হবিগঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আয়া দিয়ে চলছে রোগীদের চিকিৎসা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ অক্টোবর ২০১৬, ৩:১৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার ৭ ইউনিয়নের প্রায় দুই লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির বেহাল দশা। আয়া দিয়ে চলছে রোগীদের চিকিৎসা সেবা। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সরকারি পদক্ষেপও কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। আয়া মুক্তা তার কাজ বাদ দিয়ে নিরবধি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। যখন যা প্রয়োজন সবই তিনি করছেন। দায়িত্বে থাকা নার্স মধুমিতা জানালেন, মুক্তা আয়ার পদে চাকরি করলেও সে শিক্ষিত মেয়ে, ইন্টারমেডিয়েট পাস। এ সম্পর্কে তার ভালো ধারণা আছে। সে চিকিৎসাও দিতে পারে। পেছন থেকে আয়া মুক্তা বলে উঠেন, আপনারা কি সাংবাদিক, তখনই কথা বলা বন্ধ করে দেন নার্স মধুমিতা। জনবল সংকট ও যন্ত্রপাতি বিকলসহ নানা কারণে চিকিৎসা কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির। দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবৎ এক্সরে ও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনসহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ে থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ফলে দুই লাখ অধ্যুষিত উপজেলাবাসী কাক্সিক্ষত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত। ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করতে ২০১০ সালের ২৭ মে তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ দেওয়ান ফরিদ গাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি তিন তলা ভবন উদ্বোধন করেন। ভবন উদ্বোধনের ছয় বছর পর ৩০ শয্যার জনবল সংকটের মধ্য দিয়েই চলতি বছরের ২২ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের প্রশাসনিক অনুমোদন হয়। ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালুর অনুমোদনের দুই মাস পরও ৩১ শয্যার নয় জনের পদে চারজন ডাক্তার, পনের জন নার্সের পদে ২ জন। ৫ বছর ধরে সনোলজিস্ট, মেডিকেল টেকনেশিয়ান ও ফার্মাসিস্ট পদে লোক শূন্য। বিকল এক্সরে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রামসহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি এখনও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। সরেজমিন বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নিচ তলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দরজা বন্ধ, খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি বাইরে প্রোগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত। আর আবাসিক মেডিকেল অফিসার তিনি তার নির্ধারিত রুমে বসে দাপ্তরিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে বহির্বিভাগের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে নারী ও পুরুষ রোগীরা একজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টের কাছে টিকিট সংগ্রহ করে নতুন ভবনে বসা দুই ডাক্তারের কাছে বিষয়ভিত্তিক অনুযায়ী যাচ্ছেন। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মিরপুর এলাকা থেকে আসা আনজব উল্লাহ নামের এক বৃদ্ধ জানান, মহিলা ও পুরুষের আলাদা কাউন্টার থাকলেও একজন দিয়ে টিকিট দেয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। ডিউটি রুমে বসা নার্স মধুমিতার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি ১৬ বছর ধরে এখানে কর্মরত। এখানে নার্সরা আসলে এক মাসও ঠিকে না, চলে যায়। দীর্ঘদিন যাবৎ দু’জন নার্স দিয়েই দুই ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। সকালের শিফটে একজন, বিকালের শিফটে শুধু আয়া দিয়ে, রাতের শিফটে আরেকজন দিয়েই চলছে পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের চিকিৎসা কার্যক্রম। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বাবুল কুমার দাশ জানান, হাসপাতালের ৫০ শয্যার কার্যক্রমের অনুমতি পেয়ে ইতিমধ্যে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করেছি। প্রতিদিন ৪৫-৫০ জন ভর্তি রোগীদের সেবা দিয়ে আসছি। দীর্ঘদিন যাবৎ জনবল সংকট এবং এক্সরে মেশিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আয়া দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রমের বিষয়ে তিনি জানান, নার্স সংকটের কারণে কদাচিৎ এ রকম ঘটতে পারে। আমরা পরিস্থিতির শিকার।