সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ নভেম্বর ২০১৬, ১২:২০ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেট জেলা পরিষদের দিকে চোখ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির। এ নির্বাচনকে অনেকটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ চাচ্ছে ক্ষমতা ধরে রাখতে। বর্তমানে যিনি জেলা পরিষদের প্রশাসক রয়েছেন তিনি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। আগের প্রশাসক বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আবদুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ানের মৃত্যুর পর তাকে প্রশাসক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তবে, বিএনপির হিসেব ভিন্ন। বিএনপি নেতারা মনে করছেন- বিগত ইউনিয়ন, পৌর ও উপজেলা নির্বাচনে বেশিরভাগ জয় বিএনপির ঘরেই এসেছিল। সুতরাং রাজনৈতিকভাবে একক প্রার্থী দিলে জয় পাওয়াটা তাদের জন্য কষ্টকর হবে না। ওদিকে, এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলের প্রবীণ ও তরুণ নেতৃত্বের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়েছে। তরুণরা চাচ্ছেন দলে যেমন তারা আধিপত্য রেখেছেন তেমনি ভোটের মাঠে প্রবীণদের সরিয়ে আধিপত্য বজায় রাখতে। ছাড় দিচ্ছেন না প্রবীণরা। এ কারণে বিশেষ করে চেয়ারম্যান পদে সমর্থনের জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে কেন্দ্রের দিকে। ডিসেম্বরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যে সিলেটে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সিলেট জেলার বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রার্থীদের তালিকা প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে। প্রার্থীদের ঘোষণার খবর আসছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে তুমুল প্রচারণা। নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যে জেলা পরিষদকে ১৫টি ওয়ার্ডে ভাগ করার কাজ শেষ হয়েছে। ওয়ার্ডের সীমানা চূড়ান্ত করে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনে। ২১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা পরিষদ নির্বাচনে একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত আসনে ৫ জন মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবেন। সিলেট জেলা পরিষদ সিটি করপোরেশন, ১৩টি উপজেলা, ৪টি পৌরসভা ও ১০৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। সিলেট জেলা পরিষদের ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৪৬৭ জন। জেলা পরিষদ নির্বাচন নির্দলীয় হলেও প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন দেবে রাজনৈতিক দল। এ কারণে নির্বাচনে রাজনৈতিকভাবে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। এর বাইরেও আছেন বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা। তারা কয়েক মাস ধরে স্বতন্ত্র অবস্থান থেকে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলার ১০৫টি ইউনিয়নে তাদের পক্ষে প্রচারণাপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। কয়েকজন ইউপি মেম্বার গতকাল জানিয়েছেন, প্রতিদিনই তাদের কাছে ভোট চেয়ে ফোন আসছে। অনেকেই ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করছেন। তবে চেয়ারম্যান প্রার্থীর চেয়ে সদস্য পদের প্রার্থীরা বেশি যোগাযোগ করছেন বলে জানান তারা। তারা জানান, সদস্য পদে শাসকদল আওয়ামী লীগেই প্রার্থী বেশি। বিএনপিতে কম প্রার্থী থাকলেও জাতীয় পার্টি থেকে সদস্য পদে প্রার্থীদের সংখ্যা খুবই কম। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগেই সবচেয়ে বেশি প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে ইতিমধ্যে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করে মাঠে নেমেছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বর্তমান প্রশাসক অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান। তিনি সরকারি আদেশে প্রশাসক হলেও গোটা জেলার ভোটের মাঠে এখনও শক্ত অবস্থান গড়তে পারেননি। নিজেও বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন। তবে, আওয়ামী লীগের কাছে তিনি অনেকটা সিনিয়র ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। বেশ কয়েক মাস ধরে নিজের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আনম শফিকুল হক। তিনি মাঝখানে অসুস্থ থাকলেও বর্তমানে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আর ত্যাগী নেতা হিসেবে শফিকুল হকের নাম রয়েছে। আওয়ামী লীগের বর্তমান সময়ে তিনি ব্যাকফুটে চলে গেলেও দলের কাছে এবার সমর্থন চাইবেন। