ভারতের বন্দরে খালি কন্টেইনার থেকে বাংলাদেশি যুবক উদ্ধার
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০১৬, ১০:৩১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
ভারতের ভিশাখাপতনম বন্দরে একটি খালি কন্টেইনার থেকে বাংলাদেশি এক যুবককে উদ্ধার করা হয়েছে।রোহান নামে ওই যুবক এখন ভারতীয় পুলিশের তত্ত্বাবধানে কিং জর্জ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
১২ দিন আগে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাওয়া সিনার বাটাম নামে একটি জাহাজের খালি কন্টেইনারটিতে রোহান নামে ওই যুবক ঢুকে পড়ে বলে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। তিনি ঢাকায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের কারিগর হিসেবে কাজ করতেন বলে ভারতীয় একটি টিভি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে ভারতের দ্যা হিন্দু ও দ্যা নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ভারতের তেলেগু ভাষার টিভি নাইনেও রোহান হোসেনের সাক্ষাৎকারও প্রকাশ করা হয়েছে।
এসব গণমাধ্যমের সংবাদে বলা হয়েছে রোহান হোসেন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ওই খালি কন্টেইনারে উঠেছিল এবং কমপক্ষে ১২ দিন পর তার সন্ধান পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে বিশাখাপতনম ওয়ান টাউন পুলিশ স্টেশনে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার একজন কর্মকর্তা বলেন, রোহান হোসেনের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে।
১২ দিন আগে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছেড়ে আসা সিনার বাটাম জাহাজের একটি খালি কন্টেইনার ভিশাখাপতনম বন্দরে পৌঁছে।কন্টেইনারে পণ্য তোলার জন্য খুলতে গেলে সেখানে নড়াচড়ার শব্দ পাওয়া যায়।তখন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বিষয়টি ওয়ান টাউন পুলিশ স্টেশনে জানায়।পুলিশ গিয়ে রোহানকে অর্ধচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে কিং জর্জ হাসপাতালে ভর্তি করায়।
তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, দ্রুত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে রোহান। তারপর তাকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো.জাফর আলম, পরিচালক পরিবহন গোলাম সরওয়ারকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও রিসিভ করেননি। পরে টার্মিনাল ম্যানেজার মো.সরওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। কোন মন্তব্য করতেও রাজি হননি তিনি।
জাহাজে উঠার আগে পরিবহন বিভাগ কন্টেইনার যাচাই করার নিয়ম রয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের নয়, বিষয়টি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ দেখে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খালি কন্টেইনারটি ইপিজেতে অবস্থিত কিউএনএস কন্টেইনার সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে বন্দরে যায়।নিয়ম অনুযায়ী বেসরকারি ডিপো থেকে কোন কন্টেইনার বের হওয়ার সময় দরজা খোলা রাখতে হয়। এরপর বন্দর গেইট দিয়ে প্রবেশের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি করে দেখেন।সর্বশেষ জাহাজে উঠার আগে কন্টেইনার সম্পূর্ণভাবে চেক করার দায়িত্ব পরিবহন বিভাগের।
বন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলার কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আহসানুল হক।
তিনি বলেন, একটি কন্টেইনার জাহাজে উঠার পর এমএলও জানতে পারে। কন্টেইনার বন্দর গেইট দিয়ে প্রবেশ করার সময় নিরাপত্তা বাহিনী দেখার কথা। এরপর পরিবহন বিভাগ দেখে সম্মতি দিলেই কন্টেইনার জাহাজে উঠে। এক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট অবহেলা আছে।
কিউএনএস কন্টেইনার সার্ভিসেস লিমিটেড’র চেয়ারম্যান ও বিকডা সভাপতি নুরুল কাইয়ূম খান বলেন, ডিপো থেকে দরজা খোলা অবস্থায় কন্টেইনার বের করা বাধ্যতামূলক। বন্দরে গেইট দিয়ে প্রবেশের সময় নিরাপত্তা বাহিনী দেখে একটি চালান নম্বরও দেয়। ফলে ডিপো থেকে খালি কন্টেইনারে কোন লোক যাওয়া সম্ভব না। বন্দর জেটি থেকেই গেছে।
তিনি বলেন, এটা বন্দরের জন্য নতুন কোন ঘটনা নয়। এর আগেও এভাবে অনেকে গেছে। কেউ মারা গেছে। কেউ ফেরত এসেছে। এজন্য বন্দরই দায়ী।
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের টিভিনাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রোহান বলেন, একজন লোক তাকে কন্টেইনারে উঠে ঘুমিয়ে পড়তে বলে।না হলে গাড়ি ধাক্কা দিলে ব্যাথা পাবে। ১ থেকে ১২ দিন পর টার্মিনাল থেকে বের হওয়া যাবে বলে রোহানকে জানায় ওই ব্যক্তি।
এর আগে ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে রাখা একটি খালি কন্টেইনারে ঢুকে আটকা পড়েন দ্বীন ইসলাম ও আল আমিন নামের দুই বন্দর শ্রমিক। জাহাজটি সিঙ্গাপুর পৌঁছানোর পর আল আমীনের লাশ ও দ্বীন ইসলামকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।পরে দ্বীন ইসলামে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।