শনিবারের বিশেষ আয়োজন : আসলে লেখালেখি পাগলামি ছাড়া আর কিছুই নয়
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ নভেম্বর ২০১৬, ৩:৫৮ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ প্রায় এক ঘণ্টার বক্তব্যে নিজের লেখক জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক ভিএস নাইপল। বিভিন্ন বিষয়স্পর্শী কথোপকথনে আর হাস্যরসে সবাইকে মুগ্ধ করলেন তিনি, সঞ্চারিত করলেন নতুন নতুন বোধ। মুগ্ধ দর্শকের মুহুর্মুহু করতালিতে বারবার মুখরিত হলো মিলনায়তন। তিনি বলেন, আমি লেখক হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কী লিখব, কিছুই জানতাম না। কিন্তু লিখব, এটা জানতাম। আমি বুঝতে পারলাম, এর জন্য আমাকে কাঠখড় পোড়াতে হবে। শুরুতে ব্যাপারটা বিব্রতকর ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমিতে ‘দ্য রাইটার অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশ্বসাহিত্য চর্চার নানা দিক তুলে ধরতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা লিট ফেস্টের দ্বিতীয় দিনে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এই আলোচনা অনুষ্ঠানে তিলধারণের জায়গা ছিল না। আহসান আকবরের সঞ্চালনায় এই অধিবেশনে ভিএস নাইপলের স্ত্রী লেডি নাদিরা নাইপল অংশ নেন।
সভায় ৮৪ বছর বয়সী নাইপল আরও বলেন, লন্ডনের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতাম। নিজেকে নিয়ে নিজেই বিরক্ত হতাম। এক সময় বিবিসির লন্ডন অফিসে ফ্রি ল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে গেলাম। টাইপরাইটারে বসে লিখতে শুরু করলাম এবং নিজেকে বললাম, আমি ততক্ষণ পর্যন্ত এই ঘর ত্যাগ করব না, যতক্ষণ না পর্যন্ত জানি আমার লেখাটি কী দাঁড়াচ্ছে। আমার লেখালেখির জীবনটা ছিল জাদুর মতো। আমি ভাগ্যবান বলেই লেখালেখির পথে হেঁটেছি।
নোবেলজয়ী এই সাহিত্যিক আরও বলেন, আসলে লেখালেখি পাগলামি ছাড়া আর কিছুই নয়। আবার এটাও বলতে হয়, কোনো কিছুই খুব সহজ নয়। অনেক চিন্তা-ভাবনা করার পরই একটা কিছু দাঁড়ায়। একটা সময় আমি বুকপকেটে নোটবই নিয়ে ঘুরতাম এবং যাদেরকে ভিন্নরকম মনে হতো, তাদের সঙ্গে কথা বলতাম এবং সেগুলো লিখে রাখতাম। আমার অনেক লেখায় রয়েছে আমার বাবার জীবনের কাহিনির ছাপ।
কথার ফাঁকে নাইপলের স্ত্রী নাদিরা নাইপল বললেন, নাইপল তার বিখ্যাত ‘এ হাউস ফর মি. বিশ্বাস’ বইটির পাণ্ডুলিপি ভুল করে রান্নাঘরে ফেলে এসেছিলেন। তার আর কোনো কপি ছিল না। পরে তিনি প্যারিস ঘুরতে যান এবং পাণ্ডুলিপির বিষয়টি মনে পড়ে। দ্রুত তিনি সেটি উদ্ধার করেন এবং এ বইটিই তুমুল জনপ্রিয় হয়।
এবার ১৮ দেশের লেখক এবং দেড়শতাধিক বাংলাদেশি সাহিত্যিক-লেখক-গবেষক তিন দিনের এই ঢাকা লিট ফেস্ট উৎসবে ৯০টি বিশেষ অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন।
বাংলা একাডেমিজুড়ে সাজ সাজ রব। একাডেমির সর্বত্রই ছোট-বড় নানা স্টল। অধিকাংশ স্টলে থরে থরে সাজানো বই। গোটা চত্বরে ঘুরছেন দেশ-বিদেশের লেখকরা। শুধু লেখক-সাহিত্যিকই নন, শিল্প-সংস্কৃতির নানা শাখার মানুষের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। দেশ-বিদেশের যশস্বী কবি-সাহিত্যিক, অনুবাদক-নাট্যকারদের মিলনমেলা বসেছে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল লিট ফেস্টে।
তিন দিনব্যাপী এই উৎসবের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার সকাল থেকেই বাংলা একাডেমির সবুজ প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের আনাগোনায়। বাংলাদেশের লেখক আর পাঠকদের সঙ্গে নানা আলোচনায়, উৎসবের বিভিন্ন নির্ধারিত বক্তৃতায় অংশ নিচ্ছেন তারা। বাংলা একাডেমিতে এই উৎসবে স্থাপিত হয়েছে সাতটি পৃথক মঞ্চ। এই সাত মঞ্চে দিনব্যাপী ছিল পৃথক পৃথক পরিবেশনা। যাত্রিকের এই আয়োজনে সহযোগিতা করছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ১৭ নভেম্বর সকালে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন নোবেল জয়ী ত্রিনিদাদের সাহিত্যিক ভিএস নাইপল। উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সম্মানিত অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।