ওসমানী হাসপাতাল : কাছে এসেও গন্তব্যে পৌছা অনেকটা দু:সাধ্য!
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ অক্টোবর ২০১৬, ৫:৩০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেট নগরীর রিকাবীবাজার-মধুশহীদ-কাজলশাহ সড়ক। ডাক্তার এবং ক্লিনিকপাড়া হিসেবে খ্যাত এই এলাকা দিয়ে চলাচলকারী মানুষের ভোগান্তি এখন নিত্য দিনের সঙ্গী। বিশেষ করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাতায়াতকারী এ্যাম্বুলেন্স যানজটে আটকে মুমূর্ষ রোগীদের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ছে।
রিকাবীবাজার পয়েন্ট থেকে ওসামানী হাসপাতাল মিনিট পাঁচেকের পথ। কিন্তু সেই পাঁচ মিনিটের পথ পেরিয়ে হাসপাতালে পৌছতে কখনও কখনও সময় লেগে যায় ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট। প্রতিদিন বিকাল হলেই রিকাবীবাজার-মধুশহীদ-কাজলশাহ সড়কে তীব্র যানজট যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। অপ্রসস্ত সড়ক, ঘনঘন বেসরকারি হাসপাতাল, অপর্যাপ্ত পার্কিং ব্যবস্থা এবং ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা না থাকা যানজটের অন্যতম কারন বলে মনে করছেন বিভিন্ন মহলের মানুষেরা। এমনকি বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতে লেগে যায় দ্বিগুন সময়। এ নিয়ে দিন দিন শঙ্কা শুধু বাড়ছেই।
সিলেট বিভাগের প্রায় এক কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। স্বল্প টাকায় উন্নত চিকিৎসা সেবার কারনে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসেন এই হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিতে। এর মধ্যে গুরুতর অসুস্থ রোগীরাই বেশি ভিড় জমান। তবে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য প্রধান সড়ক রিকাবীবাজার-মধুশহীদ হলেও সেই রাস্তা দিয়ে হাসপাতালে পৌছা দিন দিন অনেকটা দু:সাধ্য হয়ে দাড়াচ্ছে।
রিকাবীবাজার-মধুশহীদ-কাজলশাহ সড়কে রাস্তার দু’পাশে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এবং বেসরকারি হাসপাতাল। রিকাবীবাজারের শুরুতেই বাম দিকের রাস্তায় পাশে রয়েছে মেডিটেস্ট ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, সিলেট এক্সরে ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, এর পরেই রয়েছেই বেসরকারি হাসপাতাল আরোগ্য পলি ক্লিনিক, এর পর থেকেই হাতের বাম ও ডানদিকের রাস্তায় রয়েছে, পপুলার মেডিকেল সেন্টার লি., জালালাবাদ ক্লিনিক, আল রাইয়ান হাসপাতাল, ক্রিসেন্ট ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, ল্যাবএইড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, মেডিনোভা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, কোমফোর্ট হার্ট সেন্টার, হেলথ্ কেয়ার হাসপাতাল, দেশ এক্সরে ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এবং পদ্মা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার।
এসব হাসপাতাল এবং ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোতে নগরীর নামীদামি ডাক্তারদের চেম্বার থাকার ফলে অনেক দূর দূরান্ত থেকে রোগীরা তাদের গাড়ি নিয়ে ডাক্তার দেখাতে আসেন। এত পরিবহন একই জায়গার মধ্যে আসার ফলে একটা বিরাট যানজটের সৃষ্টি হয়। সেই সাথে মুমূর্ষ রোগীরা ওসমানী হাসপাতালে পৌঁছতে হিমশিম খেতে হয়।
পুরো রাস্তা দ্রুত এসেও হাসপাতালের কাছে এসে যানজটের কারনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়। সঠিক সময়ে রোগীরা পৌছতে পারছেনা ওসমানী হাসপাতালে। এতে করে রোগীর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকরা। তারা আরও বলছেন সঠিক সময়ে পৌছতে না পারার কারনে অনেক রোগীকে চিকিৎসা দিয়েও বাঁচানো সম্ভব নাও হতে পারে।
শুধু যে রোগীরা বিপদে পড়ছেন তা নয়। এম্বুলেন্স ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপাকে। এই রাস্তার যানজটের জন্য তারাও রোগী নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন। যানজটে আটকে থাকার জন্য রোগী মৃত্যুর দায় যাতে তাদের উপর না বর্তায় তাই নিয়ে তারা সব সময় উদ্বিগ্ন থাকেন।
এ ব্যাপারে ডিসি ট্রাফিক মোহাম্মদ মুশফিকুর রহমান বলেন, ওসামনী হাসপাতালে যাওয়ার রাস্তায় অসংখ্য হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করে রাখার কারনে এখানে বিকেলের পরেই খুব বেশী যানজটের সৃষ্টি হয়।
ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এই রাস্তায় ট্রাফিক ব্যবস্থা দেওয়ার চেষ্টা করব। তবে আমরা আশপাশের পপুলার এবং ল্যাবএইড এর উপরে খুবই বিরক্ত। তাদের পার্কিং ব্যবস্থা না থাকার কারনে প্রতিনিয়ত রাস্তার পাশে যাত্রীরা উঠা-নামা করছে। তবে সেখানে অনেকে রাস্তায় ভুল পার্কিং করে থাকে, এমনকি অনেক সময় অ্যাম্বুলেন্সও পার্কিং করে রাখে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনী ব্যবস্থা নেই।
পাশাপাশি এই রাস্তায় গড়ে উঠা এসব হাসপাতাল এবং ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এর নিরাপত্তা কর্মীদের দিয়ে নিজ উদ্যোগে যানজট কমানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুস সবুর মিয়া বলেন, ওসমানী হাসপাতালে আসার রাস্তাটা সকল সময় ক্লিয়ার রাখা উচিত। সংকটাপন্ন রোগীরা সময়মত পৌছতে পারে না। এতে তাদের অনেক ক্ষতি হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরাও এর ভোক্তভোগী। সময়মত হাসপাতালে আসতে পারিনা এই যানজটের কারনে। এই ব্যাপারে ট্রাফিক বিভাগের দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।