের শিক্ষা নেয়া উচিত।
জানা যায়, কারা অভ্যন্তরে রাগীব আলী বাগানে কাজ করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় রাগীব আলীর জন্য এ কাজ নির্ধারণ করে দিয়েছেন কারা কর্তৃপক্ষ। তার সঙ্গে আছেন ছেলে আবদুল হাইও। তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কারাগারের লাইব্রেরির বই বিতরণ ও গ্রহণের। অনেকটা লাইব্রেরিয়ানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। রাগীব আলী যেহেতু ৮৫ বছরের বৃদ্ধ, তাই তার ইচ্ছা অনুযায়ী বাগানের মালীর কাজ দেয়া হয়েছে। তিনি নিয়মিত কাজ করেন। বাগান পরিচর্যা করেন। বাগানে পানি দেন।
আগাছা পরিষ্কার করেন। এদিকে বিভিন্ন সময় জামায়াত-শিবিরসহ মৌলবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন রাগীব আলী। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু হলে হঠাৎ ‘প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক’ বনে যান তিনি। সে সময় তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতারাও সংবর্ধনা দেন রাগীব আলীকে। এ সময় নিজের মালিকানাধীন পত্রিকাসহ ‘প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক’ হিসেবে পরিচিত দেয়া শুরু করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে থেকে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে।
কারাগারের কয়েকজন কারারক্ষী জানান- সাবেক জেলার ছগির মিয়ার দায়িত্বকালীন সময়ে রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাইয়ের বিলাসী জীবন ছিল কারাগারে। কারাগারে নয় যেন পরিবারেই থাকছেন তারা এমন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। যারা সম্পূর্ণ নিয়ম বর্হিভূত। তবে রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাইকে দিয়ে তেমন কোনো কাজ করানো যায় না। তিনি কোনো কাজ ঠিকমতো করতেও পারেন না। তাই তাকে লাইব্রেরির বই দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বন্দিদের বই দেন আবার তা ফেরত নেন।