সিলেটে বিশুদ্ধ পানির নামে কী খাচ্ছি আমরা : অনুমোদন রয়েছে ৩টির, ৩৭টি অনুমোদনহীন
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ ডিসেম্বর ২০১৬, ৩:৩৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
পানির অপর নাম জীবন। এটি প্রচলিত কথা। তবে সব পানি-ই জীবন রক্ষাকারী নয়। কিছু পানি আবার মরণঘাতীও। অর্থাৎ এসব পানি প্রাণ রক্ষার বদলে প্রাণ কেড়ে নেয়। তাই চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের মতে- কেবল পানের যোগ্য ‘নিরাপদ পানির অপর নাম-ই জীবন’।
অনুমোদনহীন এসব প্রতিষ্ঠানের পানি পান ও ব্যবহারে সিলেট অঞ্চলে দেখা দিয়েছে নানা রোগ-ব্যাধি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি।
সূত্রে জানা গেছে- সিলেট বিভাগে মাত্র ৩টি বিশুদ্ধ খাবার পানি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র রয়েছে। সেগুলো হল- মিলাদ ড্রিংকিং ওয়াটার, শাফি ড্রিংকিং ওয়াটার ও পিয়াস। এর বাইরে সিলেট, মৌলভীবাজারে ও সুনামগঞ্জে যে ৩৭টি পানীয় জলের উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোর কোনটিরই অনুমোদন নেই।
সিলেটে অনুমোদনবিহীন পানি উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- সিলেট নগরীর টিভি গেইটস্থ পিয়াস, শাহী ঈদগাহস্থ আবে হায়াত, আম্বরখানাস্থ সুরমা, শাহজালাল উপশহরের তেররতনস্থ পিপাস, শহরতলী বালুচরে হামহাম, শাহজালাল উপশহরস্থ আবে জমজম, দক্ষিণ সুরমার কুচাইয়ে সিলেট ড্রিংকিং, নগরীর কাজিটুলাস্থ আলভী, লামাবাজারস্থ রিফ্রেশ, শাহজালাল উপশরস্থ তৃষ্ণা, দক্ষিণ সুরমার অর্কিড, শহরতলী টুকের বাজারস্থ মাম, নগরীর দরগা মহল্লাস্থ এবিএম, দক্ষিণ সুরমার সলিড, নগরীর শামীমাবাদের আল জালাল, মৌলভীবাজারের মাধবকু- ও হাঁস, সিলেট নগরীর দরগাহ মহল্লাস্থ বে-ওয়াটার, সিলেটের বিয়ানীবাজারের কুশিয়ারা, মৌলভীবাজারের মনু ড্রিংকিং, সুনামগঞ্জের ছাতকের বেস্ট গাটার, সিলেটের শাহজালাল উপশহরস্থ শাহজালাল, সুনামগঞ্জের ছাতকের শীতল, সিলেট শহরতলী টুকেরবাজারের আরএফ, হবিগঞ্জের স্বদেশ ড্রিংকিং, মৌলভীবাজারে দেশ, শাহ মোস্তফা গ্রুপ, আল রহিম, তালুকদার ড্রিংকিং ও মাহফুজ ড্রিংকিং, দক্ষিণ সুরমার বন্ধু ড্রিংকিং, জকিগঞ্জের মরিয়ম ড্রিংকিং ও সেতু ড্রিংকিং, সিলেট ও সিলেটের বাইরে থাকা অ্যাডভান্সড ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, গোল্ডেন ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, হানিফ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, স্ন্যাক্স অ্যান্ড স্মেল, ফিউচার সিকিউরিটিজ ম্যানেজমেন্ট।
এদিকে, বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন- বিএসটিআই’র অনুমোদন নিয়েই প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন ও বিপণন শুরু করে। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে বিশুদ্ধ পানীয় জলের উৎপাদনে আইএসও গাইড-৬৫ অনুসরণের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসটিআই। এ গাইড অনুযায়ী কারখানার মান উন্নীত না-করায় ওই সময় থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাড়পত্র নবায়ন বন্ধ করে দেয় বিএসটিআই।
তারা বলেন- “আইএসও মানে উন্নীত করা অনেক ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ। ফলে বেশিরভাগ কারখানাকেই তাৎক্ষণিক এ মানে উন্নীত করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই অনুমোদনহীন হয়ে পড়ে।”
তারা আরো জানান- “সিলেটের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানটিই অনুমোদনের জন্য এরই মধ্যে আবেদন করেছে। তবে এ প্রক্রিয়া অনেক সময়সাপেক্ষ হওয়ায় ছাড়পত্র পেতে দেরি হচ্ছে। তারা অনুমোদনবিহীন হওয়ার পেছনে বিএসটিআই অফিসের দীর্ঘসূত্রিতাকে দায়ী করছেন।”
বিএসটিআই সূত্রমতে- আইএসও গাইড-৬৫ অনুযায়ী প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে পানি ভর্তি ও জার পরিষ্কারের জন্য স্বয়ংক্রিয় মেশিন থাকতে হবে। সার্বক্ষণিক কেমিস্ট অথবা মাইক্রোবায়োলজিস্ট নিয়োগ করতে হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কারখানায় পরীক্ষাগার স্থাপন ও প্রতিদিনই কারখানার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
এছাড়া বিএসটিআই অফিসে হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর প্রত্যয়নপত্র, কারখানার লে-আউট, প্রসেস ফ্লো-চার্ট, কারখানায় স্থাপিত সব ধরনের যন্ত্রপাতির তালিকা, কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত, প্রিমিসেস সনদ, বিডিএস ও মোড়কজাতকরণ বিধিমালা অনুযায়ী মুদ্রিত লেবেল জমা দিতে হবে। না হলে কোনো প্রতিষ্ঠানেরই ছাড়পত্র নবায়ন বা নতুন করে ছাড়পত্র প্রদান করা হবে না। এসব শর্ত মেনে সিলেটে এখন পর্যন্ত শুধু মিলাদ ড্রিংকিং ওয়াটার, সাফি ড্রিংকিং ওয়াটার ও পিয়াস ছাড়পত্র নবায়ন করে নিতে পেরেছে। বাকি সব প্রতিষ্ঠান অনুমোদনহীন পানির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিএসটিআই সিলেটের উপ-পরিচালক রেজাউল হক সিলেটে অনুমোদনবিহীন পানি বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান থাকার কথা স্বীকার করে জানান- “প্রতিষ্ঠানগুলোকে একে একে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।”
তিনি জানান- “যথাযথ শর্ত পূরণ করে গতকাল বুধবার পর্যন্ত সিলেট বিভাগে ৭টি প্রতিষ্ঠান ছাড়পত্র পেয়েছে। আরো ৭টি প্রতিষ্ঠান ছাড়পত্র পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এর বাইরে যারা বিশুদ্ধ পানি বিক্রয় ও বিতরণ করছে তা অবৈধ। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায়ই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়ে থাকে। লোকবলের অভাব থাকায় এগুলো বন্ধ করতে সময় লাগছে।”