জেলা পরিষদ নির্বাচন : ভোটারদের মন জয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ৬:০৭ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
জেলা পরিষদ নির্বাচনে সর্বাধিক ১৪ প্রার্থী ওসমানীনগরের। এর মধ্য একজনের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় প্রার্থী সংখ্যা এখন ১৩ (যদিও তার আপিলের সুযোগ আছে)। এছাড়া সব চেয়ারম্যান প্রার্থী ও মহিলা সদস্য (ওসমানীনগর বালাগঞ্জ বিশ্বনাথ) পদের প্রার্থীরা ওসমানীনগরের ১০৪ ভোটের জন্য দিনরাত মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন । সাধারন ভোটার নয় এলাকার জনপ্রতিনিধিদের ভোটেই তারা নির্বাচিত হবেন। সমাজ সচেতন ও ভোটের মাঠে পোড় খাওয়া এসব জনপ্রতিনিধিদের মন জয়ে নানা ভাবে প্রচেষ্টা করছেন প্রার্থীরা।
আগামী ২৮ তারিখ জেলা পরিষদ নির্বাচন। চেয়ারম্যান পদে জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডঃ লুৎফুর রহমান। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউদ্দিন আহমদ লালা, এনামুল হক সরদার ও মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম । এর মধ্য প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা অ্যাডঃ লুৎফুর রহমান ও এনামুল হক সরদার দুজনই ওসমানীনগরের হওয়ায় ভোটাররা রয়েছেন কিছুটা দ্বিধাদ্বন্ধে। বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়,অ্যাডঃ লুৎফুর রহমান প্রবীন এবং ক্লীন ইমেজের হওয়ায় ভোটাররা তার প্রতি দুর্বল রয়েছেন। নিজেদের মধ্য থাকা মতভেদকে আড়ালে রেখে জেলা ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও ইতিমধ্য মাঠে নেমেছেন তার জন্য। তবে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা এনামুল হক সরদারকে। অ্যাডঃ লুৎফুর রহমানের পথের কাটা এখন শুধুই এনামুল হক সরদার। অপর চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ভো্টারদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন বলে জানা যায়।
সদস্য প্রার্থী হিসেবে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হাই মোশাহিদ, আওয়ামী লীগ নেতা সাইয়্যিদ আহমদ বহলুল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পংকজ পুরকায়স্থ উপজেলা জাতীয় যুব সংহতির আহবায়ক আশিক মিয়া, দয়ামীর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নুর উদ্দিন নুনু, উপজেলা জাতীয় পার্টি নেতা এনামুল হক পীর(মনোনয়ন বাতিল) , ছাত্রলীগ নেতা শিব্বির আহমেদ, এমদাদুর রহমান ,নজরুল ইসলাম নিয়ামত ও খায়রুল আমিন সুমন ।
দয়ামীর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লেখক গবেষক আব্দুল হাই মোশাহিদ এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছে বিরামহীন প্রচারনা অব্যাহত রেখেছেন। দলীয়ভাবে ভোটারদের প্রভাবিত করায় এই বিশিষ্ট লেখক সাবেক জনপ্রতিনিধি কিছুটা উদ্বিগ্ন । অন্য প্রার্থীদের প্রতি রয়েছে শ্রদ্ধা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজনৈতিক কর্মী জানান, অন্য সবার থেকেই আব্দুল হাই মোশাহিদ কিছুটা আলাদা। নির্লোভ এই সাবেক জনপ্রতিনিধির সকল যোগ্যতাই রয়েছে এই ওয়ার্ড থেকে প্রতিনিধিত্ব করার। অপর প্রার্থী উসমানপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সাইয়্যিদ আহমেদ বহলুল ওসমানীনগর উপজেলা বাস্তবায়নসহ এলাকার নানা দাবী দাওয়া আদায়ে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেছেন । তিনি সবসময় অগ্রনী ভুমিকা পালন করে থাকেন এলাকার দাবী দাওয়া আদায়ে । জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছাত্রনেতা পঙ্কজ পুরকায়স্থ। সদস্য