বালাগঞ্জ বিশ্বনাথসহ সিলেটে ‘বীর নিবাস’ পাচ্ছেন ৬২জন মুক্তিযোদ্ধা
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ডিসেম্বর ২০১৬, ১:২৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটের ভূমিহীন ৬২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। বাংলাদেশের পতাকার রঙ লাল আর সবুজের মিশেলে এসব বাড়ির নাম দেয়া হয়েছে ‘বীর নিবাস’। এরই মধ্যে ২৮টি বাড়ির নির্মাণকাজ শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এ বাড়িগুলো নির্মাণ করছে। এলজিইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী জুনে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। উল্লিখিত সময়ের মধ্যেই সব বাড়ির নির্মাণকাজ শেষ হবে।
তবে এসব বাড়ি নির্মাণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের বদলে অপেক্ষাকৃত সচ্ছলরা বাড়ি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নিজ এলাকার ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করে। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে এ তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল বলেন, ভূমিহীনদের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে উপজেলা কমান্ডগুলো আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করেনি। অনেক ক্ষেত্রেই ভূমিহীনদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছি।
জানা গেছে, এলজিইডি ২০১৩ সালে অসচ্ছল ও ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস প্রকল্প শুরু করে। এ প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে।
নির্মাণ শেষ হওয়া কয়েকটি বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, এসব বাড়িতে রয়েছে দুটি শয়নকক্ষ, একটি বসার কক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটি বারান্দা। সব মিলিয়ে ৫০০ বর্গফুট আয়তনের মধ্যে একেকটি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ঘরের বাইরের দিকে রান্নাঘরসংলগ্ন একটি পাকা উঠান, টিউবওয়েল, শৌচাগার, লাইভস্টোক-শেড এবং পোলট্রি শেডেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এলজিইডি, সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন কান্তি দাশ জানান, বীর নিবাস প্রকল্পের আওতায় সিলেট জেলায় ৭০টি বাড়ি নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হলেও এ পর্যন্ত অনুমোদন হয়েছে ৬২টির। এর মধ্যে সিলেট সদর ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় তিনটি করে মোট ছয়টি, বালাগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলায় দুটি করে মোট চারটি, দক্ষিণ সুরমায় একটি, কোম্পানীগঞ্জে নয়টি, জৈন্তাপুরে আটটি, গোয়াইনঘাটে সর্বোচ্চ ১১টি, কানাইঘাটে চারটি, জকিগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জে পাঁচটি করে মোট ১০টি এবং বিয়ানীবাজারে নয়টি বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে সিলেট সদর, বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ, দক্ষিণ সুরমা, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটে সবক’টি বীর নিবাসের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। বাকি উপজেলার নিবাসগুলোর কাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাড়িগুলোর নির্মাণকাজ প্রকল্পের মেয়াদের আগেই শেষ হবে বলে আশাবাদী তিনি।
স্বপন কান্তি পাল বলেন, প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ লাখ ২৫ হাজার ৫৬ টাকা। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০১৭ সালের জুনে।
তিনি বলেন, এটা ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার। আর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রতিটি বাড়ির নাম রাখা হয়েছে ‘বীর নিবাস’।
সরকারি খরচে নতুন বসতঘর পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের শিয়ালাহাওরের মুক্তিযোদ্ধা কাশেম আলী বলেন, শেষ বয়সে এ বাড়ি পেয়ে দেশবাসীর কাছে ঋণি হয়ে গেলাম। সরকারকে ধন্যবাদ ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এ উদ্যোগ নেয়ার জন্য।