‘হায় হুসাইন হায় হাসাইন’ ধ্বনিতে ভারী ওসমানীনগর (ভিডিওসহ)
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ অক্টোবর ২০১৬, ১০:৪৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
ওসমানীনগরে তাজিয়া মিছিলের মাধ্যমে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্য ও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে পবিত্র আশুরা। পবিত্র এই দিনে মুসল্লীগণ পবিত্র কোরআন খতম, আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল, রোজা পালন, গরিবদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করছেন। মসজিদে মসজিদে আলোচনা সভা, জিকির ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন ছিল। শানে পাঞ্জাতনগুলোতে শেষ দিন ১০ই মহররম ‘হায় হুসাইন হায় হাসাইন’ ধ্বনিতে ভারী হয়ে উঠে ছিল এলাকার আকাশ-বাতাস।
এবার ওসমানীনগরে পবিত্র আশুরার জারি ও তাজিয়া মিছিল পালিত হয়েছে গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের পীর ওয়াছিদ আলীর বাড়ি পাঞ্জাতনের মোকাম, মোতিয়ারগাঁও পাঞ্জাতনের মোকাম, এওলাতৈল পাঞ্জতনের মোকাম, নিজ করনসী পূর্ব পাড়া পাঞ্জাতনের মোকাম, উমরপুর ইউনিয়নের বড় ইসবপুর পীর বাড়ি, সাদিপুর ইউনিয়নের গজিয়া ও ইব্রাহিমপুর পাঞ্জাতনের মোকাম।
এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ জানান- প্রতি বছর নতুন হিজরি সনের বার্তা নিয়ে মহররম আমাদের মাঝে আগমন করে। এটি আরবি বছর গণনায় প্রথম মাস। সৃষ্টির শুরু থেকে এ মাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বিধায় মুহররম সম্মানিত ও মর্যাদাবান। মুহররম শব্দের অর্থ নিষিদ্ধ। এ মাসে কোনো ধরনের ঝগড়া-বিবাদ বা যুদ্ধ-বিগ্রহ করা ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ ছিল। সে কারণে মুসলিম মিল¬াতের কাছে এ মাসটি অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ।
মহররম মাসের ১০ তারিখ আশুরা নামে খ্যাত। আশুরা আরবি শব্দ। এর অর্থ দশ। দিবসটি ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। এ মাসেই ঘটে গেছে অসংখ্য ঐতিহাসিক ঘটনা। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) প্রিয় দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.), তার পরিবার ও সঙ্গীরা কারবালার প্রান্তরে শাহাদত বরণ করেন মুহররমের ১০ তারিখে। এরকম অনেক ঘটনার নীরব সাক্ষী হয়ে আছে মুহররমের দশ তারিখ। তবে আশুরা দু’টি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার জন্য স্মরণীয়। তার একটি হলো ফেরাউনের নিপীড়ন থেকে হজরত মুসার (আ.) মুক্তিলাভ। আর দ্বিতীয়টি হলো- হজরত হোসাইনের (রা.) শাহাদত।
মুসলিম উম্মাহ এ দুটি ঘটনা অত্যন্ত সাড়ম্বরে স্মরণ করে থাকে। কারবালার প্রান্তরে রাসুলের (সা.) প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইনের (রা.) শাহাদতের মর্মস্পর্শী ঘটনাটি মানব হৃদয়ে প্রচন্ডভাবে নাড়া দেয়। ঘটনাটি ঐতিহাসিকভাবে সত্য।
৬১ হিজরির মুহররমের ১০ তারিখেই এই মর্মান্তিক ঘটনার অবতারণা ঘটে। এজিদের সেনাবাহিনীর হাতে নির্মমভাবে ইমাম হোসাইন, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সঙ্গীরা শাহাদত বরণ করেন। ঘটনাটি ছিল বিষাদময় এবং বিশ্ব মুসলিমের অন্তরকে আহত করে চোখ অশ্রুভারাক্রান্ত হয়। তিনি জীবন দিয়েছেন তবুও বাতিলের কাছে নতি স্বীকার করেননি।
জানা যায়- হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম কারবালার প্রান্তরে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কনিষ্ঠ দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এজিদ বাহিনীর হাতে স্বপরিবারে কারবালার ময়দানে শহীদ হন। অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রেরণার উৎস হিসেবে এই শোক ও ত্যাগের দিনকে প্রতিবছর স্মরণ করেন সারাবিশ্বের মুসলমান। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের সুমহান আদর্শ সমুন্নত রাখতে তাঁদের এ আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে।
