ইলিয়াস নিখোঁজের ৫৯ মাস
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মার্চ ২০১৭, ১২:১৫ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বৃহত্তর সিলেটের প্রখ্যাত রাজনীতিক আবদুস সামাদ আজাদ, সাইফুর রহমান, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, এস এম কিবরিয়াদের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবেই দেখা হচ্ছিল ইলিয়াস আলীকে। তিনিও চলছিলেন সে পথে দুর্বার গতিতে। বৃহত্তর সিলেটের গণ্ডি পেরিয়ে ক্রমেই জাতীয় রাজনীতিতে এক জনপ্রিয় মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু সব থমকে যায় ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল। সেদিন মধ্যরাতে ইলিয়াস আলী ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ ‘নিখোঁজ’ হন। নিখোঁজের ৫৯ মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ। কিন্তু আজও উদঘাটন হয়নি ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ রহস্য’। ফিরবেন নাকি ফিরবেন না- এ নিয়ে কাটেনি অনিশ্চয়তাও। তিনি আদৌ বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন তা কেউ বলতে পারছেন না। তবুও তাকে সুস্থ ও জীবিত অবস্থায় ফিরে পেতে এখনো আশাবাদী তার পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীরা।
গাড়ির চালকসহ তার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা সে সময় দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি করে। পরে ইলিয়াস আলীর খোঁজে র্যাব বেশ কয়েকটি নিষ্ফল অভিযান চালায়।
তার সন্ধানের দাবিতে সিলেটসহ সারাদেশে দফায় দফায় হরতালসহ নানা কর্মসূচি পালিত হলেও আজও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। দিনে দিনে ইলিয়াস আলীর সন্ধানের দাবিতে আন্দোলনও এখন ঝিমিয়ে পড়েছে।।
ইলিয়াসের সন্ধান চেয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তার স্ত্রী ও সন্তানদের সান্তনা দিয়ে ইলিয়াসকে উদ্ধারে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
ইলিয়াস ইস্যুতে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে চিঠি দেয় বিএনপি। সারাবিশ্বে আন্দোলন চালিয়ে যায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
পিতার সন্ধানে সহায়তা চেয়ে বাংলাদেশ সফররত তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে চিঠি দিয়েছিলো ইলিয়াসের ছোট মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল। এসময় বাংলাদেশ সরকারকে স্বাধীন তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া যুক্তরাজ্য সরকার, ইইউ`র ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধি, দেশি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও ইলিয়াসকে উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিলো।
এদিকে ইলিয়াস নিখোঁজের ঘটনায় বনানী থানায় বেশ কয়েকবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেও পুলিশ এখনো কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি।
এতোদিনেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো সূরাহা করতে না পারায় এ তদন্ত নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে তারা ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারে সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
নিখোঁজের ৫৯ মাস পার হলেও সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার কোনো সন্ধান না দেওয়ায় পরিবারসহ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। তার সন্ধানের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন থাকলেও এখন তা নেই বললেই চলে। সিলেটের স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা দুই বছর ধরে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে সীমাবদ্ধ রেখেছেন ইলিয়াস আলীর সন্ধান কামনার কর্মসূচি। ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলাকা বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ বিএনপি আর আগের অবস্থানে নেই। নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর সঙ্গেও যেনো হারিয়ে গেছে এসব এলাকার বিএনপির অবস্থান। এক সময় রাজপথে জোরালো অবস্থান ছিল বিএনপির।
বিএনপির জোরালো অবস্থানের কাছে অন্যদলগুলো যেনো অসহায় ছিল। এখন বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথে খেই হারিয়ে ফেলেছে দেশের অন্যতম এই রাজনৈতিক সংগঠনটি। আর এসবের মূলে রয়েছেন নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী। বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর ও উপজেলা বিএনপিতে দিন দিন বেড়েছে মতপার্থক্য, রেষারেষি।
নিখোঁজের পর থেকেই আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে গড়ে তুলা হয় ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ ও ইলিয়াস মুক্তি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। সিলেটে ইলিয়াসের সন্ধানের দাবিতে তারা প্রায়ই মিছিল-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসলেও দুবছর থেকে সংগ্রাম পরিষদ মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করছে।
এদিকে ইলিয়াস আলীর সন্ধান কামনায় আজ শুক্রবার (১৭মার্চ) বাদ আছর হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ, যুব ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।