সিলেটে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় শিশুকে পুকুরে ফেলে হত্যা করেন পিতা
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ নভেম্বর ২০১৬, ১০:৩৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় নিজের শিশুকে পুকুরে ফেলে হত্যা করেছেন পিতা। ঘটনাটি ঘটেছে সিলেটের বিয়ানিবাজারের একটি গ্রামে। পিতা উজ্জ্বল আহমদ হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
উজ্জ্বল আহমেদ ও রহিমা বেগমের ছয় মাস বয়সী কন্যা শিশু গত শুক্রবার ভোর রাতে খুব বেশি কাঁদছিল। রহিমা বেগম তাঁর শিশুকে ঘুম পাড়িয়ে নিজেও ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু ভোরের দিকে আবারও সেই শিশুটি কাঁদতে থাকে, আর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় রাগে বিরক্তিতে শিশুটিকে নিয়ে পুকুরে ফেলে দেন তার বাবা। নিজের শিশুকে হত্যার কথা স্বীকার করে এখন কারাগারে আছেন উজ্জ্বল আহমেদ।
বিয়ানিবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মো: বদরুজ্জামান জানান, বিয়ানিবাজারের মুড়িয়া ইউনিয়নের ঘুঙানিয়া গ্রামের এক পুকুর থেকে একটি শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয় গত শুক্রবার ভোরের দিকে।
এ ঘটনায় শিশুর বাবা ও মা দুজনকেই সন্দেহ করে পুলিশ।
যদিও শিশুটির বাবা আইনি জটিলতা এড়াতে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছিলেন, কিন্তু দুজনকেই বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল পুলিশ।
পুলিশ কর্মকর্তা বদরুজ্জামান বলেন সেসময়ে রহিমা বেগমকে যথেষ্ট অসুস্থ মনে হচ্ছিল, কিন্তু শিশুর পিতা উজ্জ্বল আহমেদকেই তাদের বেশি সন্দেহ হচ্ছিল।
শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর তার বাবাকে শনিবার আটক করে পুলিশ। আর শনিবারই স্বামীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন রহিমা বেগম।
মো: বদরুজ্জামান জানান, রবিবার সিলেটের আদালতে উজ্জ্বল আহমেদ স্বীকার করে নেন যে তিনি তার ছোট মেয়ে শিশুটিকে পুকুরে ফেলে দিয়েছেন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটার কারণে।
উজ্জ্বল আহমেদ ওয়ার্কশপে কাজ করেন।
শিশুটির বাবা স্বীকারোক্তিতে বলেন, সেদিন তার কান্নায় ঘুমের ব্যাঘাত হয়, রাগে পুকুরে ফেলে দিয়ে আসেন শিশুটিকে। শিশুটির মা তখন ঘুমাচ্ছিলেন।
বিয়ানিবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মো: বদরুজ্জামান জানিয়েছেন, শিশুটির বাবা তার স্বীকারোক্তিতে বলেছেন “সারাদিন কাজ করি, রাতে ঘরে এসে ঘুমাতে পারি না, মেয়ে কাঁদে খালি। কয়দিন ধরে বেশি কাঁদতেছে, মুখে ঘা, অসুস্থ। সেদিন রাতে কান্নার চোটে রাগ উঠে গেছিল। তার মা দেখি ঘুমায়। রাগে তাকে নিয়ে ফেলে দিছি পুকুরে”।
ওসি বদরুজ্জামান আরও জানান, যে রহিমা বেগমও জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ঘুম থেকে উঠে পাশে বাচ্চাকে তিনি পাননি, দেখেন তার স্বামী পায়চারি করছেন। বাচ্চা কই জানতে চাইলে উজ্জ্বল আহমেদ তার স্ত্রীকে বলেছিলেন তাকে পুকুরে ফেলে দিয়েছেন।
তাহলে জানার সাথে সাথেই কেন পুলিশের কাছে গেলেন না শিশুটির মা?
এ প্রসঙ্গে পুলিশের কাছে রহিমা বেগম বলেছেন, তার স্বামী তাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়েছিল। আর সে মুহুর্তে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।
তবে শিশুটির মরদেহ পাবার পর থেকেই তার মা রহিমা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে জানাচ্ছে পুলিশ।
রহিমা বেগম অসুস্থ থাকার কারণে তার সাথে কথা বলা যায়নি, তবে শিশুটির মামা শাহেদ হোসেন বলেন, “এমন আচরণ অস্বাভাবিক, কোনও বাবা-মাইতো চায় না তার সন্তানের কিছু হোক। এটা ক্যামনে হইলো বুছতেছি না। রাগের মাথাতেও মানুষ এটা ক্যামনে করবে আমি বুঝি না!”
শাহেদ হোসেন জানান তার বোনের ঘরে চার বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে, আর ছয় মাস বয়সী শিশুটি ছোট ছিল।
“আমার বোনের সংসারে কোনও অশান্তি ছিল না। অথচ ওই একদিনই রাগের মাথায় ছোট বাচ্চাটারে ফেলে দেয়া-বোনও বুঝতে পারে নাই। ওই ঘটনার পর দুলাভাইয়ের আচরণ কেমন যেন লাগতেছিল, সন্তান হারানোর বেদনা ছিল না। বোনতো আমাদের বলে নাই, পুলিশরে বলছে তারে ভয় দেখাইছিল। ও হয়তো সংসার বাচাইতে চাইছিলো, তাই প্রথমে কিছু করে নাই”-বলেন শিশুটির মামা শাহেদ হোসেন।