সিলেটে রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে এবার আমনের ফলন
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ ডিসেম্বর ২০১৬, ১০:১৪ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটে এবার রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে আমনের ফলন। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার ১২ শতাংশ বেশী রোপন হয়েছে আমন। কৃষি অধিদফতর সুত্রে জানা গেছে, সিলেটে এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৩ লক্ষ ৩৪ হাজার ৪শ ৯ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার ৮শ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪১ হাজার ৩শ ৯১ হেক্টর বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার বৃষ্টিপাত ছিলো আমনবান্ধব, আবহাওয়া ছিলো অনুকুলে। তাই এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হয়েছে।
সিলেট জেলাঃ এই জেলায় আমনের মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ১ লক্ষ ২৮ হাজার ২৬ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৭শ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ শতাংশ বেশী। আমন আবাদ হয়েছিলো ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৩শ ২৫ হেক্টর।
মৌলভীবাজার: জেলায় এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৯৬ হাজার ৪শ ৭৩ হেক্টর। এর মাঝে আবাদ হয়েছে ৯৭ হাজার ৩শ ৬০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ শতাংশ বেশী। গত বছর একই সময় আবাদ হয় ৯৭ হাজার ৩শ ৪ হেক্টর।
হবিগঞ্জ: এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬৪ হাজার ৫শ ৫৩ হেক্টর। এর মাঝে আবাদ হয়েছে ৬৯ হাজার ১শ ৭০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ শতাংশ বেশী। গত বছর আবাদ হয় ৬৪ হাজার ৫শ ৮০ হেক্টর।
সুনামগঞ্জ: জেলায় এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪৫ হাজার ৩শ ৫৭ হেক্টর। এর মাঝে আবাদ হয়েছে ৬৯ হাজার ৫শ ৭০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৩ শতাংশ বেশী। গত বছর আবাদ হয় ৫৬ হাজার ৬শ ৮০ হেক্টর।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পরিচালক কৃষ্ণ চন্দ্র হোড় বলেন, এ বছর টার্গেটের ১২ শতাংশ বেশী আমন আবাদ হয়েছে। কারণ এবার বৃষ্টিপাত ছিলো আমনবান্ধব, আবহাওয়া ছিলো অনুকুলে। এছাড়া কৃষি অধিদফতরের বিভিন্নমুখী কার্যক্রম লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হয়েছে। তিনি বলেন আমরা কৃষকদের বিভিন্ন রকম সহায়তা দিচ্ছি। আমরা তাদের টেকনোলজি ও প্রযুক্তি সহায়তা দিচ্ছি। প্রশিক্ষণ প্রদান করছি। কৃষকদের মাঝে সারেরও সুষম বন্টন করছি আমরা। ফলে দিন দিন আমনের লক্ষ্যমাত্রা পুরন হচ্ছে। তিনি জানান, সিলেটে ভালো ফসল হলে ৯ লক্ষ মেট্রিকটন খাদ্য উদ্বৃত্ব থাকে। আর খারাপ হলে ৮ লক্ষ মেট্রিকটন উদ্বৃত থাকে। জেলা কৃষি অফিসের উপ পরিচালন মোঃ আবুল কাশেম বলেন, পার্শ্ববর্তী কুমিল্লাতেও পতিত জমির পরিমাণ রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এর জন্য চারটি প্রতিবন্ধকতাকেই তিনি মূলত দায়ী করছেন। এগুলো হলো সেচের অভাব, কৃষকদের আগ্রহ কম, বর্গাচাষী বেশী, মালিকদের কৃষিক্ষেত্রে অনাগ্রহ। তিনি বলেন সিলেটে কৃষির আওতা বাড়াতে আমরা কাজ করছি। বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে প্রতিটি জেলায় বিভিন্নমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে।
কৃষি অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, সিলেটে মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ১৪ লক্ষ ২৪ হাজার ৭শ ২০। এর মধ্যে কৃষি পরিবারের সংখ্যা ১১ লক্ষ ১৯ হাজার ৩শ ৮৮। যা দশ বছর আগেও ছিলো প্রায় দ্বি-গুন। কৃষি পরিবারের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ১২ শতাংশ। এর মধ্যে ভূমিহীন কৃষি পরিবারের সংখ্যা ২ লক্ষ ২৮ হাজার ৩শ ৭৮, প্রান্তিক কৃষি পরিবারের সংখ্যা ৪ লক্ষ ৯৬ হাজার ৫শ ৯৫, ক্ষুদ্র কৃষি পরিবার ২ লক্ষ ৮ হাজার ৮শ ৪১, মাঝারি কৃষি পরিবার ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৮শ ৭৮ এবং বড় কৃষি পরিবারের সংখ্যা ৪০ হাজার ৬শ ৯৬।
সিলেট আঞ্চলিক কৃষি অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষ্ণ চন্দ্র হোড় এ ব্যাপারে বলেন, এটা সত্য যে দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে সিলেটে পতিত জমির পরিমান বেশী। এর অনেক কারণও রয়েছে। প্রথম কারণ হচ্ছে সিলেটে সেচের পানির উৎস নাই। সিলেটের ওয়াটার লেবেল অনেক নীচে নেমে গেছে। অন্যান্য অঞ্চলে অল্প গভীরে গেলেই পানি পাওয়া যায়। কিন্তু সিলেটে সুগভীর কুপেও পানি পাওয়া যায় না। কিছুদূর গভীরে গেলেই গ্যাস পাওয়া যায়। তিনি জানান, দেশের অন্যান্য এলাকায় প্রায় ঘরে ঘরে আছে ‘স্যালো’ টিউবওয়েল। অথচ সিলেটের চিত্র এর ব্যতিক্রম। তাই অনেক জমি চাষাবাদের আওতায় আসে না।