সিলেটে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সম্পত্তি রক্ষায় ব্যবসায়ী খুন
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ অক্টোবর ২০১৬, ১১:০০ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটের মোগলাবাজারে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে খুন হলেন ব্যবসায়ী আখতার মিয়া। এ ঘটনায় মামলা হলেও প্রভাবশালী মহলের কারণে খুনিদের গ্রেফতার করতে পারছে না পুলিশ। উপরন্তু মামলার বাদী পক্ষকে নানাভাবে হয়রানি করে চলেছে আখতারের ঘাতকরা।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন নিহতের ভাই মন্তু মিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে মন্তু মিয়া জানান- সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার থানার রায়বান গ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও পুলিশ কর্মকর্তা আপ্তাবুর রহমান-এর সন্তানেরা সরকারি চাকরির সুবাদে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন।
তাই মন্তু মিয়া তাদের বাড়িঘর ও সহায় সম্পত্তির কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। প্রতিবেশী প্রভাবশালী সুমন আহমদ খলিল ও তার পরিবার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আপ্তাবুর রহমানের বাড়ি ও সহায় সম্পত্তি জবরদখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে।
কেয়ারটেকার হওয়ায় মন্তু মিয়া ওই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সম্পত্তি রক্ষায় আদালতের আশ্রয় নেন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পক্ষে মন্তু মিয়া বাদী হয়ে সিলেটের যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে সুমনের পিতা মতিউর রহমানসহ কয়েকজনকে বিবাদী করে একটি বাটোয়ারা মোকদ্দমা (নং-৭৩/২০১৬) দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর সন্ত্রাসী সুমন ও তার পরিবার আক্রোশান্বিত হয়ে এ বছরের ১৫ মার্চ কেয়ারটেকার মন্তু মিয়াকে গুরুতর আহত করে।
এ ঘটনায় মোগলাবাজার থানায় মামলা (জিআর ৩৭/২০১৬ ) করেন মন্তু মিয়া। মামলার পর সুমনরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। সুমন তার ব্যক্তিগত কর্মচারী আলম মিয়াকে বাদী করিয়ে মন্তু মিয়া ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আপ্তাবুর রহমানের ছেলে আফজাল রহমানকে আসামি করে পাল্টা একটি মামলা করান। এ মামলায় মন্তুসহ আসামিরা জামিনে থাকলে চেষ্টা করে তাদের জামিন বাতিল করাতে পারেনি সুমন। উল্টো সুমনদের বিরুদ্ধে আদালতে ১০৭ ধারায় প্রসিকিউশন ড্র হয়েছে।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সুমন ও তার সহযোগীরা মন্তু মিয়াকে খুন করার পরিকল্পনা করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর মন্তু মিয়ার বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এসময় মন্তু মিয়াকে বাড়িতে না পেয়ে সমন ও তার সহযোগিরা মন্তু মিয়ার ভাই আখতারকে খুন করে বাড়িতে লুটপাট চালায়। এ ঘটনায় নিহত আখতারের বিধবা ছাবিনা বেগম বাদী হয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর এসএমপি’র মোগলাবাজার থানায় সুমনসহ ১২ জনকে এজাহারভুক্ত করে একটি হত্যামামলা (নং-০৭(৯)১৬) দায়ের করেন।
মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হচ্ছে- সিলেট মেট্রোপলিটন মোগলাবাজার থানার রায়বান গ্রামের মতিউর রহমানের পুত্র সুমন আহমদ খলিল, একই গ্রামের মৃত মদরিছ আলীর পুত্র আনহার মিয়া ও আছর মিয়া, তফুর আলীর পুত্র শফিক মিয়া ও ময়নুল মিয়া, মৃত আখলুছ মিয়ার পুত্র সাব উদ্দিন, মস্তাব মিয়ার পুত্র মনসুর, ছুফি মিয়ার পুত্র বোরহান, রফিক মিয়ার পুত্র নাজিম উদ্দিন,তফুর আলীর পুত্র রফিক মিয়া,মৃত আব্দুস ছত্তারের পুত্র নেছার ও মৃত রইছ মিয়ার পুত্র পংকি মিয়া।
মামলা দায়েরের পর ঘাতক সুমন ও তার খুনিদের রক্ষায় একটি প্রভাবশালী মহল নানা অপতৎপরতা শুরু করে। মামলা প্রভাবিত করতে তারা বিভিন্ন ভুয়া ব্যানারে মানববন্ধন করে। আখতারের ঘাতকদের রক্ষায় প্রভাবশালী মহলের এহেন অপতৎপরতা নিন্দনীয় দাবি করে মন্তু মিয়া তার ভাইয়ের খুনি সুমন ও তার সহযোগীদের অবিলম্বে গেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এ ব্যাপারে তিনি বর্তমান সরকার ও প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ ও দ্রুততর পদক্ষেপ কামনা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- নিহতের স্ত্রী ছাবিনা বেগম, আফজল রহমান, মোবাশ্বির আলী, মোক্তার মিয়া, হেলাল আহমদ, ফাহিম আহমদ, সেলিনা বেগম, আজমল হোসেন, ফয়েজ আহমদ, সুমন আহমদ, রাহেল আহমদ, জয়নাল আবেদীন, ফখর আহমদ প্রমুখ।