শফিকের ঘাড়ে সিলেট জামায়াতের দায়িত্ব
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ ডিসেম্বর ২০১৬, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ২০১৭-১৯ মেয়াদের জন্য দলের কেন্দ্রীয় কমিট গঠন চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংগঠনটির আমির মকবুল আহমাদ এটি চূড়ান্ত করেছেন। নতুন কমিটিতে নায়েবে আমির, সেক্রেটারি জেনারেল, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল পদে জায়গা করে নিয়েছেন নতুন মুখ।
এদিকে দলের একটি সূত্রে জানাগেছে সিলেটের ডা. শফিকুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত থেকে ভারমুক্ত করে সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।
তবে দলটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হলেও এখনো তা ঘোষণা বা প্রকাশ করা হয়নি।
দলের শীর্ষস্থানীয় একটি সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানকে ’ভারমুক্ত’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে তিনিই দায়িত্ব পাচ্ছেন। সিলেটের ডা. শফিকুর রহমানের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এবং ঢা কা মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির রফিকুল ইসলাম খান। তবে দলের দুঃসময়ে টানা প্রায় ৬ বছর ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় ডা. শফিকুর রহমানকেই সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে বেছে নেন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির পদে ৫ জনকে মনোনীত করা হয়েছে। এদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে পুরনো পদে বহাল রাখা হয়েছে। নায়েবে আমির হিসেবে পুরনোদের মধ্যে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও মাওলানা আবদুস সোবহানকে একই পদে বহাল রাখা হয়েছে। দলে নতুন নায়েবে আমির হিসেবে যুক্ত হয়েছেন চট্টগ্রাম জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা শামসুল ইসলাম, ও খুলনা মাওলানা মিয়া গোলাম পরওয়ার।
সুত্র জানায়, কেন্দ্রীয় কমিটির ৬টি সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পদে আনা নতুন যুক্ত হয়েছেন চারজন আর পুরোনো আছেন দুজন। পুরনোদের মধ্যে আছেন এটিএম আজহারুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। বেশ কিছুদিন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করা এটিএম আজহারুল ইসলাম মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে আছেন।
নতুন মুখ হিসেবে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত হয়েছেন- দলীয় প্রধান নির্বাচন পরিচালক এটিএম মাসুম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, ঢাকা মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির রফিকুল ইসলাম খান ও সাবেক সেক্রেটারি মাওলানা হামিদুর রহমান আযাদ। এদের মধ্যে শেষ তিনজন সেক্রেটারি জেনারেল পদ পেতে আগ্রহী ছিলেন।
দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি গঠনে জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সঙ্গে পরামর্শ করেই বিভিন্ন পদে মনোনয়ন চুড়ান্ত করেছেন। বিভিন্ন পদে মনোনীত নেতাদের এরই মধ্যে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জামায়াতের নতুন কমিটি গঠনের প্রথম ধাপ হিসেবে গত জুলাই থেকে আমির নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সারা দেশের ৩৭ হাজার রুকন (শপথধারী সদস্য) দেয়া গোপন ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে তিন বছরের (২০১৭-১৮-১৯) জন্য মকবুল আহমাদ আমির নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি ছয়বছর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালের ২৯ জুন দলের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন জ্েযষ্ঠ নায়েবে আমির মকবুল।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে নিজামীর মৃত্যুদণ্ড চলতি বছরের ১০ মে কার্যকর করা হয়। এর আগে গত বছরের ২২ নভেম্বর যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এর ফলে জামায়াতের পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় দলের হাইকমান্ড।
গত ১৭ অক্টোবর নতুন আমির হিসেবে শপথ নেওয়ার পর পরই মকবুল আহমাদ তৎপর হন জামায়াতের পুনর্গঠনে লা ও মহানগর পর্যায়ের আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা নির্বাচনের কাজে। গত ২০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ৮৩টি সাংগঠনিক জেলার আমির নির্বাচন এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছে দলটি। জেলা ও মহানগরের আঞ্চলিক রুকনদের ভোটে আঞ্চলিক শুরা নির্বাচন করার পর সেক্রেটারি নিয়োগ দেবেন জেলাপর্যায়ের আমিররা।
কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে জামায়াত কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করছে। এর কারণ আমির হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার১৫ দিনের মাথায় মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু হয়। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের সিলোনিয়া লালপুর গ্রামে মকবুল আহমাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত কাজ শুরু করে। ট্রাইব্যুনালে এখনো ওই প্রতিবেদনটি জমা পড়েনি।
গণমাধ্যমসূত্রে জানাগেছে জামায়াতের হাইকমান্ড মনে করছে- ‘কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাওয়া নেতাদের নাম আগে প্রকাশ পেলে তাদের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী হয়রানি করতে পারে, চাপের মুখে নিষ্ক্রিয় করে দেয়া কিংবা মিথ্যা মামলায় কারাগারে ঢুকানো হতে পারে। এতে ব্যাহত হবে জামায়াতের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। এ আশঙ্কা থেকেই কমিটি সম্পর্কে গোপনীয়তা বজায় রাখছে জামায়াত।’