সিলেটেই ফাঁসি কার্যকর হতে পারে জঙ্গি রিপনের
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ মার্চ ২০১৭, ১২:১২ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী হত্যা চেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারেই কার্যকর হতে পারে। কারা সংশ্লিস্ট একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
রিপন বর্তমানে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। জঙ্গি মুফতি হান্নানের এই ঘনিষ্ট সহচরকে কারাগারে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়েছে। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত কারাগারে রিপনের ফাঁসির আদেশের কোনও অনুলিপি এসে পৌঁছেনি।
সোমবার নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের শীর্ষনেতা মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গির ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে করা রিভিউর আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। ফলে এবার অপেক্ষা কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার। রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষা না দিলে ফাঁসিতেই ঝুলতে হবে এই তিন জঙ্গিকে।
এদের মধ্যে মুফতি আব্দুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল বিপুল রয়েছেন গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে এবং রিপনকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ছগির মিয়া মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘জঙ্গি হান্নানের অন্যতম সহেযোগী দেলোয়ার হোসেন রিপনকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য একটি সেলে আটকে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কারাগারে তার ফাঁসির আদেশের কোনও অনুলিপি আসেনি। তবে আসার পর বিস্তারিত জানা যাবে। আশা করছি বুধবার (২২ মার্চ) আমাদের কাছে আদেশের কাগজপত্র এসে পৌঁছাবে।’
তবে সিলেট কারাগারে রিপনের মৃত্যুদন্ড কার্যকরের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা পাননি বলে জানান তিনি।
২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারতে আসেন সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী। জুমার নামাজ শেষে মাজার জিয়ারত করে বের হওয়ার মুহূর্তে দরগাহের প্রধান ফটকের কাছে পৌঁছালে তাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়া হয়। হামলায় এক পুলিশ সদস্যসহ ঘটনাস্থলে তিনজন নিহত হন। আনোয়ার চৌধুরী, সিলেটের তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল হোসেন, জেলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন সভাপতি প্রয়াত আবদুল হাই খান, স্থানীয় সাংবাদিকসহ ৭০ জন আহত হন।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ঘটনার রাতেই সিলেট কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) প্রদীপ কুমার দাস বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেন। তদন্তের জন্য তৎকালীন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (পুলিশ পরিদর্শক) এস এ নেওয়াজিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
২০০৪ সালের ৩০ মে পর্যন্ত ঘটনার নয়দিনে তদন্তকালে নয়জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর হত্যা মামলার রায় দেন সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারক শামীম মো. আফজাল। রায়ে হুজির শীর্ষ জঙ্গি মুফতি হান্নান, শরিফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল, দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে ফাঁসি, দুই জঙ্গি মুফতি মইনুদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল ও মুফতি হান্নানের ভাই মুহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
গোলাপগঞ্জে কোটালিপাড়ায় বোমা হামলার ঘটনায় নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ-হুজির শীর্ষ জঙ্গি মুফতি হান্নান গ্রেফতার হলে তার দেওয়া স্বীকারোক্তি থেকে আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার তথ্য উদঘাটন হয়। ২০০৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয় হুজির সিলেট অঞ্চলের সংগঠক শরিফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপন নামে দুই জঙ্গিকে। আদালতে এ দুজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে গ্রেনেড হামলার দায় স্বীকার করে।
২০০৭ সালের ২৯ জুলাই তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের তৎকালীন এএসপি মুন্সী আতিক আদালতে হুজির জঙ্গিদের দায়ী করে আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। আদালতে মামলার বিচার চলাকালীন সময়ে গত ১১ মার্চ সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) ও সর্বশেষ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জুবায়ের আহমদ আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে অভিযুক্ত চার আসামির সঙ্গে জঙ্গি মইনুদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে অভিযুক্ত করা হয়।
আদালতে ওই সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল হলে পরে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পুনরায় নেওয়া হয়। মোট ৫৮ জনের মধ্যে ৫৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর হত্যা মামলার রায় দেন সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারক শামীম মো. আফজাল। রায়ে হুজির শীর্ষ জঙ্গি মুফতি হান্নান, শরিফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল, দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে ফাঁসি, দুই জঙ্গি মুফতি মইনুদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল ও মুফতি হান্নানের ভাই মুহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৪ সদস্যের আপিল বেঞ্চ। রায়ে এ বিষয়ে আসামিদের আবেদন খারিজ ও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন সর্বোচ্চ আদালত। এরপর ১৯ মার্চ রবিবার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ মুফতি হান্নানসহ তিনজনের আসামিদের রিভিউ খারিজের আদেশ দেন।