কত মার খেয়েছি, ছোট ছোট বাচ্চারা পর্যন্ত মেরেছে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ নভেম্বর ২০১৬, ৪:০০ পূর্বাহ্ণ
যে সমাজে মেয়েদের বাইরে কাজ করার ওপরে এখনও অনেক সামাজিক-পারিবারিক বাধা বিপত্তি রয়ে গেছে, সেখানে প্রায় নিরক্ষর শামসুন্নাহার একা অজানা-অচেনা এক দেশে কাজ করার জন্য পাড়ি জমিয়েছিলেন। “আমরা বাইরে যাই নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য, বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে চলার জন্য। পিছুটান আছে বলেই কিন্তু আমরা বিদেশে যাই,” বলেন শাসুন্নাহার।বাংলাদেশে যেরকম কাজ করতে হয় বিদেশে তার চেয়েও বেশি করতে হয় বলে জানান তিনি। “কিন্তু এই যে নির্যাতন হচ্ছে, আমি কুয়েতে ছিলাম। আমি নিজেও কষ্ট পেয়েছি। এখনও কিন্তু এগুলো চলছে। আমি ভুগেছি আমার অন্য বোনেরা যেন না ভোগে…”।
“রাত্র দুটা পর্যন্ত কাজ করেছি। হয়তো সব কাজ হয়ে গেছে। তারপরও রাত একটা-দেড়টার পরও কাপড় ইস্ত্রি করার জন্য বলেছে। দুটা-আড়াইটা পর্যন্ত সেটা করতে হয়েছে। শুধু দুইটা টাকার জন্য”। একটু খাওয়ার জন্য এত কষ্ট করতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ওই দেশের খাবার বাঙালি মেয়েরা খেতে পারে না। তাও বলে না তোমরা রান্না করে খাও। ওরা খেয়ে যে খাবার থাকে সেগুলোই আমাদের খেতে দেয়”।ঠিকমত বেতনও দেয়া হয় না বলে তিনি জানান। এই কথাগুলো বলার সময় তার কণ্ঠস্বরে ছিল কান্নার রেশ। তিনি বলেন, “মাত্র এগারো মাসের বেতন দিয়েছে। কিন্তু দুই বছর তিন মাস থেকে আসছি। কত মার খেয়েছি। জুতা দিয়ে মারে, লাথি মারে, মুখে থুথু মারে। ছোট ছোট বাচ্চারা পর্যন্ত এমন করে”। এখন নিজেই একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করেছেন শামসুন্নাহার। নারীরা যারা বিদেশে কাজ করতে যেতে ইচ্ছুক তাদেরকে খাপ খাইয়ে নেয়ার বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বিদেশে কীভাবে রান্না করা হয়, ভাত কীভাবে রান্না করা হয় , অন্যান্য খাবার তৈরির পদ্ধতি শেখানো হচ্ছে। সেইসাথে সেখানকার খাবারের সাথে, কাজ-কর্মের সাথে পরিচিত করানো হচ্ছে। -বিবিসি বাংলা