আজ মৌলভীবাজার মুক্ত দিবস
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ৩:৫২ অপরাহ্ণ
তোফায়েল আহমেদ পাপ্পু, মৌলভীবাজার থেকে:
আজ ৮ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সনের এই দিনে দীর্ঘ সাড়ে সাত মাস হানাদার বাহিনীর কবলে থাকার পর তৎকালীন মৌলভীবাজার মহকুমা সদর সাড়াশী আক্রমনের মুখে হানাদার মুক্ত হয়। বিজয় আনন্দে সেদিন উড্ডীন হয় স্বাধীন বাংলার গর্বিত পতাকা।
ভারতের কৈলাশহর এবং ধর্মনগর সিমান্ত ঘেষা পাকবাহিনীর বি, ওপি ধ্বংশ করার জন্য যৌথবাহিনী নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে পর্যায়ক্রমে আক্রমন শুরু করেছিল। যুদ্ধের ছক অনুযায়ী ভারতীয় ৮১ মাউন্টেন ব্রিগেডের উপর দায়িত্ব বর্তেছিল-সমশেরনগর হয়ে মৌলভীবাজার অভিমুখে অগ্রাভিযান পরিচালন করা। সেই অভিযানের ধারাবাহিকতায় মূলত মৌলভীবাজার মুক্ত হয়।
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে থেকে তুমল যুদ্ধে তৎকালীন মহকোমার বিভিন্ন অঞ্চল শত্রুমুক্ত হতে থাকে। যথাক্রমে ৫ তারিখ বর্তমান কমলগঞ্জ উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়। ৬ তারিখ বড়লেখা, জুড়ি, কুলাউড়া ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা মুক্ত হয় এবং সর্বশেষ মৌলভীবাজার শহর পুরো ভাবে মুক্ত হয় ৭ডিসেম্বর রাতে।
৩ ডিসেম্বর রাতে সি,ইন,সি স্পেশাল গ্রুপের ৩৫০জন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আহাদ চৌধুরী (অধ্যক্ষ আহাদ চৌধুরী) এবং অধিনায়ক সৈয়দ মহসীন আলী (প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী)’র নেতৃত্বে মুন্সিবাজারে পাকবাহিনীর সাথে রাত ৯টা থেকে যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধ চলে ৪,৫, এবং ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তুমুল ভাবে। কিন্তু মুক্তিবাহিনী সফলতার মুখ দেখতে পারেন নি।
মৌলভীবাজারে ছিল পাকবাহিনীর ব্রিগেড হেড কোয়ার্টার যার ফলে অত্র অঞ্চল মুক্তিবাহিনী দখল নেয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। অবস্থা পর্যবেক্ষণে ভারতীয় পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার মেজর জেনারেল অরোরা যে কোন মুল্যে পরবর্তি ২৪ঘন্টার মধ্যে মৌলভীবাজার শহর দখলের নির্দেশ দেন। ফলে যৌথবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার লক্ষণ সিং আরো শানিত হয়ে উঠেন। ৭ ডিসেম্বর যৌথবাহিনী ব্যাপক হামলা চালালে ঐদিন দুপুর থেকেই হানাদার বাহিনী ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার (পিটিআই এবং মৌলভীবাজার কলেজ) থেকে পিছু হটতে শুরু করে। ৭ ডিসেম্বর রাত ১০টার মধ্যেই এ পিছু হটা সম্পন্ন হয়।
৮ ডিসেম্বর মনু নদীর শহরের বিপরীত পাড়ে কৌতুহলী জনতা ভীড় জমাতে থাকে। আজিজ বেগ হাত উচিয়ে হাঁকদেন-“মৌলভীবাজার শহর মুক্ত হয়ে গেছে”। আবেগাপ্লুত জনতা তখন নদী সাতরিয়ে এবং জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে শহরে এসে বিজয় মিছিল বের করে। এ সময় পশ্চিমবাজারস্থ ট্রাফিক পোষ্টে দাড়িয়ে আজিজ বেগ বক্তব্য রাখার পাশাপাশি স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।