গোলাপগঞ্জের গৃহবধূ জনির শেষকৃত্য বড়লেখায় সম্পন্ন, এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১:৪১ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটের গোলাপগঞ্জে শ্বশুর বাড়িতে স্বামী ও ভাসুরের স্ত্রী (জা’র) পরকীয়ার জেরে খুন হওয়া জনি রানী দাসের শেষকৃত্য মৌলভীবাজারের বড়লেখায় সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের গগড়া গ্রামে নিহত জনির বাবার বাড়িতে তার শেষকৃত্য শেষ হয়। এর আগে শুক্রবার দুপুরে জনির মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌছাঁলে পুরো এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনদের বিলাপে ভারী হয়ে ওঠে এলাকার আকাশ বাতাস। শেষবারের মতো এক নজর দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে শত শত লোক জনির বাড়িতে ভীড় জমায়। উপস্থিত সকলেই নির্মম এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদী থেকে গৃহবধূ জনি রানী দাসের (২২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জনি বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের গগড়া গ্রামের সজল কান্তি দাসের মেয়ে।
পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (২৮ জানুয়ারি) শ্বশুড় বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলার আলমপুর থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন গৃহবধূ জনি রানী দাস। হঠাৎ করে গৃহবধূর নিখোঁজের বিষয়টি তাঁর স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন অন্যের সাথে পালিয়েছে বলে এলাকায় প্রচার করতে থাকে। কিন্তু মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কথায় নিহতের পিতার সন্দেহ হয়।
নিখোঁজের তিনদিনের মাথায়ও সন্ধান না পাওয়ায় (৩০ জানুয়ারি) সোমবার জনির বাবা সজল কান্তি দাস গোলাপগঞ্জ থানায় নিহতের স্বামী রঙ্গেস দে ও রঙ্গেসের বড় ভাইয়ের স্ত্রী শিল্পী রানী দেবকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৯। থানায় দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ গৃহবধূ জনির স্বামী রঙ্গেস দে’র ও তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী শিল্পী রানী দেবকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে শিল্পী রানী দেব ও নিহতের স্বামী জনি রানীকে হত্যার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা হত্যার ঘটনা সংক্রান্তে পুলিশকে বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে। গ্রেপ্তারের পরদিন আদালতে নিহতের ভাসুরের স্ত্রী শিল্পী রানী দেব জনিকে হত্যার কথা স্বীকার করে কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।
এদিকে বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীতে অজ্ঞাত এক নারীর লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেন। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে কুশিয়ারা নদী থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ থানা পুলিশের এসআই সবুজ কুমার নাইডু অজ্ঞাত এই নারীর লাশ উদ্ধার করেন। এরই মধ্যে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় হাজির হন নিহত জনি রানী দাসের বাবা সজল কান্তি দাস। থানায় তিনি লাশটিকে তাঁর নিহত মেয়ে জনি রানীর হিসেবে সনাক্ত করেন।
নিহতের পিতা সজল কান্ত দাস বলেন, গোলাপগঞ্জে স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন তার মেয়ে জনি রাণী দাসকে হত্যা করে অজ্ঞাত স্থানে লাশ ফেলে দেয়। তারা আমার মেয়কে হত্যার পর লাশ গুম করে মিথ্যা নিখোঁজের নাটক সাজায়। আমার সন্দেহ হওয়ায় আমি আমার মেয়ের জামাই ও মেয়ের ভাসুরের স্ত্রী শিল্পি রানীকে আসামি করে গোলাপগঞ্জ থানায় মামলা করি।
নিহত জনির পরিবার ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১ বছর পূর্বে গোলাপগঞ্জ উপজেলার আলমপুর গ্রামের রমা কান্ত দে’র ছেলে রংগেস দে’র সাথে জনি রাণী দাসের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী রংগেস দাস তাঁর বড় ভাইয়ের স্ত্রী শিল্পি রানী দাসের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এর জের ধরে স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন জনিকে প্রায়ই নির্যাতন করতো। এনিয়ে অনেকবার সালিশ বৈঠকও হয়। সবশেষে পাষা-রা খুন করে অজ্ঞাত স্থানে জনির লাশ ফেলে রাখে।
এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মীর মোহাম্মদ আব্দুন নাসের বলেন, ‘গত সোমবার নিহতের পিতা থানায় মেয়ের স্বামী ও স্বামীর বড় ভাইয়ের স্ত্রীর নামে মামলা করেন। মামলার প্রেক্ষিত্রে পুলিশ নিহতের স্বামী ও স্বামীর বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জনিকে হত্যার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করে। পরদিন আদালতে নিহতের ভাসুরের স্ত্রী শিল্পি রানী দাস জনিকে হত্যার কথা স্বীকার করে কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে। দেবর-ভাবীর পরকীয়ার ঘটনা আড়াল করতেই কৌশলে গৃহবধূকে হত্যা করা হয়। গতকাল শুক্রবার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।