ব্রেক্সিট নিয়ে ‘টু’ শব্দ করলেই নেমে যায় পাউন্ডের দাম : বেকায়দায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ১১:৩০ অপরাহ্ণ
লন্ডন অফিসঃ ব্রেক্সিট নিয়ে এখনো আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। ব্রেক্সিটের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পার্লামেন্টে টু শব্দ করলেই মুহুর্তেই পাউন্ডের দাম নেমে যায়। গত সপ্তাহে পাউন্ডের উঠা নামায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। বেনিফিট কর্তন, চাকরী সমস্যা, বেতন বৃদ্ধি না হওয়া এরকম নানা সমস্যায় জর্জরিত প্রবাসীরা দিশেহারা হয়ে পরেছেন। একজনের আয় দিয়ে প্রবাসে ও দেশে পরিবার পরিজনদের বোঝা টানা মুশকিল হয়ে পরেছে। যারা দেশে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে অর্থ পাঠান। কিন্তু বৃটেনের আলাদা হয়ে যাওয়ায় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন। এতে দেশের রেমিটেন্সে রেমিটেন্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয়ে মারাত্মক প্রভাব পরেছে।
গত এক সপ্তাহে পাউন্ডের দাম ১০০ টাকা থেকে ৯৮ টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ একসপ্তাহ আগে কোনো প্রবাসী ১ হাজার পাউন্ড পাঠালে বাংলাদেশে ১ লাখ টাকা পাওয়া যেত। কিন্তু এখন তা কমে ৯৮ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। শতকরা হিসাবে যা ১২ শতাংশ।
এদিকে বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয়ে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ডের দরপতন। পাউন্ডের দাম কমে প্রতি পাউন্ডে মিলছে মাত্র ৯৮ টাকা (প্রায়)। ফলে প্রতি মাসে যেখানে যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা ৭০ থেকে ৮০ মিলিয়ন ডলার দেশে প্রেরণ করতেন সেখানে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রেমিটেন্স প্রেরণের পরিমাণ কমে হয়েছে মাসে ৪৫ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার। আবার পাউন্ডের দরপতনে ব্রিটেন থেকে ক্রয় আদেশ কমে যাওয়া এবং বিনিময় হারের কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়। লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এশিয়ার বাজারে গত শুক্রবার হঠাৎ করেই পাউন্ডের ‘ফ্ল্যাশ ক্র্যাশ’ বা বড় ধরনের দরপতন হয়। লেনদেনের একপর্যায়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের দাম ৬ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। এতে প্রতি পাউন্ডের দর কমে ১ দশমিক ১৮ ডলারে নেমে আসে, যা গত ৩১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। দিন শেষে এশিয়ার বাজারে পাউন্ডের দর কমার হার দাঁড়ায় ১ দশমিক ৩ শতাংশ। পরে লন্ডনের বাজারে ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের দর কমে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। সেখানে প্রতি পাউন্ড কেনাবেচা হয় ১ দশমিক ২৪ ডলারে।
গত জুন মাসে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত গণভোটে দেশটির মানুষ ইইউরোপিয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছাড়ার পক্ষে রায় দেয়ার পর থেকেই পাউন্ডের পতন শুরু। তখন পাউন্ডের লেনদেন বন্ধ করে পরিস্থিতি সামাল দেয় ব্রিটিশ সরকার। এরপর গণভোটের ওই রায় কার্যকর নাও হতে পারে এমন খবরে বাজার কিছুদিন শান্ত ছিল। কিন্তু গত রোববার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে গণভোটের রায় কার্যকর করার ঘোষণা দেন। ফলে পরদিন সোমবার থেকে আবারও পাউন্ডের দরপতন শুরু হয়। তবে শুক্রবারের ওই আকস্মিক পতন বাজারের স্বাভাবিক আচরণ না-কি কোনো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঘটেছে তা অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড।
জুন মাসে অনুষ্ঠিত গণভোটের আগে প্রতি পাউন্ডের বিনিময়ে ১২০ টাকা পাওয়া যেত। গণভোটে বেক্সিটের পক্ষে রায় যাওয়ার পর তা কমতে কমতে ১০৩ টাকায় নেমে আসে। আর শুক্রবারের দরপতনের পর প্রতি পাউন্ডে দেশে প্রেরণ করা যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৯৮ টাকা। মূলধারার অনলাইনভিত্তিক অর্থপ্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দিচ্ছে আরও কম। গতকাল ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন প্রতি পাউন্ডের বিনিময়ে দিচ্ছিলো মাত্র ৯৬ টাকা।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাণিজ্যবিষয়ক কন্সুলার শরিফা খান বলেন, পাউন্ডের দরপতনের ফলে নানাভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ। প্রথমত, পাউন্ডের বিনিময়ে কম টাকা পাওয়া যাচ্ছে বলে যুক্তরাজ্য থেকে প্রবাসীদের অর্থ প্রেরণ বেশ কমে গেছে। আবার যে পরিমাণ পাউন্ড প্রেরণ করা হচ্ছে বিনিময় হারের কারণে তাতেও মিলছে কম টাকা। তিনি জানান ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে রেমিটেন্স গেছে মোট ৮৬৩ দশমিক ২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর চলতি অর্থ বছরের প্রথম তিন মাসে অর্থ্যাৎ সেপ্টেম্বর সময়ে রেমিটেন্স গেছে মাত্র ১৬৮ দশমিক ৮৮ মিলয়ন ডলার। পাউন্ডের অব্যাহত দরপতনের কারণে সেপ্টেম্বরের পর রেমিটেন্স প্রবাহ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।