সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক থেকে সরিয়ে নেয়া হবে লক্কর-ঝক্কর বাস
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ অক্টোবর ২০১৬, ১১:৩৮ অপরাহ্ণ
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা:
পরিবহন সেবায় পিছিয়ে থাকা সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কসহ জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে উন্নত যাত্রীসেবার উদ্যোগ নিচ্ছে সুনামগঞ্জ-সিলেটের মালিক-শ্রমিকরা।
রোববার থেকেই এই সড়ক থেকে লক্কর-ঝক্কর ও অনুন্নত বাসগুলো বিরতিহীন বাস সার্ভিস থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে রাস্তায় কোন যাত্রী ওঠা-নামা করালে এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহন করলে কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সকালে ‘সুনামগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস মালিক গ্রুপ’র কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জ ও সিলেটের মালিক-শ্রমিক সমিতির জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চারটি পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনেরা নেতারা।
সিলেট জেলা বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস মালিক গ্রুপ’র সভাপতি হাজী মো. আব্দুর রহিমের সভাপতিত্বে ও ‘সুনামগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস মালিক গ্রুপ’র বর্তমান মহাসচিব হাজী মোজাম্মেল হক ও সাবেক মহাসচিব মোহাম্মদ জুয়েল মিয়ার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ জেলা পরিবহন মালিক সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ও সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র হোসেন আহমদ রাসেল, সিলেট মাইক্রোবাস মিনিবাস মালিক গ্রুপের সভাপতি হাজী খলিলুর রহমান, সিলেট মোটর মালিক গ্রুপের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কাশেম, ‘সুনামগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস মালিক গ্রুপ’র সদস্য মোরশেদ আলম প্রমুখ। এছাড়াও সভায় সুনামগঞ্জ, সিলেট, ছাতক, দিরাই সড়কে যান চলাচলকারী চারটি সমিতির মালিক-শ্রমিকরা উপস্থিত ছিলেন।
‘সুনামগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস মালিক গ্রুপ’ ও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ-ছাতক-দিরাই-সিলেট সড়কে চারটি সমিতির প্রায় ৩৫০টি বাস যাতায়াত করে। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি বাস বিরতিহীন যাত্রীসেবার অনুপযোগী। দীর্ঘদিন ধরে এই অনুপযোগী লক্কর-ঝক্কর বাসেই ভোগান্তির বিরতিহীন সেবা দিয়ে আসছেন সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া সেবার নামে যাত্রীয় হয়রানিরও অভিযোগ আছে। নামে বিরতিহীন বাস সার্ভিস চালু থাকলেও স্টেশন ছাড়ার পরই লোকাল বাসের মতো যাত্রী ওঠানামা করানো হয়। অতিরিক্ত যাত্রীবহন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ফলে যাত্রীরা সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে ভোগান্তির যাতায়াত করছেন। চলতি বছর সুনামগঞ্জ ও সিলেটে উন্নত বাস সার্ভিসের দাবিতে সাধারণ যাত্রীরা নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন। উন্নত যাত্রীসেবা ও সড়কে আধুনিক ও যুগোপযোগী বাস সার্ভিসের দাবিতে সংশ্লিষ্ট দফতরে স্মারকলিপি, মানববন্ধন, পদযাত্রা, আলোচনাসভাসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে দুই মাস আগে মালিক-শ্রমিকরা ‘সুনামগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস মালিক গ্রুপ’ কার্যালয়ে বৈঠক করে নিজেদের পরিবহন সেবা নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে উন্নত সেবার আহ্বান জানান সব মালিক-শ্রমিকদের।
সভা সূত্রে জানা গেছে, উন্নত বাস সার্ভিসের অনুপযুক্ত ও বিরতিহীন সার্ভিসের অন্তরায় প্রায় দেড় শতাধিক বাসকে বিরতিহীন সিরিয়াল থেকে বাদ দেওয়া হবে। যে বাসগুলো তূলনামূলক ভালো, আধুনিক ও মানসম্মত সেগুলো দিয়েই আগামী রোববার থেকে বিরতিহীন সেবা শুরু করা হবে। পাশাপাশি চালকরা যাতে রাস্তায় যাত্রী ওঠানামা না করতে পারে এবং সিটের অতিরিক্ত যাত্রী গাড়িতে না তোলতে পারে তাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১১জন লাইনম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কেউ রাস্তায় এই অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়াও ওই বৈঠকে বিরতিহীন ও অন্যান্য গাড়ির সেবার মানোন্নয়নেও ঐকমত্যে পৌঁছেন মালিক ও শ্রমিক নেতারা।
বৈঠকে উপস্থিত ‘সুনামগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস মালিক গ্রুপ’র সাবেক মহাসচিব মোহাম্মদ জুয়েল মিয়া বলেন, আমাদের চারটি পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামী রোববার থেকে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিরতিহীন সার্ভিসে কোন লক্করঝক্কর ও অনুন্নত বাস দেওয়া হবে না। সড়কে যে বাসগুলো যুগোপযোগী এবং উন্নত ও আধুনিক যাত্রীসেবায় উপযুক্ত সেগুলোকেই সিরিয়াল দেওয়া হবে। তাছাড়া চালকরা যাতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করতে পারে এবং রাস্তায় দাঁড় করিয়ে কোন যাত্রী ওঠাতে না পারে তা ঠেকানোর জন্য ১১ জন লাইনম্যান নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেউ আইন ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া আগামীতে এই সড়কে উন্নত ও আধুনিক যাত্রীসেবার লক্ষ্যে ও যাত্রীসেবার সার্বিক মানোন্নয়নে মালিক ও শ্রমিকরা উদ্যোগ নিবেন।