বৃষ্টির পরশে মাথা তুলেছে দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি, আনন্দিত শ্রমিকরা
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মার্চ ২০১৭, ১০:১৫ অপরাহ্ণ
তোফায়েল আহমেদ পাপ্পু, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে:
চায়ের জন্য বিখ্যাত মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল। পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গল চায়ের রাজধানী হিসেবে সারাদেশে সমাদ্রিত। আর সারাদেশের চা বাগানগুলোর মত শ্রীমঙ্গলের চা বাগানগুলোতে এখন ফুটে উঠেছে সবুজের হাসি।
দেশের সবচেয়ে বেশি চা বাগান রয়েছে শ্রীমঙ্গলে। ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৩৮টি চা বাগান রয়েছে। রিমঝিম বৃষ্টির পরশে সদ্য অঙ্কুরিত সবুজ পাতায় ছেয়ে গেছে শ্রীমঙ্গলসহ দেশের সবকটি বাগান। আর সেই বাগানে মাথা তুলেছে সতেজ আর স্নিগ্ধ দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি। কিছুদিন আগে এই চা গাছের মাথা ছাঁটাই (গ্রুনিং) করা হয়েছিল। রুক্ষভাব দেখা গিয়েছিল চা বাগানে। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টির দখলে পড়ে স্বস্তি ফিরে পায় চা গাছগুলো। বৃষ্টির ফোটায় ফোটায় উর্বর হয় প্রকৃতি। তারপর দিগন্ত বিস্তৃত উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে হাসতে থাকে দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির দল।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র অবজারভার মো. হারুনুর রশীদ বলেন, ৬ মার্চ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলে ৭৭ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের পথ ধরে এগোলোই এখন চোখে পড়ে ঘনসবুজের ছড়াছড়ি। পাহাড়ি টিলার ধূসর মাটির বুক থেকে সেই সবুজেরা যেন আজ সদলবলে প্রস্ফুটিত। সম্প্রতি ফুলছড়া চা বাগানে গিয়ে দেখা গেলো সেই কুঁড়িদের গায়ে জমেছে শিশিরকণা। শিশিরের জলজ পরশে ঘনসবুজ পাতাগুলো গভীর সৌন্দর্যে রাঙা হয়ে আছে। সকালের সূর্যালোক তার কিরণটুকু নিয়ে এসে ভাগ বসিয়েছে তাতে।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রতি বছর চা গাছগুলোর মাথা নির্দিষ্ট মাপ অনুসারে ছেঁটে ফেলা হয়। তারপর চলে অপেক্ষার পালা। চা শ্রমিক, সর্দার, বাবু এবং ম্যানেজার এরা সবাই গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকেন, চা বাগানে কখন কুঁড়িরা চোখ মেলে তাকাবে।
জানা যায় চা বাগানের যে চা গাছের কুঁড়িগুলো অন্যগুলোর থেকে বেশি বড় হয়ে গেছে সেগুলোকে ইতোমধ্যে তোলা হয়ে গেছে । ইস্পাহানি কোম্পানির চা বাগান জেরিন টি এস্টেট এর ম্যানেজার সেলিম রেজা বলেন, নতুন কুঁড়ির জন্য আমরা আকাক্সক্ষায় থাকি। আমরা যারা চা বাগানে কাজ করি তারা এমন আশা নিয়ে অপেক্ষায় থাকি যে কখন কুঁড়ি গজাবে, তখন গাছ সবুজ হবে।
বসন্ত এলে চারপাশের সবুজ প্রকৃতি দেখে হৃদয়ে যেভাবে দারুণ অনুভূতি হয়, ঠিক তেমনি বৃষ্টির পর চা গাছে নতুন কুঁড়িতে ভরে উঠতে দেখলে চা শ্রমিকদের হৃদয়ও গভীর আনন্দিত হয়ে উঠে। এই নতুন কুঁড়িই বাচিয়ে রাখে চা শিল্প ও চা শ্রমিককে।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) সূত্র জানায়, আগাম বৃষ্টিপাত চায়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী। চা-শিল্পের ১৬২ বছরের ইতিহাসে গত চা উৎপাদন মৌসুমে দেশে সর্বোচ্চ ৮৫.০৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
সবুজে সবুজে চা বাগান এখন জেগে উঠেছে। যা বৃষ্টি ও হৃদয়কে দারুণভাবে মুগ্ধ করে। কয়েকদিন আগের বৃষ্টি পেয়ে এখন ওরা কুঁড়ি ছাড়তে শুরু করেছে। এতে আনন্দিত চা শ্রমিক ও বাগান মালিকরা।