জগন্নাথপুরে কুশিয়ারার নদী গর্ভে হারিয়ে বিলীন হওয়ার মুখে এলাকার ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ নভেম্বর ২০১৬, ১০:২৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় পাইলগাঁও, আশারকান্দি ও রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ার সম্মুখীন প্রায় হাজারখানেক বসতবাড়ী, স্কুল, মাদ্রাসা, বাজার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন রাস্তাঘাট। নদী গর্ভে হারিয়ে বিলীন হওয়ার মুখে রয়েছে এ অঞ্চলের কৃষি জমিও।
একদিকে নদীর ভাঙ্গনের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-গঞ্জের যোগাযোগের প্রধান অবলম্বন রাস্তাঘাট। অন্যদিকে রাস্তাঘাট না থাকায় বা চলার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় নদীর তীরবর্তী এলাকার কয়েক হাজার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আবার কৃষি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন স্থানীয় কয়েক শতাধিক কৃষক।
ইতোমধ্যে জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের পাইলগাঁও গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার নদী গর্ভে হারিয়েছেন নিজের বসতবাড়ি। এমনিতেই এই গ্রামে বাংলাদেশ সরকারের তেমন কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এই পাইলগাঁও গ্রামে রয়েছে জগন্নাথপুর উপজেলার একমাত্র প্রাচীনতম নির্দেশন ঐতিহ্যবাহী পাইলগাঁও জমিদার বাড়ী। সেই জমিদার বাড়িটি ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তা সংরক্ষনে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। তাই প্রশাসনের প্রতি ঐতিহ্যবাহী প্রচীনতম নির্দশন পাইলগাঁও জমিদার বাড়ি সংরক্ষনের অনুরোধ জানিয়েছেন পাইলগাঁও গ্রামের সচেতন মহল।
পাইলগাঁও গ্রামে প্রায় শতাধিক বসতবাড়ি নদী গর্ভে হারিয়ে যাওয়াদের মধ্যে বেশির ভাগই সণাতন ধর্মাবলম্বী। পরিবারগুলো দরিদ্র হওয়ার কারণে নতুন বসতবাড়ি তৈরি করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাই এসব পরিবারের লোকজন এখন তাকিয়ে আছেন সরকারি সহায়তার দিকে।
এদিকে, উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া জগন্নাথপুর-ওসমানীনগর উপজেলাকে সংযুক্তকারী বেগমপুর রাস্তাটি কুশিয়ারার ভাঙ্গনে বিলীন হতে যাচ্ছে। রাস্তা ভাঙ্গনের ফলে জগন্নাথপুর ও ওসমানীনগর উপজেলার মধ্যে যান চলাচল বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে খানাখন্দে ভরা এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন কয়েক শত যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
কুশিয়ারার ভাঙ্গনে জালালপুর গ্রামের অনেক বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে সড়ক। এই বিলীন হয়ে যাওয়ার ফলে এই এলাকাকে ‘ভাঙ্গাবাড়ি’ নামে স্থানীয়রা ইতোমধ্যে ডাকতে শুরু করেছেন। স্থানীয় একটি মসজিদও কুশিয়ারার ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গাবাড়ী বা জালালপুর গ্রামকে রক্ষা করতে প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। যার কারণে দিন দিন কুশিয়ারার কাছে হার মানতে হচ্ছে সেখানে বসবাসকারীদের।
স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, সম্প্রতি কিছুদিন টানা বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তাটি ভাঙ্গনের মুখে পরে। দীর্ঘদিন ধরে এসব সমস্যার সম্মুখীন তারা। তাই এসব সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সাংসদ এবং বর্তমান সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নানসহ স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
অপরদিকে, উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের রাণীগঞ্জ বাজার, বাগময়না গ্রাম, নোয়াগাঁও এবং আশারকান্দি ইউনিয়নের বড় ফেচি বাজার এলাকায় নদী ভাঙ্গনে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, আমি ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে তাৎক্ষনিকভাবে সংস্কার করার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।