বড়লেখায় জরিমানা আদায় করা স্বত্বেও থামছে না টিলাকাটা
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ অক্টোবর ২০১৬, ৪:৩৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে জরিমানা আদায় করা স্বত্বেও থামাতে পাড়ছে না পাহাড় ও টিলা কাটা।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পাহাড়-টিলা কাটা নিষিদ্ধ ও শাস্তিমুলক অপরাধ হলেও বন্ধ হচ্ছে না পাহাড়-টিলা কাটা। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে অসাধু চক্র প্রাকৃতিক টিলার মাটি কেটে বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে।
উপজেলার প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন স্থানে নির্মিতব্য সরকারি অডিটোরিয়ামের ভিটা ভরাটের কাজ চলছে নিষিদ্ধ টিলার মাটি দিয়ে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মাটিবাহী যানবাহনের এক চালককে সম্প্রতি অর্থদণ্ড প্রদানের মাধ্যমেই প্রশাসনিক ব্যবস্থা সীমাবদ্ধ থাকায় বড়লেখায় বন্ধ হচ্ছে না পাহাড়-টিলা নিধনযজ্ঞ।
অব্যাহত টিলা কাটার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট ও পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে পাহাড়ের সবুজ বনাঞ্চল। আবাসস্থল হারাচ্ছে বন্যপ্রাণী। অতিবর্ষণে ভূমি ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। হাতি, বাঘ, হরিণ, বানরসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী লোকালয়ে বেরিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে এবং মানুষের উদ্বেগ-আতংকের কারণ হচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার মোহাম্মদনগর, ডিমাই, ছোটলেখা, কেছরিগুল, শাহবাজপুর, মূছেগুল, জামকান্দিসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা ঘুরে অবাধে পাহাড় টিলা কেটে মাটি বিক্রি চলতে দেখা গেছে। উপজেলায় প্রায় শতাধিক ট্রাক-ট্রাক্টর নির্বিচারে পাহাড় টিলা কাটায় নিয়োজিত। টিলার অবৈধ মাটি পরিবহনে নিয়োজিত অধিকাংশ ট্রাক্টরের নেই বৈধ কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স। এরপরও প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ যানবাহনে সরকার-বেসরকারি ভিটা ভরাটের কাজ চলছে পাহাড়-টিলার মাটি দিয়ে।
মোহাম্মদনগরে ফারুক আহমদ নামে এক ব্যক্তিকে শ্রমিক নিয়ে বিশাল টিলা কাটতে দেখা গেছে। একই গ্রামের হান্নান নামের এক ব্যক্তির বসত বাড়ি সংলগ্ন বিশাল টিলা কেটে ট্রাক্টর লোডকালে কথা হয় চালকের সাথে। তিনি জানান, ট্রাক্টরের মালিক আব্দুল আজিজ। মোহাম্মদনগর বাজারের আব্দুর রাজ্জাক ও ময়নুল ইসলাম নামের দু’ব্যক্তি তাদের মার্কেট সম্প্রসারণের জন্য পূর্বদিকের নিচু জায়গা ভরাট করতে মালিকের সাথে চুক্তি করেছেন। এজন্য শ্রমিক নিয়ে তিনি টিলা কাটছেন। ড্রাইভার আরো জানান, এ এলাকায় আব্দুল মজিদ, বদরুল ইসলাম, আতিক মিয়াসহ ৭-৮ জন মালিকের ট্রাক্টর টিলার মাটি কেটে বিক্রি করছেন।
উপজেলার প্রশাসনিক ভবনের উত্তর দিকে নির্মিতব্য অডিটোরিয়ামের মাটি ভরাটের কাজ চলছে টিলার মাটি দিয়ে। সদর ইউনিয়নের উত্তর মূছেগুল এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মালিক, আব্দুল মনাফ, আবু হাসান প্রমুখ জানান পৌরসভার জনৈক মহিলা কমিশনার ও সদর ইউনিয়নের এক ইউপি মেম্বার ঠিকাদারের সাথে ট্রাক্টর প্রতি ১ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করে সরকারি অডিটোরিয়ামের ভিটা ভরাটের চুক্তি করেছেন। প্রশাসনের নাকের ডগায় তারা উত্তর মূছেগুল ও ডিমাই এলাকার পাহাড় টিলা ধ্বংস করে এবং জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা নষ্ট করে মাটি ভরাট করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, চলিত মাসে টিলার মাটি পরিবহনের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পৌরশহরে এক ট্রাক্টর চালককে ৫০ হাজার টাকা এবং সীমান্তবর্তী শাহবাজপুর এলাকায় অপর ব্যক্তিকে আরো ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। মোবাইল কোর্ট চলার ২-৪ দিন পর টিলা কাটা বন্ধ রাখলেও অসাধু চক্রটি পুনরায় টিলা কাটা শুরু করে দেয়। টিলা কাটা রোধে প্রশাসন আগামীতে অর্থদণ্ড নয়, কারাদণ্ড দেয়ার চিন্তা ভাবনা করছে।
টিলার মাটি দিয়ে সরকারি অডিটোরিয়ামের ভিটা ভরাটের ব্যাপারে তিনি জানান, নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদ চাইলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। স্থানীয় প্রশাসন হিসেবে তার পক্ষে ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যতীত অন্য কোন ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই।