ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাচন : ইলিয়াসপত্নী লুনার সফল মিশন
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মার্চ ২০১৭, ৮:১৬ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
আওয়ামী লীগের দুর্গ খ্যাত সিলেটের ওসমানীনগরে এবার দখলে নিয়েছে বিএনপি। গত ৬ মার্চে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনে তিনটি পদেই জয়লাভের মাধ্যমে এ এলাকার আওয়ামী লীগের ঘাঁটি দখল করে নেয় বিএনপি। এই নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবিতে নিখোঁজ ইলিয়াসপত্নী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদী লুনার কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের দুই প্রভাবশালী চৌধুরী সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। দলীয় কোন্দল, দলের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনসাধারণকে একাট্টা করতে সমর্থ হন লুনা। কোন্দলমুক্ত বিএনপি ও একক প্রার্থী থাকায় ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাওয়ার রাজনীতিতে নবাগত ইলিয়াসপত্নী লুনার মিশন সফল হয়।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আতাউর রহমান ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর অনুসারী। অপরদিকে দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক আখতারুজ্জামান চৌধুরী জগলু ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর অনুসারী। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন শফিক চৌধুরী বলয়ে। উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক না পেয়ে জগলু চৌধুরী বিদ্রোহী প্রার্থী হন। বেঁকে বসা জগলু চৌধুরীকে সমর্থন দিয়ে কাছে টানেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষের নেতাকর্মীরা জগলু চৌধুরীর ও শফিকুর রহমান পক্ষের নেতাকর্মীরা আতাউর রহমানের হয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়াই করেন। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই দুই চৌধুরীর সমর্থকরা বিভক্ত হয়ে নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নেমেছিলেন মাঠে। ফলে সহজে জয় তুলে নেন একক প্রার্থী নিয়ে সুবিধায় থাকা ইলিয়াসপত্নী লুনার পক্ষের নেতাকর্মীরা।
দুই চৌধুরীর ও তাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব হামলা-মামলায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন উপজেলাবাসী। বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করে ওসমানীনগরে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি দখলে নিতে এ সুযোগকে কাজে লাগান ইলিয়াসপত্নী লুনা। নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহীরা একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বিষোদগারে ব্যস্ত থাকে। অন্যদিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা নীরবে ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদের মন জয় করে। অবশেষে ৬ মার্চের নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে তিন পদেই লুনার একক প্রার্থীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে। সিলেট-২ আসন (ওসমানীনগর-বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ) স্বাধীনতার পর থেকে আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে সিলেটসহ দেশের বিভন্ন এলাকার মানুষের কাছে পরিচিত ছিল। এ আসনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ছিলেন বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান। সদস্য ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানী, এনামুল হক চৌধুরী (বীর প্রতীক), বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আজিজুর রহমান ও সর্বশেষ ২০০৮ সালে বিএনপির এম ইলিয়াস আলীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হন বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। এ এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ঐতিহ্য থাকলেও কয়েক বছর ধরে সিলেট-২ আসনের তিন উপজেলায় শফিকুর রহমান ও আনোয়ারুজ্জামানের মধ্যে কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগের দুর্গ প্রায় তছনছ হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের এখানকার দুর্গটি এখন প্রায় সম্পূর্ণ বিএনরি দখলে চলে গেছে।
জাতীয় সংসদীয় আসন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকারের প্রায় সবকটি চেয়ার বিএনপি ও অন্য দলের দখলে চলে গেছে। সিলেট-২ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদস সদস্য, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের য়োরমান ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের তিন পদ, এ উপজেলার ৮টি ইউপির মধ্যে ৫টি ইউপির চেয়ারম্যান, বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, ২টি ইউপিতে চেয়ারম্যান, ওসমানীনগরের ৮টি ইউপির মধ্যে ৪টি ইউপিতে চেয়ারম্যান ও সর্ব শেষ গত ৬ মার্চের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির প্রার্থী জয় লাভ করে ওসমানীনগর সহ এ আসনে আ’লীগের ঘাটিকে দখল করে নেয় বিএনপি।
আ’লীগের সাধারণ নেতা কর্মি ও রাজনৈতি সচেনত ব্যক্তিরা মনে করছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ওসমানীনগর সহ এ আসনে যদি শফিক চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর মধ্যে দ্বন্দ ও অভ্যন্তরিন দলীয় কোন্দলের অবসান করা না হয় তাহলে আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি আ’লীগের হাত ছাড়া হয়ে বিএনপির দখলে চলে যেতে পারে।