আধুনিকতার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেকি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ নভেম্বর ২০১৬, ৪:১৭ অপরাহ্ণ
তোফায়েল আহমেদ পাপ্পু, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে:
আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ব এগিয়ে চলেছে। আধুনিকতায় যান্ত্রিকতার ছোয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামগঞ্জের বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী কৃষি ও গৃহস্থলি সামগ্রি। প্রগতি ও আধুনিকতার যুগে কর্মব্যস্থ মানুষের ব্যস্থতা যেমন বেড়েছে তেমনি যে কোন কাজ স্বল্প সময়ে স্বল্প শ্রমে দ্রুত সম্পন্ন করতে পারলেই মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচে বলে ধারণা জন্মেছে।
আধুনিকতার উৎকর্ষের দাপটের কাছে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার এক সময়ের কৃষান কৃষাণীদের ভালো মানের চাল তৈরী করার প্রধান মাধ্যম কাঠের ঢেকি। গ্রামে গঞ্জে এখন পুরোপুরি যান্ত্রিক ঢেউ লেগেছে। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে ঢেকির ছন্দময় শব্দ। শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেকি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন ঢেঁকির কদর। গ্রাম বাংলার কৃষকদের বাড়ী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। হাতের গোনা দুই একজন কৃষকের বাড়ীতে কাঠের তৈরী প্রচীনতম ঢেকি এখনও চোখে পড়ে। ধান চাল আটা ও চিরা ভাঙ্গানোর জন্য বৈদুতিক মিল হওয়ার কারণে গ্রামীণ কৃষকরা সহজেই ধান, আটা ও চিরাকম সময়ে অল্প খরচে ভাঙ্গাতে পারছে। তবে চাল তৈরীর কদর কালের পরিবর্তনে আস্তে আস্তে কমে গেলেও পোষ মাসে আত্মীয় স্বজনদের আপ্যায়নের ধুম পড়ে। এই এলাকায় শীতের সময় পিঠা পুলি তৈরীর মুল উপাদান চাল থেকে আটা তৈরীর জন্য কাঠের ঢেকির কদর বেড়ে যায়। মা বোনদের কাছে এই আটা দিয়ে পিঠা তৈরীতে কোন বেদ পেতে হয় না। শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের শাহীবাগ গ্রামের মনোয়ারা বেগম জানান, আমার শ্বশুর শ্বাশুরীর আমন থেকেই এই বাড়ীতে ঢেকি আছে। পারিবারিক প্রয়োজন খুব বেশি ব্যবহার না করলেও শীতের সময় আমার প্রয়োজন মত আটা তৈরী সহ প্রতিবেশীরা প্রায় প্রতিদিনই পিঠা তৈরীর আটা ভাঙ্গানোর জন্য ভিড় জমায়। সত্যিই এর কদর একেবারে শেষ হচ্ছে না। সাতগাঁও গ্রামের আলেয়া বেগম জানায় এই ঐতিহ্যবাহী ঢেকি অনেকটা স্মৃতিবশতই ধরে রেখেছি প্রায় ২০ বছর ধরে। এই ঢেকিতে ধান আটা ও চিরা ভেঙ্গে আসছি। এলাকার লোকেরা আটা ভেঙ্গে নেওয়ার জন্য তার কাছে আসে। ঢেকির গুন সম্পর্কে প্রবাদ বাক্য রয়েছে যে, ঢেকি স্বর্গে গেলেও নাকী ধান বানে। গ্রামীণ জনপদের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে বাপ দাদার মাটির বাড়ী ঘরে বদলে ডিজাইন করে, ইটের বাড়ী ঘর তৈরী বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অনেকে বাড়ীতে ঢেকি রাখার জন্য জায়গা থাকছে না। তাই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঢেকি বিলুপ্তির কারণে হয়তো আর কারও চোখে পড়বে না বলে আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।