হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক ‘পালকি’
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ নভেম্বর ২০১৬, ৬:১১ অপরাহ্ণ
তোফায়েল আহমেদ পাপ্পু:
আধুনিক প্রযুক্তির যানবাহনের যুগে হারিয়ে গেছে হাজার বছরের ঐতিহ্য ‘পালকি’। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য পালকি এখন আর দেখা যায় না। কয়েক বছর আগে গ্রামের বিয়ের বর-বধুকে বাহনের অন্যতম বাহন ছিল এই পালকি। পালকির সঙ্গে মিশে ছিল মধুময় এক স্বপ্ন। কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছুয়াঁয় কত কিছু পাল্টায়। পাল্টায় সংস্কৃতি, সভ্যতা। সেই সঙ্গে বদলে যায় মানুষের জীবনধারা। এ পরিবর্তনের রেশ ধরেই হারিয়ে যায় সংস্কৃতির সুপরিচিত অনেক পুরনো ঐতিহ্য। এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের মধ্যে পালকি অন্যতম।
পালকি চলে, পালকি চলে, গগনতলে আগুন জ্বলে তাছাড়া আরো সুন্দর ছন্দবদ্ধ কথা তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে পালকি আমাদের দেশের জাতি, ধর্ম, বর্ণ সবার কাছে সমান পছন্দনীয় ছিলো। এটি আমাদের দেশের হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য। পালকি নিয়ে লেখা হয়েছে গান, ছড়াসহ কতো শত কবিতা। ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত থেকে শুরু করে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অনেক কবি পালকি নিয়ে লিখেছেন।
পালকির কথা মনে হলে এখনও গা শিউরে ওঠে অনেকের। বিয়ের আগে কনেপক্ষের প্রথম দাবি ছিল পালকি। গান ভালো না হলে মেয়ে যাবে না ওই বাড়িতে। ওই পালকি আজ স্মৃতির অন্তরালে প্রায়। ওই পালকিই এক সময় বর-কনের একমাত্র বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কালের বিবর্তনে এখন আর গ্রামগঞ্জে পালকির ব্যবহার নেই বললেই চলে। পালকি বর্তমান প্রজন্মের কাছে কাল্পনিক বা রূপকথার কাহিনীর মতোই অনেকটা। যেখানে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি বা গাড়ি চলাচলের কোনো ব্যবস্থাই নেইথ এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন পালকি দেখা যাবে কি-না সন্দেহ। সেকালে পালকি ছাড়া বিয়ের বর ও কনের নেওয়ার জন্য বিকল্প কোনো বাহনের কথা ভাবাই যেত না। কখনওবা জোড়া পালকিতে বর-কনেকে আলাদা বহন করা হতো।
আধুনিক এবং যান্ত্রিক সভ্যতার এ যুগে ওই সুর এখন আর নেই। যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পালকি এখন বিলুপ্তির পথে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পালকি ছেড়ে এখন নামি-দামি গাড়ি নানা রঙের ফুল দিয়ে সাজিয়ে বর-কনের বাহন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী পালকি আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি অংশ। পালকি হয়তো একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। হয়তোবা পেশা বদলাবে পালকির বাহক বেয়ারাদের। আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির ইতিহাস থেকে পালকি হয়তো হারাবে না কোনোদিন। কারণ পালকিই তো প্রথম এবং ভ্রাম্যমাণ বাসর।