সিলেটে আবারও শিক্ষার্থীদের টাকা মেরে দিয়েছেন ‘বদমাশ’ নেতারা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ নভেম্বর ২০১৬, ৩:০৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটের মদনমোহন কলেজে আবারও শিক্ষার্থীদের টাকা লোপাট হয়েছে। এ বছরের দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় সাড়ে তিন শ শিক্ষার্থীর বেতন ও পরীক্ষা ফির প্রায় ১৯ লাখ টাকা ছাত্রলীগের নেতারা মেরে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের রাজেশ সরকার ও সুমন চৌধুরীর নেতৃত্বে ১০ জনের একটি দল এই টাকা মেরে দিয়েছে। এ অবস্থায় ১৭৫ জন শিক্ষার্থী গত সোমবার থেকে শুরু নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।
এর আগে ২০১৩ সালেও ছাত্রলীগ নেতাদের নেতৃত্বে ভর্তি-বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রায় ৭০ লাখ টাকা লোপাট হয়। ছাত্রদলের নেতারাও ওই দলে ছিলেন। সে সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ভর্তি–বাণিজ্যে থাকা ছাত্রনেতাদের ‘বদমাশ’ বলে ভর্ৎসনা করেছিলেন। অর্থমন্ত্রী স্থানীয় সাংসদ হিসেবে এই কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। ওই ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় আর্থিক লেনদেন অনলাইনের মাধ্যমে হয়ে আসছে।
কলেজের প্রশাসনিক শাখা সূত্র জানায়, সোমবার দ্বাদশ শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হয়। এর জন্য অক্টোবরে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার ফি ও ছয় মাসের বেতনের ৫ হাজার ৪০০ টাকা অনলাইনে পরিশোধ করতে নোটিশ দেওয়া হয়। বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে মোট দেড় হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন এই কলেজে। অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের নেতারা অনেকটা জোর করে তাঁদের কাছ থেকে পরীক্ষার ফি ও বেতনের টাকা নিয়ে নেন এবং তাঁরাই এ টাকা অনলাইনের মাধ্যমে পরিশোধ করবেন বলে জানান। এভাবে প্রায় সাড়ে তিন শ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তি ফি ও বেতনের টাকা নেন ছাত্রলীগের নেতারা। সাড়ে তিন শ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তাঁরা ১৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা তুলেছেন। কিন্তু এই টাকা তাঁরা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেননি।
বেতন ও পরীক্ষার ফি জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া না মেলায় কলেজ কর্তৃপক্ষ নভেম্বরের মাঝামাঝি আরও একটি নোটিশ দেয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, যেসব শিক্ষার্থী অনলাইনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট টাকা জমা না দেবেন, তাঁদের কোনো অবস্থাতেই পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হবে না। এ নোটিশ পেয়ে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ নেতাদের দ্বারস্থ হলে তাঁরা টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে পুনরায় অনলাইনে টাকা পরিশোধ করেন। সোমবার পর্যন্ত ১ হাজার ৩১৫ জন শিক্ষার্থী অনলাইনে টাকা জমা দিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এর বাইরে আরও ১০ জন আগামী পরীক্ষার আগেই টাকা জমা দেওয়া হবে মর্মে স্বাক্ষর করে পরীক্ষা দিয়েছেন। ২৭ নভেম্বর দ্বিতীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে ১৭৫ জন শিক্ষার্থী সোমবারের পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন। এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, প্রথমবারের টাকা মার যাওয়ার পর তিনি নিজে উপস্থিত থেকে তাঁর ছেলের টাকা অনলাইনে পরিশোধ করে ছেলেকে পরীক্ষার হলে ঢুকিয়ে দিয়ে এসেছেন।
২০১৩ সালে ভর্তি-বাণিজ্য নিয়ে চাঞ্চল্য দেখা দিলে মদনমোহন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বাতিল করা হয়। পরে আর কোনো কমিটি হয়নি। তবে ভবিষ্যতে কমিটি হলে বিভিন্ন পদ পেতে আগ্রহ কর্মীরাই ‘নেতা’ হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। সোমবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত কলেজে অবস্থান করেও ছাত্রলীগের যে ১০ জনের বিরুদ্ধে টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে নেতৃস্থানীয় তিনজনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে টাকা মেরে দেওয়ার বিষয়টিকে ‘ভিত্তিহীন ও মিথ্যা’ বলে দাবি করেন তাঁরা। এ রকম দাবির মুখে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কয়েকটি ঘটনা নির্দিষ্ট করে বললে ছাত্রলীগ নেতা রাজেশ সরকার বলেন, ‘আমি জুনিয়র সারির নেতা। এ বিষয়ে খুব একটা জানি না। তবে কিছু শিক্ষার্থী দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা সিনিয়র নেতাদের কাছে অনুনয়-বিনয় করে রেখেছে। সে টাকা ভর্তি ও ফি বাবদ জমা দেওয়া হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই।’ এ বিষয়ে সুমন চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
কলেজ অধ্যক্ষ আবুল ফতেহ ফাত্তাহ বলেন, ২০১৩ সালে ৭০ লাখ টাকা লোপাট হয়ে যাওয়ার পর আর্থিক লেনদেন অনলাইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ অবস্থায় কারও প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই। কেউ কারও কাছে নগদ পরিশোধ করলে তার দায় কলেজ কর্তৃপক্ষ নেবে না। প্রথম দিনের পরীক্ষায় অনুপস্থিত ১৭৫ শিক্ষার্থীর বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, ‘প্রতিবছরই নির্বাচনী পরীক্ষায় অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে, তাঁরা সে রকমই কি না খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। যদি কোনো শিক্ষার্থী আগামী পরীক্ষার আগে অনলাইনে টাকা পরিশোধ করেন, তাহলে তাঁকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে।’