এলাকার মানুষজনের কাছে ওরা ’খরগোশ শিশু’
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ অক্টোবর ২০১৬, ১২:৪০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
খরগোস শিশু হিসেবেই চিনছে এলাকার মানুষজন ওদের । দু বোনের বয়সের দুরত্ব ৯ বছর হলেও দুজন দুজনার । ঘুম থেকে উঠে ঘুমোতে যাওয়া অবধি খেলার সাথি …
রুপা খাতুন বয়স ২৬ বছর । আর মিম খাতুন – এর বয়স ১৭ বছর । তারা দুই বোন । দেখলে যে কেউ মনে করতে পারে হয়তো টুইন বেবি ।
রুপার উচ্চতা ৩১ ইঞ্চি এবং মিম এর উচ্চতা ২৬ ইঞ্চি । ওরা বাস করে বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলায় । বাপ দাদার বসতভিটা বাড়াদি ইউনিয়নের আঠারো ক্ষেদা গ্রামে । ওদের মায়ের নাম ফাতেমা বেগম ।
গল্পের শুরুটা এখোন থেকে ছাব্বিশ বছর আগে । ফাতেমা বেগমের কোল জুড়ে আসে একটি কন্যা সন্তান । সেটি ছিলো প্রথম সন্তান – মা হওয়ার প্রথম অনুভূতি । কিন্তু আকার আয়তন আর শারিরীক ওজন অনেক দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয় পুরো পরিবারটিকে । ভুমিষ্টের সময় ওজন দেখা যায় মাত্র দেড় কিলো । সে পর্যন্ত শেষ কথা নয় । দিন যত যায়
ততই যেন জটিলতা বাড়তে থাকে । হরমোন জনিত একটা প্রবল সমস্যা অবশ্য তাকালেই বোঝা যায় । গলার কন্ঠস্বর অস্বাভাবিক চিকন, হাতের দুই কনুই এর হাড় একটু খানি বেড়িয়ে আসা । মাথার চুলও অনেক হালকা । এমন কিছু ব্যতিক্রম চোখে পড়তে থাকে । মাস গড়িয়ে বছর আসে – কেটে যায় অনেক সময় কিন্তু আদরের সন্তানের শারিরীক বিকাশ ঘটেনা । যদিও চলাফেরায় কথাবার্তায় তেমন কোন সমস্যা দেখা যায়না ।
প্রথম সন্তানের প্রসবের সময় ফাতেমা বেগমের ২২ বছর বয়স । নিয়মিত চেক-আপ বা আল্ট্রা সোনোগ্রামের কোন সুযোগ ছিলোনা । একবারে নিভৃত পল্লী । সে সময়টাতে চলাফেরা ছিলো অনেক কঠিন । ভাঙ্গা চুড়া কাচা পথ । নগর সুবিধা বলতে সেই জেলা শহর চুয়াডাঙ্গা ।
ছিলোনা নিয়মিত ডাক্তার দেখানোর কোন তাগিদ । ১ম সন্তান রুপার গর্ভপাত গ্রামের দাই দিয়েই করানো হয় । এক্ষেত্রে যথেস্ট সচেতনতার অভাব ছিলো পরিবারটির মধ্যে ।
ফাতেমার বেগমের স্বামী আব্দুর রশিদ একজন কৃষক । অল্প পড়া শোনা জানা একজন । তাদের সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে ডাক্তার দেখানো চিকিতসা চালায় পরিবারটি । এক সময় তারা ধরে নেয় – এটা তাদের অদৃষ্ট । যা কপালে ছিলো তাই হয়েছে ।
এরপর ৯ বছর পর আসে আরেকটি সন্তান । কিন্তু দেখা যায় ওর ও এই রকম সব উপসর্গ । জন্মের সময় ওজন ছিলো প্রায় দেড় কিলোর মতো ।এবার আব্দুর রশিদ এবং ফাতেমা
উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে । বাংলাদেশে এমনকি পাশ্ববর্তী দেশ ভারতেও চিকিৎসকদের শরনাপন্ন হয় তারা । ফাতেমা বেগম জানায় – তাদের বয়স বাড়লেও চেহারার গড়ন শিশুদের মতো । তবে চলা ফেরায় কোন শারিরীক জটিলতা নেই । খাওয়া ঘুম অন্যদের মতোই স্বাভাবিক । তাদের শারিরীক গঠন নিয়ে গ্রামের অনেকেই হাসি তামাশা করে ।
তিনি বলেন – সন্তান গর্ভে থাকাকালীন সময়ে তিনি নিয়মিত চেক আপ বা হাসপাতালে যেতেন না । সন্তান গর্ভপাতের ঘটনাটিও তার বাসায় গ্রাম্য দাই দিয়ে সম্পন্ন হয় । রুপা এবং মিম সর্ম্পকে বলেন- তারা টেলিভিশন দেখে লুডু খেলে- সাদা কাগজে আকিজুকি করে কলম চালিয়ে সময় ব্যয় করে । তবে তাদের তেমন কোন বন্ধু নেই । দুজনই দুজনের বন্ধু । দিনের বেশির ভাগ সময় এক সাথে কাটায়। রাতে ঘুমোয় পাশাপাশি ।
তাদের মা আরো জানায় – বর্তমানে খাওয়ার পরিমান কমে গেছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, মানুষের জন্মের সময় মস্তিষ্কে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থের ঘাটতির কারনে এ রকম শারিরীক উপসর্গ দেখা দেয় । এর কার্যকর কোন চিকিতসা এখোনো আবিস্কৃত হয়নি । অনেক চিকিতসক হরমন জনিত সমস্যার কথাও বলেছেন তাদের। তবে প্রকৃত রোগ সর্ম্পকে তারা অবগত নয়।
সন্তানদের পিতা আব্দুর রশিদ জানান, তার মৃত্যুর পর সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে তিনি চিন্তিত । তিনি বলেন , তাদের চিকিৎসার পেছনে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখের বেশি অর্থ ব্যয় হয়ে গিয়েছে । তিনি একজন গরিব কৃষক তার পক্ষে আর এদের চিকিতসার ব্যয় বহন করা সম্ভব না । তাদের বাবা এটিকে ইশ্বরের আশির্বাদ হিসেবে মেনে নিয়ে শান্তনা খুঁজছেন ।