ওসমানীনগরে মুখ থুবড়ে পরেছে জালালাবাদ গ্যাসের ৯১ কোটি টাকার প্রকল্প
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ নভেম্বর ২০১৬, ১১:১১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটের ওসমানীনগর-বালাগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলাবাসীর জন্য জালালাবাদ গ্যাসের ৯১ কোটি টাকার প্রকল্প মুখ থুবড়ে পরেছে। প্রকল্পের ট্রান্সমিশন লাইনের কাজ দুই বছর পূর্বে শেষ হলেও কর্তৃপক্ষের সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন তিন উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক জনগণ। বিগত দুই বছর ধরে এ অঞ্চলের মানুষ শুধু গ্যাসের লাইন দেখছেন কিন্তু গ্যাস পাচ্ছেন না। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ ও বিশ্বনাথবাসীকে গ্যাস সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে গত দুই বছর পূর্বে ২৫কি.মি. ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের কাজ শেষ করেছে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। ড্রিষ্টিবিউশন নেটওয়ার্ক প্রকল্পটি অনুমোদনের মাধ্যমে ২০১৪ সালের শেষের দিকে গ্রাহকদের ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ প্রদান করার কথা থাকলেও ওসমানীনগর এলাকাসহ তিন উপজেলার মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশিত প্রাকৃতিক গ্রাস সংযোগ এখন পর্যন্ত জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। এ অঞ্চলের দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশিত দাবী পুরনের পথে তীরে এসে তরী ডুবে যাওয়ার মতো হয়ে গেছে। আর জালালাবাদ গ্যাসের ৯১ কোটি টাকার প্রকল্পের ট্রান্সমিশন লাইনের কাজ শেস হলেও পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় মুখ থুবড়ে পরেছে প্রকল্পটি।
জালালাবাদ গ্যাস অফিস সূত্রে জানা যায়, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে অর্থমন্ত্রী আবুলমাল আব্দুল মুহিত ও সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সিলেটের কয়েকটি এলাকার সাথে ওসমানীনগর বালাগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলায় গ্যাস সংযোগের জন্য একটি প্রকল্প সিলেট জালালাবাদ গ্যাস অফিসের মাধ্যমে মন্ত্রালয়ে পাঠানো হয়।
দীর্ঘদিন মন্ত্রনালয়ে প্রকল্পটি পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ২০১১ সালের ডিসেম্বরের প্রথমদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সিলেটের ওসমানীনগর-বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ ও মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলাকে গ্যাস সংযোগের আওতায় আনা এবং জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির উচ্চ চাপের নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট গ্যাস ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক আপগ্রেডেশন প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১২ সালের মধ্যে সিলেটের ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ ও বিশ্বনাথ এবং মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় লাইন নির্মাণের কাজ শেষ করে গ্যাস সরবরাহ করা হবে বলে নির্দেশনা ছিল।
২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টম্বর সিলেটের গোলাপগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওসমানীনগর বালাগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলার গ্যাস ট্রান্সিমিশন লাইনের শুভ উদ্বোধন করেন।
সিলেট-২ এর আওতাধীন ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ ও বিশ্বনাথবাসীকে গ্যাস সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে জালালাবাদ গ্যাসের সিলেটের ফিরোজপুর এলাকা থেকে গোয়ালাবাজারের ইলাশপুর পর্যন্ত ২৫কি.মি. ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন এবং দুটি সাব স্টেশন নির্মাণের কাজ গত দুই বছর পূর্বে শেষ করা হয়। রশিদপুর সাবস্টেশনের জন্য ১৫ ডিসিমিল ভুমি ও তাজপুর সাবস্টেশনের জন্য ৯ ডিসিমিল ভুমি অধিগ্রহন করে সাবস্টেশন নির্মাণ করা হয়। রশিদপুর ও তাজপুর সাবস্টেশনের মাধ্যমে বিশ্বনাথ ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জবাসীদের গ্যাস সুবিধা দেয়া হবে। ট্রান্সমিশন পাইপ লাইনের কাজ ২০১৩ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে কাজটি শুরু হয়ে একই বছরের জুলাই মাসে পিরিজপুর থেকে ওসমানীনগরের ইলাশপুর পর্যন্ত পাইপ লাইনের কাজ শেষ। বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জ অংশের পাইপ লাইনের কাজ বাকী থাকে। সিলেটের পিরিজপুর থেকে ওসমানীনগরের ইলাশপুর পর্যন্ত ২৫ কিলো মিটার পাইপ লাইনের মধ্যে গ্যাস সরবরাহের সুবিধার্থে ১০ কিলোমিটার ৮ইঞ্চি ও ১৫ কিলোমিটার ৬ইঞ্চি পাইপ দিয়ে লাইন টানা হয়। কিন্তু কাজের সাথে সাথে গ্রাহকদের দুরগোড়ায় গ্যাস সুবিধা পৌছে দিতে ড্রিষ্টিবিশন লাইন স্থাপনের কথা তাকলেও এখন পর্যন্ত সে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। সরজমিন দেখা যায়, জালালাবাদ গ্যাসের রশিদপুর সাব-স্টেশনের চার দিক লতাপাতায় চেয়ে গেছে। তাজপুরের সাব-স্টেশনের অবস্থা ও প্রায় একই রকম। গ্যাস সরবরাহ না থাকায় মেশিন গুলোতে প্রায় জং ধরতে বসেছে।
সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারা দেশে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে ওসমানীনগর সহ তিন উপজেলার গ্যাস লাইনের অসম্পূর্ন কাজ সমাপ্ত করে ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ প্রদান করা হবে।
জালালাবাদ গ্যাসের প্রকল্প কর্মকর্তা প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন আহমদ বলেন, ওসমানীনগর-বালাগঞ্জ ও বিশ্বনাথের ট্রান্সমিশন পাইপ লাইনের কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারা দেশে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় এখানে গ্যাসের সরবরাহ ও অসম্পুর্ন লাইনের কাজ বন্ধ আছে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করা হবে।