অপরাধীদের আখড়া শত বছরের পুরনো সিলেটের কীন ব্রিজ, আড়ালে থাকেন গডফাদাররা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ অক্টোবর ২০১৬, ৪:১১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটের ঐতিহাসিক কীন ব্রিজ ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। এখন আর আগের মতো ক্বীন ব্রিজের জৌলুশ নেই। ঝকঝকে ত্বকত্বকে এই ব্রিজের সৌন্দর্য মলিন হয়ে যাচ্ছে। ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত শতাধিক বছরের পুরনো এ ব্রিজটি ইতিহাসের অনেক ঘটনার সাক্ষী। এখন যানবাহন উঠলে ব্রিজের মাঝখানে যাওয়ার পর ব্রিজটি দুরুদুরু করে কাঁপে। এক সময় এ ব্রিজকে বাদ দিয়ে সিলেট নগরীকে কল্পনা করা যেত না। কালের পরিক্রমায় নগরীতে সুরমা নদীর ওপর আরও দুটি ব্রিজ স্থাপিত হয়েছে। শাহজালাল ব্রিজ ও কাজির বাজার ব্রিজ। কাজির বাজার ব্রিজটি এখন ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের জন্য একটি মিনি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে লাভ করেছে। আগে যেভাবে নারী-পুরুষ দল বেঁধে সুযোগ পেলেই ক্বীন ব্রিজে বেড়াতে আসত। পর্যটকদের দর্শনীয় স্থানের সঙ্গে কীন ব্রিজকে উল্লেখ করা হতো। এখন এ আকর্ষণে ভাটা পড়েছে। নিরাপত্তার আশংকায় পর্যটকরা এটিকে এড়িয়ে চলেন। কেননা ক্বীন ব্রিজে গেলে আচমকা কোন ঝামেলায় পড়তে হয় এ আতংক সবার। হাইরাইজ ভবন ও বিশাল অট্টালিকার ভিড়ে নগরীর বাসিন্দা অনেকে সুরমা পাড়ে কীন ব্রিজের এখানে এক চিলতে আনন্দের জন্য ভ্রমণে এলেও সন্ধ্যা নামার পর নিরাপদ বোধ করেন না। কারণ সন্ধ্যার পর পরই নেশাখোর, পকেটমার, ছিনতাইকারীদের উপদ্রব বেড়ে যায়। এমনকি মাদক সেবনকারীরা প্রকাশ্যে মাদক সেবন করে মাতলামি শুরু করে। নিরীহ পথচারীদের ওপর আক্রমণ করে বসে তারা। পশ্চিম আকাশে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর অবাঞ্ছিত নারী-পুরুষের উৎপাত বেড়ে যায়। তারা যেন অন্ধকার নামার অপেক্ষায় থাকে। কতোয়ালি মডেল থানার মাত্র কয়েকশ’ গজ দূরে এসব অপকর্ম চললেও পুলিশ থাকে নিশ্চুপ। কীন ব্রিজ ঘেঁষে সুরমা তীরে যে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছিল তা ম্লান হয়ে যাচ্ছ। সুযোগে এটি চুরি হয়ে যাচ্ছে। দুষ্কৃতকারীরা সার্কিট হাউসের সামনে থেকে বন বিভাগের অফিস পর্যন্ত রেলিংয়ের অ্যালুমিনিয়ামের পাইপ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। দুর্বৃত্তরা মূল্যবান এসব পাইপ চুরি করে ভাঙ্গারি দোকানে কেজিদরে বিক্রি করছে। ক্বীন ব্রিজের দক্ষিণ পাড়ের অবস্থা আরও নাজুক। এখানে কেউ যেতে চায় না। মদ, গাঁজা, হেরোইন, জুয়া, তিনতাসের খেলা, তীর খেলাসহ অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। ক্বীন ব্রিজ এলাকাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি অপরাধী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট সদস্যরাই সুরমা তীরে রামরাজত্ব কায়েম করেছে। আড়ালে থাকেন গডফাদাররা। রাতে ও ভোরে যাত্রী সাধারণ ক্বীন ব্রিজ দিয়ে যাতায়াতের সময় আতংকিত থাকেন। সূত্র জানায়, অপরাধ প্রবণতা বাড়ার কারণে পুলিশকে দায়ী করা হয়। দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় ক্বীন ব্রিজের অপরাধ নিয়ে দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি আইনশৃংখলা কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতাকে দায়ী করে বক্তব্য দেয়ার পর চিত্র পাল্টে যায়। একপর্যায়ে তিনি বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় সিটি কর্পোরেশনের এক কাউন্সিলরও ওসির পক্ষাবলম্বন করেন। এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, লাইটপোস্ট নষ্ট হলে আমরা নতুন লাইট দিয়ে দেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চুরি হওয়ার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব পুলিশের।