ছাত্রলীগ কর্মী লিটু কার গুলিতে নিহত?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুলাই ২০১৭, ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পর গুলিতে নিহত হন ছাত্রলীগ কর্মী খালেদ আহমেদ লিটু। সোমবার দুপুরে কলেজের একটি শ্রেণিকক্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান তিনি।
ছাত্রলীগ কর্মী লিটু কার গুলিতে নিহত হয়েছেন এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিজের বন্দুকের গুলিতেই লিটু নিহত হয়েছেন এমনটি দাবি করেছেন ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতারা।
আর পুলিশের ধারণা, শ্রেণিকক্ষে অবস্থান করা নিজ গ্রুপের কোনো কর্মীর সঙ্গে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলিটি করা হয়েছে। খুব কাছ থেকে গুলি করায় লিটুর মাথার পেছনের খোল ফেটে মগজ বেরিয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ জানায়, বেলা ১২টার দিকে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে গুলির শব্দ শুনে ক্যাম্পাসে থাকা পুলিশ সদস্যরা ওই কক্ষ থেকে লিটুর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেন। গুলির ঘটনার আগে ওই কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা পাভেল গ্রুপের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী অবস্থান করছিলেন বলে জানা গেছে। লিটু নিজেও জেলা ছাত্রলীগের আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক পাভেল গ্রুপের কর্মী।
বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মোশাররফ হোসেন বলেন, কক্ষের ভেতরে এক জোড়া জুতা ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি বা খোসা কিছুই কক্ষে পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা— নিজ পক্ষের কারো হাতেই লিটু খুন হয়েছেন। ঘটনার আলামত সেরকমই আভাস দিচ্ছে। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের ৩/৪ জন নেতাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ঘটনাটি ছাত্রলীগের গ্রুপিং সংঘর্ষ থেকে ঘটেনি। কলেজের প্রধান ফটকে পুলিশের অবস্থান ছিল। তারা গুলির শব্দ শুনে কক্ষের ভেতর লাশ পড়ে থাকতে দেখে।
তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনা তদন্ত করছি। এর সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে। তিনি জানান, পাভেল গ্রুপের এমদাদ, কামরান ও ফাহাদ নামে তিনজনকে থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সোমবার সকালে বিয়ানীবাজার কলেজে পাভেল গ্রুপ ও পল্লব গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।
লিটু নিহত হওয়ার ব্যাপারে উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আবুল কাশেম পল্লব বলেন, ছাত্রলীগের জুনিয়র কিছু কর্মীর মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সবাইকে বের করে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পরে নিজের বন্দুকের গুলিতেই লিটু গুলিবিদ্ধ হন।
সোমবার সকালে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের পল্লব গ্রুপের এক কর্মীর সঙ্গে পাভেল গ্রুপের এক কর্মীর হাতাহাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা দেখা দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা পর হঠাৎ গুলি শব্দে কেঁপে ওঠে কলেজ ক্যাম্পাস। ওই সময় ক্যাম্পাসে থাকা পুলিশ সদস্যরা কলেজের একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে লিটুর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে।
বিয়ানীবাজার কলেজের অধ্যক্ষ দ্বরকেশ চন্দ্র নাথ জানিয়েছেন, লিটু এই কলেজের ছাত্র নয়।
পৌর শহরের নয়াগ্রাম রোডে তার একটি মোবাইল দোকান রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে পরিবারের একমাত্র ছেলেকে বিয়ানীবাজার পৌরসভার পণ্ডিতপাড়া এলাকায় লিটুর বাড়িতে এখন শোকের মাতম চলছে। তার বাবা ফয়জুর রহমান অসংলগ্ন কথা বলছেন। লিটুর একমাত্র বোন রেশমা মাকে জড়িয়ে বিলাপ করছেন; মা- মেয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। আত্মীয়-স্বজনরা ছুটে এসে তাদের সান্তনা দিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে। পরিবারের একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ লিটুর পরিবার।
লিটুর বাবা ফয়জুর রহমান বলেন, ছেলে কাজ করতে পারবে না বলে ইংল্যান্ড পাঠায়নি। আমার কোনো অভাব নেই। তিনি ছেলে চেয়েছিল পালসার মোটরসাইকেল কিনবে। রোববার উত্তরা মোটরসে গিয়ে মোটরসাইকেল দেখে এসেছি। সোমবার বিকেলে মোটরসাইকেলটি নিয়ে আসার কথা বলেই তিনি জ্ঞান হারান।