ছাতকে ছাত্রলীগ-পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত অর্ধশত
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ নভেম্বর ২০১৬, ১০:০৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সুনামগঞ্জের ছাতকের গোবিন্দগঞ্জে ছাত্রলীগ ও অটোটেম্পু-অটোরিক্সা শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ, ইউপি চেয়ারম্যান, পথচারীসহ উভয় পক্ষের অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছেন।
রোববার (৬ নভেম্বর) বিকেলে গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্টে প্রায় দেড়ঘন্টা ব্যাপী এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছ। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ ৬ রাউন্ড টিয়ার সেল ও ৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে।
স্থানীয়রা জানান, বিকেলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মিছিল শেষে গোবিন্দগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্টে পথসভা করছিল। এ সময় একটি সিএনজি অটোরিক্সা সভাস্থলের মধ্য দিয়ে যেতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সাথে সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিকদের কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে ছাত্রলীগ ও অটোটেম্পু-অটোরিক্সা শ্রমিকদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বেধে যায়।
কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বন্ধ হয়ে পড়ে যান চলাচল। সড়কের উভয় পাশে শতাধিক যাত্রী ও মালবাহী গাড়ী আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অটোটেম্পু-অটোরিক্সা শ্রমিকদের দুটি অফিস কক্ষ ভাংচুর ও ষ্ট্যান্ডে থাকা অন্তত ৬৬টি অটো-টেম্পু ও অটো-রিক্সা ভাংচুর করে।
খবর পেয়ে ছাতক থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে আনতে ৬ রাউন্ড টিআরসেল ও ৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। প্রায় দেড় ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে দু’পক্ষের ছোঁড়া ইট-পাটকেলে পুলিশ, ইউপি চেয়ারম্যান, পথচারীসহ উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে। সংঘর্ষে গুরুতর আহত ছাত্রলীগের আবুল কাসেম শাহীন, দ্বীনুল ইসলাম শ্যামল, শ্রমিক ইমামুল হক, সদর উদ্দিন, লিটন, শফিক, সাকিব, শাকিল, সিরাজুল, সদরুল, বিরহাম, ইকরাম, আবিদ, তারেক, জুনেদ, রাইম আলী, নুরুল আমিনসহ ২০ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত ছাতক থানার এসআই সোহেল রানা, কনষ্টেবল মাহফুজ, সুমন পাল, ইউপি চেয়ারম্যান আখলাকুর রহমান, যুবলীগ নেতা ওবায়দুর রউফ বাবলু, ছাত্রলীগ নেতা তাজাম্মুল হক রিপন, রাকিব উদ্দিন, আল-আমিন, নাজমুল হোসেন, আজাহার, এসকে মাহিন, পাবেল, জিলানী, সালমান, সাজু, মাহবুব, বাবলুর রহমান, রাসেল আহমদ, লিটন, জনি, উজ্জল, নজরুল, সেলিম, মিলাদ, মোতাহার, সুমন মিয়া, শ্রমিক সাব্বির, এনামুল হক, নুরুল হক, আনসার, আহমদ আলীসহ আহতদের ছাতক এবং কৈতক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশেক সুজা মামুন জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
গোবিন্দগঞ্জ অটো-টেম্পু ষ্ট্যান্ডের সভাপতি আফতাব উদ্দিন জানান, পূর্ব পরিকল্পিভাবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ফখর উদ্দিনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নামধারীরা মিছিল সহকারে ষ্ট্যান্ডে এসে হামলা করে তাদের দুটি কার্যালয়, প্রধান মন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ অন্তত ৭০টি গাড়ি ভাংচুর করেছে। তাদের হামলায় ও আকষ্মিক তান্ডবে ষ্ট্যান্ডে থাকা ৩০ জন অটো-টেম্পু শ্রমিক আহত হয়েছে। অফিসের দানবাক্স ও একটি গাড়িতে থাকা প্রাণ কোম্পানীর মালামাল লুট করে নেয় হামলাকারীরা।
জেলা ছাত্রলীগের মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল গাফফার ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনজুর আলম জানান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজসহ সিলেটের তিন নেতাকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল বের করা হয়। মিছিল শেষে ষ্ট্যান্ডে পথ সভা করতে গেলে সভা স্থানে এক শ্রমিক তার গাড়ি ঢুকিয়ে প্রতিবন্ধকতা সুষ্টি করলে শ্রমিকদের সাথে কথা কাটাকাটি হয় ছাত্রলীগ কর্মীদের। এ ঘটনায় শ্রমিকরা ছাত্রলীগের উপর হামলা করলে ছাত্রলীগের সাথে তাদের সংঘর্ষ ঘটে। প্রধান মন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ছবি তারা নিজেরাই ভাংচুর করে ছাত্রলীগের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে।