ভয়ঙ্কর মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে সিলেটের রেলপথ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ১২:২৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটে রেললাইনের উপর অবৈধভাবে নির্মিত লেভেল ক্রসিংগুলো পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। রেললাইনের উপর যত্রতত্র রাস্তা নির্মাণ ও চলাচলের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সিলেট রেলওয়ে পুলিশের হিসেব অনুযায়ী গত ৫ বছরে ছাতক থেকে কুলাউড়ার ভাটেরা পর্যন্ত রেললাইনে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬৭ জন। অবৈধভাবে তৈরি উন্মুক্ত লেভেল ক্রসিং বন্ধ, বৈধ ক্রসিংয়ে গেট নির্মাণ ও গেটম্যান নিয়োগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা না গেলে এ দুর্ঘটনা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট রেলওয়ে থানা সূত্র জানায়, সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের ছাতক পর্যন্ত ৫টি ও সিলেট থেকে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা পর্যন্ত ৯টি বৈধ রেলক্রসিং রয়েছে। এই ১৪টি ক্রসিংয়ের মধ্যেও গেটম্যান রয়েছে মাত্র ৬টিতে। বাকি বৈধ ক্রসিংগুলোও সবসময় থাকে উন্মুক্ত। এর বাইরে ছাতক-ভাটেরা লাইনে শতাধিক অবৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, আইন অনুযায়ী রেললাইনের উপর লেভেল ক্রসিং তৈরি করতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থাকে পূর্বানুমতি নিতে হবে রেলওয়ের। লেভেল ক্রসিংয়ের স্থানে রেললাইনের দুইপাশে ওই ব্যক্তি বা সংস্থা গেট নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া কমপক্ষে তিনজন প্রহরীর মজুরি, সিগন্যাল ব্যবস্থাপনার খরচও বহন করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। বৈধভাবে লেভেল ক্রসিং নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা ব্যয়বহুল হওয়ায় মানুষ অবৈধভাবেই নিজেদের মতো করে রেললাইনের উপর রাস্তা তৈরি করে নিচ্ছেন।
এ ছাড়া রেললাইনের পাশে বাসা-বাড়ি ও বাজার হাট গড়ে ওঠায় জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার অজুহাত দেখিয়ে লোকজন রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই এসব লেভেল ক্রসিং তৈরি করছেন বলে জানা গেছে। এতে লেভেল ক্রসিংগুলো দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠছে। একই সাথে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানী।
সিলেট রেলওয়ে পুলিশের হিসেব অনুযায়ী গত ৫ বছরে ছাতক-কুলাউড়া লাইনে ৬৭ জনের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে চলতি বছরে ১৩ জন, ২০১৫ সালে ৯ জন, ২০১৪ সালে ১৩ জন, ২০১৩ সালে ১০ জন ও ২০১২ সালে ২২ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
এদিকে, রেললাইনের উপর দুর্ঘটনারোধে সিলেটে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচারণামূলক কাজ শুরু করেছে রেলওয়ে পুলিশ। গত ১৩ নভেম্বর সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেট বিভাগের সবক’টি রেলওয়ে স্টেশন ও রেললাইনের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে প্রচারপত্র বিলি ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট রেলওয়ে থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পারাপার, হেডফোন কানে লাগিয়ে রেললাইন দিয়ে হাঁটাহাঁটি ও অবৈধ ক্রসিংয়ের কারণে দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে। দুর্ঘটনারোধে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চলছে। অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধ ও বৈধ ক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগ দেয়া না হলে দুর্ঘটনারোধ কোনভাবেই সম্ভব হবে না।