আমরা ড্রাইভার নই, ড্রাইভার সাহেব
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ৮:৫৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ৩ টায় দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশিদ চত্বরে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী।
তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, চালকদের নিজেদের ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালকরা একা দায়িত্ব নিতে পারেন না। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলেই চালকদেরকে ঘাতক ও খুনি বলা হয়। সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে রাস্তা থেকে অবৈধ হাট উচ্ছেদ করতে হবে। ফুটপাত উচ্ছেদ করতে হবে। চালককে একা দায়ী করা চলবে না। তিনি বলেন, আমরা ড্রাইভার নই, আমরা ড্রাইভার সাহেব। কারণ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ কেউই ড্রাইভার ছাড়া চলতে পারেন না। মনে রাখবেন আমাদের ড্রাইভার সাহেবেরা সামনের সিটে বসেই গাড়ি চালান। ড্রাইভার ছাড়া গাড়ির চাকা ঘুরে না। ড্রাইভারই দেশের উন্নয়ন উন্নতির সিঁড়ি। চালকরা একদিন গাড়ি না চালালে উপর মহলের মানুষ আটকা পড়বেন। ডিসি, ইউএনওরাও অফিস করতে যে গাড়ি ব্যবহার করেন তা কিন্তু আমার চালক ছাড়া চলে না। সুতরাং গাড়ি না চললে দেশ চলবে না।
সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ ঐক্য পরিষদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমদের ফলিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়ার পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওসমান আলী আরো বলেন, নির্বাচন ইস্যুতে ৯০ দিন হরতাল অবরোধ করে দেশকে অচল করে দেওয়ার পাঁয়তারা হয়েছিল। এই পরিবহন শ্রমিকরাই ৯০ দিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেশকে সচল রেখে ছিলেন। তখন অনেক শ্রমিক মারা গেছেন। অনেকে পেট্রোল বোমার ককটেলের আঘাতে রক্তাক্ত হতে হয়েছে। তবুও দেশের জন্য সরকারের জন্য শ্রমিকরা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামেন। তখন যদি চালকরা রাস্তায় না নামতেন তাহলে সরকারের অস্তিত্ব থাকত না। আজ এই সরকারের পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ কর্তৃক চালকরা নির্যাতিত হচ্ছেন। চালকদের প্রতি নির্যাতন বন্ধ করুন।
তিনি বলেন, চালকরা যখন গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন, তখন বাড়ি ফেরার নিশ্চয়তা থাকে না। শ্রমিকরা রাজনীতি করে না, পেটের জন্য গাড়ি চালায়। সরকার এত পরিবর্তন ঘটায় কিন্তু শ্রমিকদের পরিবর্তন ঘটে না। গাড়িতে মিথ্যা মামলা দিয়ে চালকদের হয়রানি করা হয়। শরীরে হাত তোলা হয়। সবই অসহায় শ্রমিক নীরবে সহ্য করে। ৫০ বছর আগের রেকারে টেনে হেঁচড়ে গাড়ি তোলা হয়। সব বদলায় ৫০ বছর আগে রেকার বদলানো হয় না। তিনি বলেন, জেনে রাখবেন অচল গাড়ির জন্য রেকার, সচল গাড়ির জন্য নয়। গাড়ি ত্রুটির কারণে মামলা হলে পুলিশ রেকার লাগাতে চাইলে বলে দেবেন থানায় আমরা নিজেরা গাড়ি নিয়ে যাব। সচল গাড়ি রেকারে তুলতে দিবেন না। পুলিশ তা না মানলে ওই স্থানেই সড়ক অবরোধ করবেন।
তিনি চালকদের উদ্দেশ্যে বলেন, দ্রুত গাড়ি চালাবেন না, অযথা গাড়ি ওভারটেক করবেন না। মনে সাহস রেখে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। গাড়ি নিয়ে কোনো চালক সমস্যায় পড়লে তাকে ফেলে চলে যাবেন না। তার গাড়ির ত্রুটি সারানোর জন্য সার্বিক সহযোগিতা করবেন।
হাইওয়ে পুলিশের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, হাইওয়েতে লাগামহীন ডাকাতির ঘটনা ঘটে। হাইওয়ে পুলিশ তো অপরাধ দমনের জন্য। তা হলে কেন অপরাধ দমন হয় না? তাহলে কী ডাকাতের সাথে হাইওয়ে পুলিশের সখ্যতা রয়েছে। সখ্যতা যদি নাই বা থাকে তাহলে ডাকাতি কেন বন্ধ হয় না। তিনি বলেন, সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ৬ দফা দাবি না মানলে প্রয়োজনে সারা বাংলাদেশে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
সভাপতির বক্তব্যে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক ৬ দফা দাবির প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাব গুলো হচ্ছে- দক্ষিণ সুরমা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংস্কার, অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদসহ ৪ দফা দাবি বাস্তবায়ন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক সিলেটের সকল পৌরসভায় যানবাহন থেকে পৌর ট্যাক্স আদায় বন্ধ করা, সিলেটের সকল সেতুতে অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধ করা, ট্রাফিক হয়রানি বন্ধ করা, কারণে অকারণে রিকুইজিশন বন্ধ করা, রেকারিং এর নামে বাণিজ্য বন্ধ করা, রিকুইজিশন কালে গাড়ীর প্রয়োজনীয় জ্বালানী ও চালকের খোরাকিসহ রাতে থাকার জায়গা দেয়া, মামলায় অতিরিক্ত জরিমানা বন্ধ করা, ট্রাফিক অফিসে মালিক শ্রমিকদের বসার ব্যবস্থা করে দেয়া, সিলেটের সকল ভাঙ্গা রাস্তা সংস্কার করা, ব্যাটারি চালিত রিকশা, অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা, জাফলং, বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারি চালু করা, প্রতিশ্রুতি মোতাবেক অবিলম্বে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুরু করা, অটোটেম্পু গাড়ির ডাম্পিং সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ইঞ্জিন চালিত রেজিস্ট্রেশন বিহীন ট্রলি দ্বারা মালামাল বন্ধ করা, হুমায়ুন রশিদ চত্বরে ইউনিক বাস কাউন্টারে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি গ্রেফতার করা।
সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক সজিব আলী। বিশেষ বক্তার বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দিলু মিয়া, জেলা পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিব উদ্দিন রকিব, ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি আব্দুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর, শ্রমিক নেতা রনু মিয়া মঈন, সুন্দর আলী খাঁন, আজাদ মিয়া, নিখিল বাবু, ইনসান আলী, মতছিল মিয়া, খলিলুর রহমান, আজাদ মিয়া, শাহজামাল, তেরা মিয়া প্রমুখ।
এ দিকে সকাল ১১টা থেকে হুমায়ুন রশিদ চত্বরে শ্রমিক ইউনিয়নে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মিছিল নিয়ে জড়ো হন। সমাবেশে কয়েক হাজার শ্রমিকের উপস্থিতি ঘটে।