প্রসঙ্গ গণতন্ত্র,ইলেক্টোরাল ভোট এবং মার্কিন জনগণের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষমতা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ নভেম্বর ২০১৬, ১১:১২ অপরাহ্ণ
সুহেল আহমেদ চৌধুরীঃ Government of the people, by the people, for the people প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের বিখ্যাত উক্তি। আমার জানামতে এটাই গণতন্ত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংজ্ঞা। মার্কিনীদের আমরা উন্নত গণতন্ত্রের দেশ বলি। দৃশ্যত মার্কিনীরা গণতন্ত্র মানেন, বুঝেন এবং বিশ্ববাসী কে বুঝান। মার্কিনীদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বাগা বাগা রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ তাদের গণতন্ত্রের আদ্যোপান্ত ব্যাখ্যা করেছেন আমাদের পত্রিকার পাতায় আমরা বাঙ্গালী পাঠকরা গোগ্রাসে গিলেছি।
তারা গণতান্ত্রিক এটা মানবো না কেন, যখন দেখি ট্রাম্পের মত বর্ণবাদী ব্যক্তি বলেন, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ব্যক্তিগত আক্রোশের জন্য নয়, বরং নির্বাচনের পরপরই ঐক্যের বানী শুনান, হিলারি পরাজয় মেনে নেন, ওবামা অভিনন্দন জানান। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে আমরা দেখি স্থূল কিংবা সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ।
#মার্কিনীদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জনগণের মতামতের প্রকৃত প্রতিফলন হয় নাকি নির্বাচনী গ্যাঁড়াকলে একজন বর্ণবাদী ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হন। মার্কিন নির্বাচন কে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ফর্মুলা বলতে পারি না। যখন দেখি ভোটের সংখ্যায় হেরেও প্রেসিডেন্ট হয়ে যাচ্ছেন। এটা নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ইতিমধ্যে আরও পাঁচবার বেশী ভোট পেয়েও প্রেসিডেন্ট হতে না পারার ঘটনা গটেছে কেবল ইলেক্টোরাল ভোটের নির্বাচনী গ্যাঁড়াকলে। অবশ্য ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতির ভোটাভুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিতর্ক আছে। কয়েক দফায় এটি বাতিলের জন্য কংগ্রেসে তোলাও হয়েছিল। কিন্তু সামান্য ব্যবধানে প্রতিবারই প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়।
মার্কিনীদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অন্যতম নিয়ামক শক্তি ইলেক্টোরাল কলেজে । যার রয়েছে মোট ৫৩৮ সদস্য। এটি কোনও ছাত্র শিক্ষকের কলেজ নয়। এঁরা একদল মানুষের সমষ্টি যারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁদের রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রতিটি রাজ্যে প্রতিনিধি পরিষদ বা কংগ্রেসে যে ক’জন প্রতিনিধি থাকেন; সেই রাজ্যে ইলেক্টোরাল কলেজ সদস্যও হন সেই একই সংখ্যায়। আর সংখ্যাটি নির্ধারিত হয় সেই রাজ্যের জনসংখ্যার ওপর। যে রাজ্যের জনসংখ্যা যতো বেশী সেই রাজ্যের ইলেক্টোরাল কলেজ সদস্য ততো বেশী।
ইলেক্টোরাল ভোট কিভাবে নিয়ামক শক্তি তার উদাহরণ বুঝার জন্য হিলারির প্রাপ্ত সাধারণ ভোটের দিকে চোখ দিতে হবে। নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন মোট ভোট পেয়েছেন ৫ কোটি ৯৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৫ ভোট। ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ৫ কোটি ৯৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০৬ভোট। তার মানে হিলারি প্রায় দুই লাখের মত বেশী ভোট পেয়ে হেরেছেন। কারণ কলেজ অব ইলেক্টোরাল ভোট ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২৭৯টি, আর হিলারির পক্ষে গেছে ২২৮টি।
# নেব্রাস্কা আর মেইন অঙ্গরাজ্য ছাড়া বাকি সব রাজ্যে যে প্রার্থী বেশি ভোট পান, তাকে ওই রাজ্যের সব ইলেক্টোরাল ভোট দিয়ে দেয়া হয়। শুধুমাত্র উল্লেখিত দুইটি রাজ্যে প্রার্থীদের পাওয়া সংখ্যা অনুযায়ী বাকি ভোট ভাগ হয়। ট্রাম্পের বিজয়ী হওয়ার কারণও এটা। কারণ ট্রাম্প এমন সব রাজ্যে বেশী ভোট পেয়েছেন যেখানে ইলেক্টোরাল ভোট বেশী। ফলে নিয়মানুযায়ী তাকে এই সব রাজ্যে সকল ইলেক্টোরাল ভোট দেওয়া হয়েছে; যা তার বিজয়ের নিয়ামক শক্তি।