সিলেটে সামাদ-সুরঞ্জিতের উত্তরসূরি এবারই?
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ অক্টোবর ২০১৬, ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেট আওয়ামী লীগে আধিপত্য নিয়ে দুই নেতার বিরোধ ছিল প্রকাশ্য। দলের নেতাকর্মীদের সিংহভাগই ছিলেন তাদের অনুসারী। একজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদ ও অন্যজন সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সুনামগঞ্জের এই দুই বর্ষীয়ান নেতাই ছিলেন সিলেট অঞ্চল থেকে আওয়ামী লীগের মর্যাদাপূর্ণ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।
সামাদ আজাদের মৃত্যুর পর দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে একমাত্র ‘সিলেটি’ নেতা হিসেবে ছিলেন সুরঞ্জিত। কিন্তু এক-এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দলের গুরুত্বপূর্ণ এ পদ থেকে তিনি ছিটকে পড়েন। আওয়ামী লীগের আরেকটি জাতীয় সম্মেলনের আগে সিলেটে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন, সভাপতিমণ্ডলীতে সামাদ-সুরঞ্জিতের উত্তরসূরি নেতাদের দেখা মিলবে কি-না। তৃণমূল নেতারা এবার আশায় বুক বেঁধেছেন।
সিলেট বিভাগ থেকে কারা পরবর্তী কমিটিতে ঠাঁই পাবেন, এ নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা চলছে অনেকদিন ধরে। বর্তমান কমিটিতে উপদেষ্টা পরিষদে আছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। টানা দু’দফা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। কেন্দ্রীয় কমিটিতে আরও রয়েছেন সরকারের দুই মন্ত্রী একজন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং অন্যজন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান।
এসব নেতার মধ্যে কেউ এবার মর্যাদাপূর্ণ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হতে পারেন বলে আশা করছেন তৃণমূল নেতারা। এ ক্ষেত্রে পদের সংখ্যা আসন্ন কাউন্সিলে বাড়ায় সুরঞ্জিতের পুনর্বহাল কিংবা নতুন কারও অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা দেখছেন তারা। সিলেট ও সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগের চারজন নেতা কাছে এমন আশার কথা জানিয়েছেন। তাদের একজন মনে করেন, সুরঞ্জিতের সভাপতিমণ্ডলীতে ফেরত আসার চেয়েও নুরুল ইসলাম নাহিদের গুরুত্বপূর্ণ এই পদে দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আগামী কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের আগামী কমিটিতে বড় চমক হতে পারেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেন। মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ (সদর) আসনে ড. মোমেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্থলাভিষিক্ত হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ অবস্থায় কেন্দ্রে তার গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সিলেট থেকে বিগত কমিটিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন সৈয়দা জেবুন্নেছা হক। বর্তমান কমিটিতে তিনি না থাকলেও আগামী কমিটিতে তার ফেরার সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে। কমিটিতে নারী নেতৃত্ব বাড়ার সম্ভাবনা থাকায় নতুন হিসেবে আলোচনায় আছেন নারী সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। এ ছাড়া সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর স্ত্রী সায়রা মহসিনের নামও আলোচনায় রয়েছে।
এ ছাড়া সিলেট বিভাগ থেকে আওয়ামী লীগের আগামী কমিটিতে পদ পেতে পারেন এমন আরও হাফ ডজনেরও বেশি নেতার নাম আলোচনায় রয়েছে। তাদের মধ্যে আলোচনার অগ্রভাগে রয়েছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতা সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীও পদ পেতে পারেন বলে মনে করছেন তার অনুসারীরা। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনের নামও রয়েছে আলোচনায়।
এ ছাড়া আবদুস সামাদ আজাদের ছেলে আজিজুস সামাদ ডন, হবিগঞ্জ জেলা সভাপতি আবু জাহির এমপি, সুনামগঞ্জের মুহিবুর রহমান মানিক এমপি ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন বলেন, সবার বিষয়ে দলীয় প্রধান অবগত আছেন। কাকে দিয়ে কোন দায়িত্ব পালন করানো যাবে, তা তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন।
অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, আগামী নেতৃত্বে কারা থাকবেন, তার সিদ্ধান্ত নেবেন নেত্রী। তিনি যাকে যেখানে যোগ্য মনে করবেন, সেভাবেই হবে। তার প্রতি আমাদের আস্থা শতভাগ।