আরো তথ্যের সন্ধানে দুদক : সিলেটে আলোচনায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জুয়েল
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ নভেম্বর ২০১৬, ১২:১৮ পূর্বাহ্ণ
চৌধুরী মুমতাজ আহমদ:
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে অনেক দিন ধরেই চোর-পুলিশ খেলছিলেন তিনি। নাগাল পাচ্ছিলো না তার। অভিযানও চালিয়েছিলো তাকে ধরতে। কিন্তু কি করে যেন হাত ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সিলেট জেলা ইউনিটের কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল। শেষমেশ তাকে ধরতে ফাঁদ পাতে দুদক। সে ফাঁদ ছিঁড়ে বেরোতে পারেননি সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল। সিলেট নগরীর একটি হোটেলে ‘সাজানো’ একটি অনুষ্ঠান থেকে বুধবার আটক হন তিনি। আটকের পর দুদক তাকে রাতেই সমঝে দেয় পুলিশের কাছে। বৃহস্পতিবার পুলিশ তাকে হাজির করে সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। বিচারক সাইফুজ্জামান জামিন নামঞ্জুর করে তাকে পাঠিয়ে দেন কারাগারে। আরো তথ্য, আরো বিস্তারিত জানতে জুয়েলকে রিমান্ডে নেয়ার আরজি ছিলো দুদকের। আদালতে রিমান্ড প্রসঙ্গটির শুনানি হবে আজ। ওদিকে জুয়েল গ্রেপ্তারের পর সিলেট জুড়ে আলোচনা চলছে তাকে নিয়ে।
সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাটি করেছিলেন দুদক সিলেটের উপ-পরিচালক রেবা হালদার। গত ১ সেপ্টেম্বর দায়ের করা মামলায় তিনি অভিযোগ করেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ৩ কোটি ৫২ লাখ ৮০ হাজার টাকা, মুক্তিযোদ্ধা প্রকল্পের ১৪ লাখ টাকা, মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দেয়া ১৩ কম্পিউটার কয়েদির মাঠে গরুর হাটের খাজনা বাবদ প্রাপ্ত টাকা আত্মসাতের দায় থেকে বাঁচতে অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সিলেট জেলা ইউনিটের কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল। অনুসন্ধানকালে তাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ বক্তব্য প্রদানের জন্য নোটিশ প্রদান করা হলেও তিনি তাতে সাড়া দেননি। এমনকি দুদককে প্রয়োজনীয় দলিলপত্রও সরবরাহ করেননি জুয়েল।
শুধু দুর্নীতির অভিযোগই নয়, ‘মুক্তিযোদ্ধা’ পরিচয়টাই জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েলের বিরুদ্ধে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সিলেট জেলা ইউনিটের কমান্ডার হলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি অংশ নেননি। দুদকের অনুসন্ধানেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েলের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। গত ১৬ জুলাই সংস্থার পরিচালক বরাবরে জমা দেয়া দুদকের এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে দুদক সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রামমোহন নাথ সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েলকে ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার’ হিসেবে চিহ্নিত করে উল্লেখ করেন, ‘সংগৃহীত রেকর্ডপত্র যথা বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত সংখ্যা, শনিবার, জুন ০৪, ২০০৫ প্রকাশিত গেজেট এর কপি যাতে সিলেট বিভাগের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা রয়েছে। লালমুক্তিবার্তার খ-নং-৮৯ ও ১০০, যাতে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা রয়েছে। উল্লিখিত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, তাতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অভিযুক্ত সুব্রত চক্রবর্তী (জুয়েল) এর নাম নেই।’
মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হলেন সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল-২০০৮ সালের ৭ই নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে সিলেট জেলা ইউনিটের তৎকালীন আহ্বায়ক মাহমুদ হোসেন লিখিত বক্তব্যে তার বর্ণনা দেন। সে বর্ণনামতে টাকা আত্মসাতের দায়ে সোনালী ব্যাংক জালালাবাদ সেনানিবাস শাখার ম্যানেজার পদ থেকে চাকরিটি চলে যাওয়ার পর সুনামগঞ্জের বাসিন্দা সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের পার্বত্য চট্টগ্রাম জুস প্লান্টে ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনো গেজেটে নাম না থাকলেও তৎকালীন কমান্ডকে ‘ম্যানেজ’ করে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। তবে তার কপাল খুলে এক-এগারোর পট পরিবর্তনের সময়। তখনই তিনি পেয়ে যান সিলেট বিভাগীয় কমান্ডারের পদ। দুর্নীতির যতো অভিযোগ জমা হয়েছে সুব্রত চক্রবর্র্তী জুয়েলের নামে তার বেশির ভাগই সে সময়ের কীর্তির সূত্র ধরেই।
দুদক সিলেটের উপ-পরিচালক রেবা হালদার জানান, বারবারই ফস্কে যাওয়ায় বুধবার রাতে সাজানো পরিকল্পনামতো তারা জুয়েলকে আটক করেছেন।
সূত্র : মানবজমিন