মেয়রবিহীন সিলেট সিটি করপোরেশন, নেই উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ নভেম্বর ২০১৬, ৯:৪৯ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
মেয়রের চেয়ারে বসেই আরিফুল হক চৌধুরী শুরু করেছিলেন ‘অ্যাকশন’। সিলেট মহানগরীর চেহারা পাল্টে দিতে সহযোদ্ধা কাউন্সিলরদের নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। জঞ্জালমুক্ত পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার তার চেষ্টা প্রশংসিত হয়েছিলে সর্বত্র। কিন্তু দায়িত্ব পাওয়ার দেড় বছরের মধ্যে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় কারান্তরিণ হয়ে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর কান্ডারিবিহীন হয়ে পড়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক)। এরপর থেকে ধীরে ধীরে সিসিকের উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির হতে থাকে বলে জনপ্রতিনিধি ও নগরবাসীর দাবি।
২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হয় সিসিকের নির্বাচন। নির্বাচনে হেভিওয়েট প্রার্থী, টানা দুইবারের মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে হারিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসেন বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। মেয়রের চেয়ারে বসেই আরিফ নগরভবনে আটকে থাকেননি। কাউন্সিলরদের সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানে চালান জোর চেষ্টা। বছরখানেকের মধ্যেই নগরীর ফুটপাত দখলমুক্তকরণ, ছড়া-খাল উদ্ধার করে জলাবদ্ধতার সমাধান, যানজট নিরসনের চেষ্টায় অনেকটা সফল হন তিনি। গতি পায় নগরীর উন্নয়ন কার্যক্রম।
মেয়রের চেয়ারে বসার প্রায় এক বছরের মধ্যেই সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলা ও হত্যার ঘটনায় বিস্ফোরক মামলায় অভিযুক্ত হন আরিফ। ২০১৪ সালেল ৩০ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর তাকে কারাগারে পাঠান আদালত। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন। মাঝে একবার মায়ের অসুস্থতার কারণে সপ্তাহ দুয়েকের জন্য জামিন পেয়েছিলেন তিনি। এরই মধ্যে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি আরিফকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ার দখল নিয়ে দুই প্যানেল মেয়রের দ্বন্দ্ব আদালত পর্যন্ত গড়ালে শূণ্য থেকে যায় মেয়ারের পদটি।
আরিফুল হক চৌধুরী জেলে যাওয়ার পর থেকে সিসিকের উন্নয়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়। গতিহীন হয়ে পড়ে বিভিন্ন কার্যক্রম। মন্ত্রণালয় থেকে সিসিকের আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব দেয়া হয় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীবকে। নিজ দায়িত্বের বাইরে মেয়রের বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় এনামুল হাবীবকে। জনপ্রতিনিধি ও নগরবাসী মনে করছেন, মেয়র না থাকায় সিসিকে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হচ্ছে না।
সামাজিক সংগঠন চেইজ বিগিনস এর সভাপতি তামিমুল করিম হৃদয় বলেন, আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ফুটপাতকে হকারমুক্ত ও জলাবদ্ধতা নিরসনে ছড়া-খাল দখলমুক্তের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বরখাস্ত হওয়ার পর মেয়রবিহীন নগরীতে এই সমস্যাগুলো আবারো প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নগরীর বড়বাজার সমাজকল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এখন তো নগরীর কাজকর্ম থমকে গেছে। আমরা কিছু বলার জন্য কাউকে পাই না। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, সিলেটে নির্বাচিত মেয়রের ব্যবস্থা করা হোক। নইলে আমাদের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হবে না।’
এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমেদ বলেন, মেয়র আরিফ কারাগারে থাকায় একদিকে নগরীর উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটছে, অন্যদিকে নগর ভবন পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকেও তার দায়িত্ব পালনে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অভিভাবকহীনভাবে একটি সিটি করপোরেশন এভাবে চলতে পারে না।
৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, একজন জনপ্রতিনিধিই জনগণ ও অপর জনপ্রতিনিধির অভাব-অভিযোগ ও প্রয়োজন বুঝতে পারেন। সরকারি কর্মকর্তা দিয়ে জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে করানো সম্ভব নয়। তাই নগরভবনের অভিভাবকের চেয়ারটি পূরণ করা প্রয়োজন।
মেয়রবিহীন নগরভবনের কার্যক্রম কেমন চলছে এমন প্রশ্নের জবাবে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, মামলার কারণে নির্বাচিত মেয়র কারান্তরিণ হওয়ায় এবং তাকে সাময়িক বরখাস্ত করায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাকে মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সাধারণ ও সংরক্ষিত মিলে ৩৬ জন কাউন্সিলর নিয়ে আমি চেষ্টা করছি উন্নয়ন কাজ সচল রাখার। তবে মেয়র না থাকারও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এ বাস্তবতা মেনেই আমরা কাজ করছি। বাড়তি দায়িত্ব পালনে আমার ওপর চাপ পড়ছে।