সুনামগঞ্জে কিশোরী ধর্ষণ : পায়ে ধরে ইজ্জত ভিক্ষা চাইলেও রেহাই মিলেনি !
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ১০:৪১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
বসতবাড়ির দরজার সামনে থেকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে পিতৃহীন ১৪ বছরের কিশোরীকে গ্রামের প্রভাবশালী ও দাঙ্গাবাজ পরিবারের এক যুবক কর্তৃক ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের সুন্দর পাহাড়ি গ্রামের প্রভাবশালী গ্রাম্য মাতব্বর ও দাঙ্গাবাজ খ্যাত কাঁচা মিয়া ওরফে কাঁচুর বখাটে ছেলে আবদুল জলিল (২৩) মঙ্গলবার এশার নামাজের পর পরই ওই গ্রামের পিতৃহীন দরিদ্র পরিবারে কিশোরীকে বাড়ির দরজার সামনে থেকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে ওই কিশোরী ও তার পরিবারের লোকজন অভিযোগ তুলেছেন। ভিকটিম ও তার পরিবারের লোকজন এবং সালিশে থাকা গ্রামবাসী সুত্রে জানা যায়, উপজেলার সুন্দর পাহাড়ি গ্রামের কাঁচুর বখাটে ছেলে আবদুল জলিল মঙ্গলবার এশার নামাজের পর গ্রামের পিতৃহীন ১৪ বছরের কিশোরীকে বাড়ির দরজার সামনে থেকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে গ্রামের পেছনে ধর্ষণ করে। ওই কিশোরী জলিলের পায়ে ধরে বার বার ইজ্জত ভিক্ষা চাইলেও টলেনি নরপশুর বিবেক!। ধর্ষণের পর ফেলে রেখে জলিল চলে আসলে ধর্ষিতা জলিলের বাড়িতে গিয়ে ধর্ষণকারীর মায়ের কাছে ঘটনা খুলে বললে রাতেই গ্রামের রেজ্জাকের বাড়িতে সালিশ বৈঠক বসে। সালিশে টাকা পয়সা খরচ করে বিয়ের বয়স হলে কিশোরীকে অনত্র বিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে সালিশীগণ উঠে যান। এ বিষয়ে থানা পুলিশ কিংবা অন্য কাউকে না জানানোর জন্য হুমকি স্বরুপ গ্রামছাড়া করার আল্টিমেটাম দিয়ে যান স্বয়ং ধর্ষণকারীর পিতা। এদিকে গ্রাম্য সালিশের নামে ধর্ষিতা কিশোরীকে অনত্র বিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যর্থ হবার পর চিকিৎসা ও আইনি সহযোগীতা নিতে বাঁধা দেয়ার জন্য গ্রামের সড়কে ও কিশোরীর বাড়ির চারপাশে কাঁচুর লোকজন রাত থেকে বুধবার দিনব্যাপী পাহাড়া বসায়। এক পর্যায়ে গ্রামের কিছু লোকের সহযোগীতায় বুধবার দুপুরে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে ওই কিশোরী অন্যের মুঠোফোনে বেলা ১টার দিকে এ স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের ধর্ষণের ঘটনাটি জানিয়ে গণমাধ্যমের সহযোগীতায় চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা পেতে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে, ভাই আমারে কাঁচু মিয়া ও তার পুলা (ছেলে) পাইলে মাইরা ফালাইব’ আমারে বাঁচান, আমি পলাইয়া আইছি জানলে বাড়িত বিধবা মা ও ভাইদের মারধর করতে পারে তারা।’ রাতে সালিশে রেজ্জাকের বাড়িতে কাঁচু, তার সহোদর জয়নাল, মোস্তাক, তাদের আরো কয়েক সহযোগীরাই উপস্থিত ছিলেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। অভিযুক্ত’র পিতা কাঁচুর সাথে বুধবার বেলা দু’টার দিকে মুটোফোনে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনা ষড়যন্ত্র, আমার ছেলে মেয়েটার ডেনাত (হাতে ) ধরে টান দিছিল’ রাইত (রাতে) আমরা বইছিলাম (বসছিলাম) ঘটনা সত্য না। এছাড়াও তিনি অন্যান্য সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার এক ছেলে রহিম ফাসির দন্ডপ্রাপ্ত হিসাবে কারাগারে আটক’ “আমার মাথা ঠিক নাই, এইডাত যদি পারইন তাইলে আমরারে বাছাইন”। থানার ওসি শ্রী নন্দন কান্দি ধরের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বুধবার বলেন- ভিকটিম থানায় এসে বেলা আড়াইটায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে, পুলিশী তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তরা যতবড় প্রভাবশালী হোক না কেন ভিকটিমের চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা দু’টোই থানা পুলিশ গুরুত্ব সহকারে দেখবে।’ থানার তদন্তকারী অফিসার এসআই (উপ-পরিদর্শক) একেএম জালাল উদ্দিন বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে বিকেলে ভিকটিম আসলে তাকে গালি -গালাজ ও উল্টো শাসাতে থাকেন। সন্ধ্যার পর সুন্দর পাহাড়ি গ্রামে ঘটনা তদন্তের নামে অভিযুক্তদের পিতা কাঁচুর সাথে যোগসাজস করে ভিকটিমের মা- ও ভাইদের মামলা করলে হয়রানী বাড়বে বলে বিষয়টি আপোসের জন্য চাঁপ সৃষ্টি করেন। এ ব্যাপারে এসআই জালালের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি সন্ধ্যা ৭টায় বলেন, না এটা আমার কিছু না, মেয়ের বয়স ১৪, মামলা নেয়ার কোন সুযোগ নাই, তাছাড়া মেয়ের মা-ভাইদের আমি ভয়-ভীতি দেখাইনি , তারাই তো মামলা করতে ইছ্ছুক না। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।