জৈন্তাপুরে বসতঘরে আগুন দিয়ে প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ অক্টোবর ২০১৬, ১২:০২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটের জৈন্তাপুরে ৪০টি হত দরিদ্র পরিবারকে ভিটে-মাটি ছাড়া করে চা কোম্পানীকে জায়গা বুঝিয়ে দিল প্রশাসন। এসময় বসত ঘরে আগুন দিয়ে ও সৃজিত বাগান কেটে তছনছ করে দেয়া হয়। উচ্ছেদের পর থেকে সব কিছু হারিয়ে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে পরিবারগুলো।
সোমবার উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের বাউরী টিলার প্রায় ২৩ একর সরকারি ভূমির লীজ দাবিদার এম.আহমদ টি এন্ড ল্যান্ড কোম্পানীর লালাখাল চাবাগানের কাছে জায়গাটি হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্যোট।
সোমবার সকাল ১১টায় বাউরী টিলার লীজ গ্রহিতা এম.আহমদ টি এন্ড ল্যান্ড কোম্পানীর লালাখাল চা-বাগান কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ নিয়ে ভূমি উদ্ধারে নামে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। এসময় বসবাসকারীদের বসত ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এবং সৃজিত ফলজ ও বনজ বাগান কেটে দেয়া হয়।
ভূমিতে বসবাসকারীরা বাঁধা প্রদানের চেষ্টা করলে গ্রামবাসী ও প্রশাসন মুখোমুখি অবস্থান নেয়। একপর্যায় ইউপি চেয়ারম্যান শাহ-আলম চৌধুরী তোফায়েল, ইউপি সদস্য হাজির আলী, সমাজসেবী সুলতান আহমদ, আলতাফ হোসেন বেলাল ও গণমান্যদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। অসহায় গ্রামবাসী সরে পড়তে বাধ্য হন। তাদের চোখের সামনে বাড়িঘর পুড়তে থাকলেও অশ্র“সজল নয়নে চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলনা তাদের।
পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট শাহিদুল আলম এর উপস্থিতিতে ৪০টি হত দরিদ্র পরিবারের দখলে থাকা প্রায় ২৩ একর ভূমিতে এম.আহমদ টি এন্ড ল্যান্ড কোম্পানীর লালাখাল চা-বাগানের সাইনবোর্ড সাটানো হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার উত্তর ধীরেন্দ্র মহাপাত্র, জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সুহেল মাহমুদ, জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি সফিউল কবির, জৈন্তাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসার আব্দুর রহিম, লালাখাল চা-বাগানের ব্যবস্থাপক সৈয়দ মহি উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান, বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও বাগানের কর্মচারীরা।
এব্যাপারে চারিকাটা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম চৌধুরী তোফায়েল বলেন, এখানে ইতোপূর্বে লালাখাল চা-বাগান কর্তৃপক্ষ ভূমি বন্দেবস্ত গ্রহন করে। এক পর্যায়ে তারা রেন্ট পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় স্থানীয় জনসাধারণ সরকারী ভূমিতে বাগান সৃজন করে এবং ভূমি বন্দোবস্তের জন্য আবেদন করে।
তিনি জানান, বর্তমানে সৃজিত বাগান ধ্বংস হওয়ায় ৪০টি পরিবারে প্রায় ২কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন ভুমি হতে ফলজ ও বনজ সম্পদ এবং বাড়ী ঘরে অগ্নি সংযোগ না করে তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে দিলে হত। তাতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান কম হত। তিনি উপযুক্ত ক্ষতিপুরনের জন্য এম.আহমদ টি এন্ড ল্যান্ড কোম্পানীর কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
এম.আহমদ টি.এন্ড.ল্যান্ড কোম্পানীর সহকারী ব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান বলেন, বিরোপূর্ণ ভূমিটি লালাখাল চা বাগানের একটি অংশ। দীর্ঘ দিন হতে এলাকার লোকজন নানান ভাবে ভোগ দখল করে আসছিল। মৌখিক ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে একাধিক বার তাদেরকে সরে যাওয়ার জন্য বলা হলেও তারা দখল ত্যাগ করেনি। তাই আদালতের মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট এর উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভূমিটি এম.আহমদ টি এন্ড ল্যান্ড কোম্পানীর লালাখাল চা-বাগানের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসা হয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সুহেল মাহমুদ বলেন, জমিটি উদ্ধার করতে জেলা প্রশাসন হতে একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্যাট নিয়োগ করা হয় এবং উনার উপস্থতিতেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় ভূমির প্রকৃত লীজ গ্রহীতার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমি শুধু নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে পর্যবেক্ষন করেছি।
এবিষয়ে জেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট শাহিদুল আলম বলেন, ভূমির প্রকৃত মালিককে জায়গা সমঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।