৫ বছরে ব্রিটেন থেকে অর্ধশতাধিক বাংলাদেশীসহ ৮০০ মানুষের আইএসে যোগদান
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ নভেম্বর ২০১৬, ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ
জে আহমেদঃ ব্রিটেন থেকে প্রায় ৮ শতাধিক মানুষ সিরিয়া গিয়েছেন যুদ্ধ করতে । এর মধ্য রয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক ব্রিটিশ বাংলাদেশী । বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ বছরে অন্তত ২৭ হাজার যোদ্ধা আইএসে যোগ দিয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এদের মধ্যে ৫ থেকে ৭ হাজারই ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো থেকে সিরিয়ায় গিয়েছেন। আল কায়েদার পৃষ্ঠপোষকতায় জাবাত আল নুসরার মতো দলে যোগ দিয়েছেন এদের অনেকেই।
জানা যায়, গত বছরের ১১ মে বেডফোর্ডশায়ারের লুটন শহরে বসবাসরত ব্রিটিশ বাংলাদেশী একই পরিবারের ১২ সদস্যে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে। সিরিয়ায় জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের সঙ্গে সরকারের যুদ্ধের মধ্যে ওই পরিবারের মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে যাওয়ার খবরে তার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে স্থানীয় বাংলাদেশিরাও উদ্বিগ্ন। নিখোঁজ ১২ সদস্যের ওই পরিবারে তিনটি শিশু রয়েছে। বয়োবৃদ্ধ দুজনের মধ্যে একজন নারী ক্যান্সারের এবং পুরুষ ডায়াবেটিস রোগী বলেও যুক্তরাজ্যের সংবাদ মাধ্যমের খবর। পরিবারটির সদস্যরা হলেন- মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান (৭৫), তার স্ত্রী মিনারা খাতুন (৫৩), তাদের মেয়ে রাজিয়া খানম (২১), ছেলে মোহাম্মদ জায়েদ হুসাইন (২৫), মোহাম্মদ তৌফিক হুসাইন (১৯), মোহাম্মদ আবিল কাশেম সাকের (৩১) এবং তার স্ত্রী সাঈদা খানম (২৭); মোহাম্মদ সালেহ হুসাইন (২৬), তার স্ত্রী রশানারা বেগম (২৪) এবং তাদের তিন সন্তান, যাদের বয়স এক থেকে ১১ বছর। ২০১৪ সালের জুনে মাসে রুহুল আমিন এবং রিয়াদ খান নামে দুই ব্রিটিশ আইএস সদস্যকে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যার কথা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে জানিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ব্রিটেনে রাজনৈতিক বিতর্কও চলছে। বিরোধী রাজনীতিকরা দাবি তুলেছেন, কিভাবে এই ড্রোন হামলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তার বিস্তারিত জনসমক্ষে প্রকাশ করতে। রুহুল আমিনের জন্ম বাংলাদেশের মৌলভিবাজার জেলায়। কিন্তু বেড়ে উঠেছেন স্কটল্যান্ডের এবারডীনে।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্ররোচিত হয়ে লন্ডন থেকে উগ্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইএসআইএস/আইএস) সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগ দেয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কিশোরী শারমিনা বেগম ।
একই বছরে সিরিয়ার জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস (ইসলামিক স্টেট) সংশ্লিষ্টতা ও যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের ওপর হামলার পরিকল্পনার দায়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই ব্রিটিশ নাগরিক দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তাঁরা হলেন জুনায়েদ আহমদ খান (২৫) ও সজিব খান (২৩)। দুজনই ইংল্যান্ডের লুটন শহরের বাসিন্দা। বিবিসির এক খবরে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া জুনায়েদ আহমদ খান শৈশবের কিছু সময় বাংলাদেশে পড়াশোনা করেছেন। যুক্তরাজ্যে তাঁর শিক্ষাজীবন মাধ্যমিক পর্যায়ের আগেই থেমে যায়। এরপর বেশ কয়েকটি চাকরি ঘুরে সে ‘অ্যালায়েন্স হেলথ’ নামে একটি কোম্পানির গাড়িচালক হিসেবে কাজ করেন। অন্যদিকে সজিব খান ছিলেন বেকার। জুনায়েদ আহমেদ খান ও সজিব খান সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা বলে পরিচয় দিয়েছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সংস্থার হিসাব অনুযায়ী শুধু ব্রিটেন থেকেই আইএসে যোগ দেয়ার সংখ্যা হাজারেরও বেশী।
জানা যায়, আইএস নিজেদের দখলকৃত সাম্রাজ্য হারাতে শুরু করার পর থেকে পশ্চিমা জিহাদিদের অনেকেই ইউরোপে ফিরে যেতে চাইছেন বলে ধারণা করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। নতুন এই পরিস্থিতি কী করে মোকাবেলা করা যায়, তার পরিকল্পনাও করছেন গোয়েন্দারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের এক বিশেষ প্রতিবেদন থেকে এসব কথা জানা গেছে।
গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে ইন্ডিপেনডেন্ট বলছে, এই চরমপন্থী, সশস্ত্র ও প্রশিক্ষিত আইএস সদস্যরা নিকট ভবিষ্যতে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই আশঙ্কার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাজ্য। ধর্মান্তরিত ব্রিটিশ নাগরিকদের সন্তানরা অতি অল্প বয়সেই যোগ দিচ্ছে আইএসে, জড়িয়ে পড়ছে সহিংস কর্মকাণ্ডে। আইএসে এ ধরনের দেড় হাজারেরও বেশি শিশু সদস্য রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আরব দেশগুলোর মধ্যে সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন ও মরক্কো থেকে আসা অর্ধ শতাধিক শিশুও নিজেদের আইএস বলে দাবি করে আসছে। অন্যান্য পশ্চিমা দেশের মধ্যে আছে ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়া।
এক ব্রিটিশ নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ‘এই শিশুদের নিয়ে কী করা হয় তা বিবেচনায় রাখা জরুরি। এদের মধ্যে অনেকেই যে বয়সে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে, ইউরোপের অনেক রাষ্ট্রেই ওই বয়সকে অপরাধের দায় নেওয়ার জন্য যথেষ্ট মনে করা হয় না। এই শিশুদের অনেককে সিরিয়া নিয়ে যাওয়া হয়েছে, অনেকে আবার সিরিয়াতেই তাদের ইউরোপীয় পিতামাতার ঘরে জন্ম নিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু প্রকৃত সমস্যা সৃষ্টি করবে হাজার হাজার প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরা। তবে এ বিষয়ে কৌশল গ্রহণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে ভিন্ন অবস্থান তৈরি হতে পারে।’ব্রেক্সিটের পর যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় মিত্র রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রেও জটিলতা বেড়েছে। ফলে তারা নিজ দেশের নাগরিকদের জিহাদি হয়ে ফিরে আসার আশঙ্কায় শঙ্কিত।