বেনিফিট কর্তন : ব্রিটেনে দিশেহারা বাংলাদেশীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ নভেম্বর ২০১৬, ১২:৩০ পূর্বাহ্ণ
লন্ডন অফিসঃ ব্রিটেন সরকারের পক্ষ থেকে বাসস্থান, কর্ম ভাতাসহ আনুসঙ্গিক সহায়তার পরিমান (বেনিফিট) বছরে আরও তিন হাজার পাউন্ড কমিয়ে ২৩ হাজার পাউন্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। আর যারা লন্ডনের বাইরে বসবাস করেন তাদের জন্য এই সীমা ৬ হাজার পাউন্ড কমিয়ে বছরে ২০ হাজার নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন এশিয়ান তথা বাংলাদেশীরা। কমিউনিটির অনেকেই সরকারের হুট করে এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন। সরকারী সহায়তা ছাড়া ৫/৬ সন্তানের পরিবারের বোঝা টানা তাদের জন্য মুশকিল।
গত ৭ নভেম্বর সোমবার থেকে নতুন এই বেনিফিট কর্তন কার্যকর হয়েছে। আগে বছরে কোনো ব্যক্তি বা পরিবার ২৬ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত বেনিফিট হিসেবে পেতেন।
নতুন এই বেনিফিট কর্তন কার্যকর হওয়ার ফলে লন্ডনে বাসবাসকারী কোনো ব্যক্তি বা পরিবার সম্পাহে সর্বোচ্চ ৪৪২ পাউন্ড পাবেন। আর লন্ডনের বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি বা পরিবার সপ্তাহে ৩৮৫ পাউন্ড পর্যন্ত পাবেন।
নতুন বেনিফিট ক্যাপের কারণে ব্রিটেনের প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার দরিদ্র পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বেনিফিট ক্যাপের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে শিশুদের জীবনে। পরিসংখ্যান বলছে, নতুন বেনিফিট কর্তনে তিনশ হাজারের মতো শিশু আরো বেশি দারিদ্র্রের মুখোমুখি হবে। এসব পরিবারে গড়ে সপ্তাহে বেনিফিট কমবে ১১৫ পাউন্ড করে। গত বছরই এই বেনিফিট কর্তনের ঘোষণা দিয়েছিলেন ততকালীন চ্যান্সেলর জর্জ অসবর্ন।
জীবনযাপন ব্যয় মিটাতে অক্ষম দ্ররিদ্র মানুষদের জন্য যুক্তরাজ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বাসস্থান, বেকার ভাতা কিংবা প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতা দেয়া হয়। এক সময় ছিল যখন একজন ব্যক্তি বা পরিবার বছরে সর্বোচ্চ কত অর্থ সহায়তা হিসেবে পাবেন তার কোনো হিসাব ছিল না। তখন অনেক পরিবার সরকারের কাছ থেকে বছরে এক লাখ পাউন্ডের বেশি সুবিধা নিয়েছেন। তখন সরকারী এই সুবিধার অপব্যবহারের ঘটনা ঘটতো। চাকরি-বাকরি না করে বেনিফিট নির্ভর আয়েশী জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকে।
২০১৩ সালে সরকার বেনিফিট প্রাপ্তির একটি সীমা করে দেয়। বলা হয়, সব রকমের ভাতা মিলিয়ে বছরে কোনো ব্যক্তি বা পরিবার সরকারের কাছ থেকে বছরে ২৬ হাজার পাউন্ডের বেশি বেনিফিট পাবে না। ২৬ হাজার পাউন্ড নির্ধারণের পেছনে যুক্তি ছিল ব্রিটেনে কর্মজীবী মানুষের গড় আয় বছরে ২৬ হাজার পাউন্ড। এ কারণে সরকারের তরফে বলা হয়, বেনিফিট নির্ভর জীবন যাপনকারীরা কর্মজীবীদের চাইতে বেশি অর্থ পেতে পারেন না, এটা করদাতের প্রতি ন্যায়সঙ্গত নয়।
এবার সেই ওই বেনিফিট ক্যাপ আরও ৩ হাজার পাউন্ড কমিয়ে বছরে ২৩ হাজার পাউন্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। আর লন্ডনের বাইরের বাসিন্দাদের জন্য বছরে সর্বোচ্চ বেনিফিটের পরিমাণ কমবে ৬ হাজার পাউন্ড।
সরকারের ব্যয় কর্তন নীতির প্রতিবাদে ব্রিটেনে বিক্ষোভ হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকেই। বিভিন্ন পরিসংখ্যান দেখিয়ে বলা হয়েছে, বেনিফিট কর্তনের কারণে ব্রিটেনে অনেক মানুষ এমনিতেই মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে, শিশু দারিদ্রের হার বাড়ছে। এবারও বেনিফিট কর্তন কার্যকর হবার আগে সরকারের কাছে দ্রুত বিষয়টি নিয়ে পুনর্বিবেচনার আহবান জানানো হয়েছে। বলা হচ্ছে, নতুন করে সরকারী ব্যয় কর্তন করা হলে ব্রিটেনে স্বল্প আয়ের মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠবে। তারা শুধু আর্থিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, অনেক পরিবার হারাবে তাদের বাসস্থান। চার্টার্ড ইন্সটিটিউট অব হাউজিং তাদের গবেষণায় দেখতে পেয়েছে, ১ লাখ ১৬ হাজার পরিবার, যে পরিবারে এক থেকে চারজন সন্তান রয়েছে, তারা নতুন বেনিফিট কর্তনে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, লন্ডনের বাইরের যে সকল পরিবারে তিন সন্তান রয়েছে এমন পরিবারগুলো সপ্তাহে প্রায় ৫০ পাউন্ড বেনিফিট হারাবে। ধরা যাক, তিন বেডরুমের বাসায় বসবাস করা লিডসের একটি পরিবার যাদের তিন সন্তান আছে তারা এখন যেখানে হাউজিং বেনিফিট পাচেছন সপ্তাহে ১৫১ পাউন্ড, নতুন বেনিফিট কর্তনে সেটি কমে গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ১শ পাউন্ডে। উল্লেখিত পরিসংখ্যানে কথা উল্লেখ করে চার্টার্ড ইন্সটিটিউট অব হাউজিং চিফ টেরি আলাফাত বলেন, এবারের বেনিফিট কর্তনের প্রভাব হবে অনেক পরিবারের জন্য মারাত“ক। অনেক পরিবার তাদের বাসস্থান হারাবে, অনেক পরিবারের পক্ষে ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস অসম্ভব হয়ে পড়বে।