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগে এই মুহূর্তে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি জেলার সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী। গোটা জেলায় তৃণমূল পর্যন্ত তার অবস্থান সুদৃঢ়। বিগত সংসদ নির্বাচনে দলের জন্য বিসর্জন দিয়েছিলেন নিজের সংসদীয় আসন সিলেট-২। এরপর থেকে জেলার সাধারণ সম্পাদক হয়েই দায়িত্ব পালন করছেন। পূর্বের প্রশাসক আবদুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান ও বর্তমান প্রশাসক অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমানের কাঁধে কাঁধ রেখে সহযোগিতা করে আসছেন। কিন্তু এখনও তিনি নিজের প্রার্থিতার জানান দেননি। আর দেবেন কী না- সেটি নিয়ে চলছে ধূম্রজাল। শফিকুর রহমান চৌধুরী সব সময় দলের সিদ্ধান্তে অটল। দল যখন যে দায়িত্ব দেয় সেটি তিনি পালন করেন। আর বাড়তি চাহিদাও তিনি কখনও প্রকাশ করেননি। এদের বাইরে তালিকায় আরো রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ত্যাগী নেতা মাসুক উদ্দিন আহমদ। এছাড়া চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা শাহ ফরিদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন লালার নাম শোনা যাচ্ছে। এরা অনেকেই তরুণ নেতৃত্ব। তাদের হাত ধরেই বর্তমানে সিলেটে আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত হচ্ছে। এ কারণে তারাও চেয়ারম্যান পদের জন্য লবিং চালাচ্ছেন। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমদ গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সিলেটে আওয়ামী লীগ থেকে কে হবেন চেয়ারম্যান প্রার্থী সেটি নির্ধারণ করবে হাইকমান্ড। কেন্দ্র থেকে যাকেই প্রার্থী দেয়া হবে তার পক্ষে সবাই এক সঙ্গে কাজ করবে। পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডেও তারা একক প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন দিতে পারেন বলে জানান তিনি। আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিতে প্রার্থী তালিকা অতটা দীর্ঘ নেয়। এ পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদে তিনজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এমএ হক, জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম ও সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের নাম। এমএ হক দলের ত্যাগী নেতা। বিএনপির দুর্দিনে কাণ্ডারি হয়ে কাজ করেছেন। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট জেলার তরুণ নেতৃত্বের সঙ্গে তিনি ভালোভাবে পরিচিত নন। এরপরও দল তার পক্ষে কাজ করবে বলে মনে করছেন সিলেট বিএনপির সিনিয়র নেতারা। প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম ও সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ। এর মধ্যে আলী আহমদের হাত ধরে সিলেটের ১৩ উপজেলায় বিএনপি নতুনভাবে পুনর্গঠন হয়েছে। আর শামীম ও আলীর হাত ধরে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি প্রথম পর্যায়ে চমক দেখিয়েছে। বিএনপির তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে আলীর। গতকাল বিকালে আলী আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ছাড়া সিলেট বিএনপি কোনো সিদ্ধান্ত দেবে না। তবে, সিলেট বিএনপি প্রস্তুত। জয় ঘরে তোলার মতো সক্ষমতা রয়েছে বিএনপির। এর কারণ বিগত উপজেলা, পৌর ও ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদের প্রার্থীদের মধ্যে যারা বিজয়ী হয়েছেন তারা অনেকেই বিএনপি দলীয়। এ কারণে জেলা পরিষদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেবে বিএনপি। এদিকে, চেয়ারম্যান পদে জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জাপা’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ও সিলেট জেলার আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, জাপার কেন্দ্রীয় সদস্য আতাউর রহমান আতার নাম শোনা যাচ্ছে। এদিকে, স্বতন্ত্র হিসেবে চেয়ারম্যান পদে ইতিমধ্যে আলোচনায় এসেছেন এনামুল হক সর্দার।-মানবজমিন