কর্ণফুলী এখন খালে পরিণত হয়েছে -বনমন্ত্রী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ অক্টোবর ২০১৬, ৮:২৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত কর্ণফুলী নদী এখন ‘খালে’ পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব আয়োজিত গুণীজন, কৃতী সাংবাদিক ও মেধাবী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামবাসীর বন্দর নিয়ে যে অহংকার তা ক্রমে দুর্বল হয়ে আসছে। দেশ একটি বন্দরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকা উচিত নয়। কর্ণফুলী নদী এখন খালে পরিণত হয়েছে। যদিও পতেঙ্গা এখনো আকর্ষণীয় স্থান। অনেকেই সেখানে বেড়াতে যান শুনেছি।
মন্ত্রী বলেন, ছাত্রাবস্থায় স্কাউটসের জাম্বুরি করতে চট্টগ্রাম আসতাম। উল্লেখযোগ্য বন্ধু-বান্ধব ছিল চট্টগ্রামে। আপনারা (চট্টগ্রামবাসী) নির্বাচনে যত টাকা খরচ করেন আর কোথাও তেমনটি দেখিনি। এখানে নির্বাচন মানে অর্থের প্রতিযোগিতা।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম, সিলেট ও নোয়াখালীর মানুষের প্রশংসনীয় বৈশিষ্ট্য নিজেদের ভাষায় কথা বলা। চট্টগ্রাম সংগ্রামের সূতিকাগার, আন্দোলনের সূতিকাগার। এ দেশ সকলের। সূর্য সেনের কথা ছাত্রাবস্থায় অনেক বলেছি। এখনো আপনারা বলেন। আমি সড়ক পথে চট্টগ্রাম এসেছি। সড়কপথেই কক্সবাজার যাবো। ৪৮৬টি উপজেলা আমি সড়কপথে ভ্রমণ করেছিলাম।
মন্ত্রী চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবান শহরকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করে বলেন, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানের মতো পাহাড় দেশের আর কোথাও নেই। সিলেটে কিছু উঁচু টিলা ছিল। এ শহরগুলোর প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখা উচিত ছিল। আমি বলছি না এখনো হবে না।
ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মিঞা আবু মোহাম্মদ ফারুকী (মরণোত্তর), চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ট্রাস্টের ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন, উপমহাদেশের প্রখ্যাত বংশীবাদক ওস্তাদ ক্যাপ্টেন আজিজুল ইসলামকে গুণীজন সংবর্ধনা দেওয়া হয়। মিঞা আবু মোহাম্মদ ফারুকীর পক্ষে তার ছেলে খ্যাতিমান আলোকচিত্রী শোয়েব ফারুকী সংবর্ধনা স্মারক গ্রহণ করেন।
কৃতী সাংবাদিক হিসেবে সংবর্ধনা দেওয়া হয় দৈনিক নয়াবাংলার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহ আল ছগীর (মরণোত্তর), দৈনিক পূর্বদেশের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক ও দৈনিক পূর্বকোণের সাবেক বার্তা সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা নাসিরুদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সাবেক সভাপতি অঞ্জন কুমার সেন, দৈনিক সত্যবাণীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এসএম আতিকুর রহমান এবং দৈনিক আজাদীর সিনিয়র সম্পাদনা সহকারী মো. নূর সুলতান কুতুবীকে। আবদুল্লাহ আল ছগীরের পক্ষে সংবর্ধনা স্মারক নেন তার ছেলে এনায়েত উল্লাহ হিরু।
চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. রবিউল হোসেন বলেন, এ ধরনের স্বীকৃতির প্রয়োজন আছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে সামাজিক দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
ওস্তাদ ক্যাপ্টেন আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি পেশায় নাবিক ছিলাম। ছোটবেলা থেকে বাঁশির চর্চা করে আসছি। যেকোনো স্বীকৃতি আনন্দের, আমিও আনন্দিত। পরের প্রজন্মকে এ স্বীকৃতি উদ্বুদ্ধ করবে।
নাসিরুদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের প্রয়াত খ্যাতিমান সাংবাদিকদের ছবি প্রেসক্লাবে টাঙানোর এবং জীবনী গ্রন্থমালা প্রকাশের প্রস্তাব দেন।তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবকে সারা সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের দাবি জানান।
অঞ্জন কুমার সেন জাতীয় প্রেসক্লাবে বিভাগীয় প্রেসক্লাবের সঙ্গে আন্তঃসম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে জাতীয় মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানান।
তাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বনমন্ত্রী বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবে বিভাগীয় প্রতিনিধি থাকা প্রয়োজন, এটি জটিল বিষয়। আমি যখন নেতৃত্বে ছিলাম তার আগে থেকেই ঢাকার বাইরে যারা মফস্বলের সাংবাদিক তাদের থাকার ব্যবস্থা প্রেসক্লাবে থাকবে এমনটি আলোচিত হয়ে আসছিল। আগামী দিনে ৩১ তলা ভবন হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাড়তি আয় ও নির্মাণ ব্যয় আদায়ই লক্ষ্য।
ক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী। ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী ফরিদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী। গুণীজনদের পরিচিতি উপস্থাপন করেন ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী আবুল মনসুর, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক ইকবাল, সমাজসেবা ও আপ্যায়ন সম্পাদক মো. আইয়ুব আলী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলমগীর সবুজ।
অনুষ্ঠানে ২০১৫-১৬ সালে এসএসসি এবং এইচএসসিতে কৃতিত্ব অর্জনকারী ক্লাবের সদস্যদের ৩০ জন ছেলেমেয়েকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাদের হাতে স্মারক তুলে দেন প্রধান অতিথি।