কারবালার এ শোকাবহ ঘটনা ও পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী মানুষকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে আজও অনুপ্রেরণা জোগায়। প্রেরণা জোগায় সত্য ও সুন্দরের পথে চলার।
ইসলামী স্টাডিজ ও হাদিসের মতে- সমগ্র ইসলামী জাহানের অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ও বেদনাদায়ক ঘটনা হচ্ছে ১০ই মহররম। এই দিনে বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র এবং ইসলামের অতন্দ্র প্রহরী হযরত ইমাম হাসান হোসাইন কারবালার ময়দানে ইসলামের চিরশত্রু ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদাৎ বরণ করেন। সেই দিন হতে বিশ্বের সকল মুসলমানগণ দিবসটিকে শোকাবহ দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন। এই দিনটি বহু বর্ণিল এবং বৈচিত্র্যময় ঘটনায় সমৃদ্ধ। একদিকে শোক, অন্যদিকে পুণ্য। কারবালার শোকাবহ করুণ স্মৃতিবিজড়িত ১০ মহররম কেবল ইসলামের ইতিহাসেই নয়, সমগ্র মানবজাতির ইতিহাসের অনন্য সাধারণ দিবস হিসেবে পরিগণিত।
ইতিহাস কারবালার মর্মান্তিক বেদনাদায়ক ঘটনা এ দিবসকে আত্মোৎসর্গ আর ন্যায়-নীতির সত্য-সুন্দর প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের চেতনায় সমুজ্জ্বল করে রেখেছে। সে সঙ্গে অন্যায়-অনাচার-অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে দিবসটি যুগযুগ ধরে। বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) ওফাতের বহু বছর পর ফোরাত নদীর তীরে তারই প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র এবং হজরত আলী (রা.) ও মা ফাতেমার (রা.) দ্বিতীয় পুত্র হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) শাহাদাৎবরণের ঘটনায় এ দিবসকে দিয়েছে নতুন মাত্রা, নতুন মর্যাদা। সৃষ্টি করেছে অনন্য ইতিহাস।
৬৮০ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ৬১ হিজরির এই সেই দিবস, যেদিন অপশক্তি-অন্যায়-অসত্যের কাছে মাথানত না করে সত্য-সুন্দর-ন্যায়ের পথে লড়াই করে বীরের মতো পরিবারের অনেক সদস্য ও সহচরকে নিয়ে শাহাদাৎবরণ করেন হজরত ইমাম হুসাইন (রা.)। সেই দুঃখময় স্মৃতি আজো বিশ্ব মুসলিমকে কাঁদায়। সে সঙ্গে প্রেরণা জোগায় ত্যাগের মহিমায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যায়-অনাচার অসত্য-অসুন্দরের বিরুদ্ধে আমরণ সংগ্রাম করার। এই দিনে হজরত ইমাম হুসাইন (রা.) এবং হজরত আলী (রা.)-এর পরিবারের বিশ জন শিশু-কিশোর যুবকসহ মোট ৭২ জন মর্দে মুজাহিদ কারবালার প্রান্তরে ফোরাতের দু’কূল ছাপা নদীর কিনারায় এক বিন্দু পানি হতে বঞ্চিত হয়ে শাহাদাতের পেয়ালা পান করেছিলেন।
রাসূল (সা.)-এর দৌহিত্র হুসাইন (রা.)-এর পবিত্র মস্তক নিষ্ঠুর নরাধম সিমার ছিন্ন করে কুফার দুরাচার ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদের দরবারে প্রেরণ করেছিল। এই দিন হজরত আদম (আ.)-এর তওবা কবুল হয়, মহাপ্লাবনের পর নূহ নবীর কিশতী (নৌকা) সবপ্রথম মাটির সংস্পর্শ লাভ করে এ দিনে, হজরত ইব্রাহীম (আ.) ভূমিষ্ঠ হন।
হজরত দাউদ নবীর তওবা কবুল হয়, হজরত আইয়ুব নবীর রোগ-যাতনা উপশম হয়, মুসা নবীকে আল্লাহ উদ্ধার করেন, ইউনুছ নবীকে মাছের পেট থেকে মুক্তি দান করেন, ঈশা নবীকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয় এ দিনেই।
ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুণ>>>>>>>