পদে শক্ত প্রতিপক্ষ। ইতিমধ্য এলাকার সর্বত্র চষে বেড়াচ্ছেন। আব্দুল হাই মোশাহিদ ও সাইয়্যিদ আহমেদ বহলুলের সাথে তিনিও রয়েছেন আলোচনায়। উপজেলা জাতীয় যুব সংহতির আহবায়ক আশিক মিয়া এলাকার প্রতি ইউনিয়নে ভোটারদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে চলেছেন। তার রয়েছে আরেকটি সুবিধা। দলীয় সংসদ সদস্য হওয়ায় জনপ্রতিনিধি ভোটারদের কাছে পৌছার তার রয়েছে সহজ সুবিধা। অন্য প্রার্থী নুর উদ্দিন নুনু, এনামুল হক পীর, শিব্বির আহমেদ, এমদাদুর রহমান, নজ্রুল ইসলাম নিয়ামত ও খায়রুল আমিন সুমন মাঠে রয়েছেন প্রচারনায়। তবে সদস্য পদে শেষ পর্যন্ত লড়াইটা যে চতুর্মূখী হবে তা নিশ্চিত।
মহিলা সদস্য পদে ৩ নং (৭,৮,৯) ওসমানীনগর বালাগঞ্জ বিশ্বনাথ থেকে প্রতিথযশা সাংবাদিক প্রয়াত মহিউদ্দিন শীরুর সহধর্মীনি হাসিনা বেগম চষে বেড়াচ্ছেন এলাকার সর্বত্র। ইতিমধ্যিই প্রেসক্লাবসহ সবার সাথে মতবিনিময়সহ জোর প্রচারণায় রয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের এই নেত্রী। অপর প্রার্থী তাজপুর ডিগ্রি কলেজের ভূমিদাতা ও প্রতিষ্টাতা বিশিষ্ট সমাজ সেবক মরহুম আজহার আলীর মেয়ে জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমেদের সহধর্মীনি তৃণমূল নারী উদ্যেক্তা সিলেট জেলা শাখার সভাপতি সুষমা সুলতানা রুহী ও রয়েছেন আলোচনায়। প্রথমে এলাকায় তার একক অবস্থান থাকলেও শেষ মুহুর্তে হাসিনা বেগমের মনোনয়ন দেওয়ায় হিসাবে কিছুটা উলোটপালট দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক ভাবে দুজনই একই মতাদর্শের হওয়ায় কর্মী ও ভোটাররা রয়েছেন দ্বিধাদ্বন্ধে। তবে তার পক্ষে একাধিক রাজনৈতিক নেতাকর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে প্রচারনা অব্যাহত রেখেছেন। তারা মনে করেন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হিসাবে তার সকল যোগ্যতাই রয়েছে। ্মহিলা সদস্য পদের আরেক প্রার্থী রহিমা বেগম রব্বানী। তাজপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমরান রব্বানীর সহধর্মীনি। বিএনপি দলীয় সমর্থক এই প্রার্থী এখন ভালোমতই রয়েছেন আলোচনায়। জানা যায়, ভোটের মাঠে অভিজ্ঞ তার স্বামী ইতিমধ্যিই এলাকার সর্বত্র চষে বেড়াচ্ছেন। দলীয় ভোট টানতে তিন উপজেলায় নেতাকর্মীদের উপর ভরসা রাখছেন তারা। বিশ্বনাথ রামপাশা ইউপির সাবেক সদস্য বিশ্বনাথ পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প বিআরডিবি পজিপের সাবেক চেয়ারম্যান গীতা রাণী দাশ ও তিন উপজেলায় প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজেকে নির্দলীয় প্রার্থী হিসাবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘোড়ছেন এই সাবেক ইউপি সদস্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ওসমানীনগরের এক চেয়ারম্যান সুরমানিউজ টুয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ভোটাধিকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করতে চাইনা। দলীয় বিবেচনায় নয় যারা যোগ্য তাদের বেচে নেওয়া আমাদের উচিৎ ।
উল্লেখ্য, আগামী ২৮ ডিসেম্বরে দেশের ৬১ টি জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রস্তুতি গুটিয়ে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ১৯৮৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় একবারই সরাসরি নির্বাচন হয়েছিল। আর কোন জেলায় নির্বাচন হয়নি। পাঁচ বছর মেয়াদী জেলা পরিষদগুলোতে বর্তমানে অনির্বাচিত প্রশাসক দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ৬১ জেলায় আওয়ামীলীগের জেলা পর্যায়ের নেতাদের নিয়োগ দেয় সরকার।