কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে সিলেট আওয়ামী লীগের নেতাদের লবিং
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ অক্টোবর ২০১৬, ৬:৩১ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে:
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে লবিং শুরু করেছেন সিলেটের নেতারা। ঢাকায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে তারা চেষ্টা করছেন। তবে, এ ব্যাপারে কেউ-ই মুখ ফুটে কিছু বলছেন না। এরপরও অর্ধডজন নেতা এবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এক সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কমিটিতে সিলেটের নেতাদের দাপট ছিল। প্রয়াত স্পিকার হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী, প্রয়াত সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ, সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ নেতারা কেন্দ্রে শক্তিশালী অবস্থানে ছিলেন। এ কারণে সিলেটেও গ্রুপিং-বিবাদের অন্ত ছিল না। হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী ও আবদুস সামাদ আজাদের মৃত্যুর পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও সিলেটের আওয়ামী লীগে নীরব হয়ে গেছেন। সিলেটে তার একটি শক্তিশালী বলয় থাকলেও তারা এখন অনেকটাই নিশ্চুপ। আর সিলেটে মাঠ দখলের সেই রাজনীতির ইতি ঘটেছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার হোসেন শামীমের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। প্রভাবশালী এ নেতার মৃত্যুর পর সিলেট আওয়ামী লীগের নতুন ধারার সৃষ্টি হয়। ওদিকে, আওয়ামী লীগের বিগত কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছিল অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে। সরকারের এই ৭ বছর তিনি দল গোছানোর কাজে ছিলেন। যদিও সব মহলে সমান গ্রহণযোগ্য নন। তবে, নিজের কোনো বলয় না থাকায় গত ৭ বছরে শাসক দল হিসেবে আওয়ামী লীগে তেমন বিদ্রোহ দেখা দেয়নি। বর্তমান জেলা ও মহানগর কমিটি গঠনকালে একটি অংশ বিদ্রোহ করলেও পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সঙ্গে সঙ্গে সেটিও কমে যায়। সিলেটের প্রশাসন ও দলে শক্তিশালী অবস্থান ছিল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর তিনি প্রথমে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও পরবর্তীতে সিলেটের সবকিছু তার নিজের মতো সাজিয়ে নেন। ফলে তিনি সিলেট আওয়ামী লীগে একজন ‘অভিভাবক’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। পাশাপাশি প্রশাসনেও পুরনো ধারার পরিবর্তন করে নতুন ধারা তৈরি করেন। এ কারণে সিলেট আওয়ামী লীগে মুহিত ও মিসবাহর বিকল্প শক্তি গড়ে ওঠেনি। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে এবারের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে সিলেট আওয়ামী লীগ। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চলছে দফায় দফায় বৈঠকও। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ কয়েক দফা বৈঠক করে ঢাকার সম্মেলনে যোগ দেয়ার কর্ম পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছেন। সিলেট আওয়ামী লীগের দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পেতে বেশিরভাগ নেতা লবিং শুরু করেছেন। বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তিনিও এবার সাংগঠনিক সম্পাদকের জন্য লবিং চালাচ্ছেন। একই সঙ্গে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, হবিগঞ্জের সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা আবদুজ জহির, প্রয়াত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের পুত্র আজিজুস সামাদ ডনসহ কয়েকজন নেতা এ পদে লবিং চালাচ্ছেন। সিলেটে অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের বিকল্প হিসেবে সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নাম নেতাদের মুখে বেশি। দীর্ঘ ১৫ বছর মেয়র থাকাকালে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান দলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ পদ চাননি। এরপরও সিলেটে দলকে শক্তিশালী করতে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বিএনপি দলীয় প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। আর এই পরাজয়ের পেছনে কামরান বলয়ের নেতারা আওয়ামী লীগের অন্য অংশকে দায়ী করছে। তার পক্ষে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেনি বলে নির্বাচনের পর জানিয়েছিলেন নেতারা। তবে, নির্বাচনে পরাজয় বরণের পর থেকে মন দিয়েছেন দলীয় কর্মকাণ্ডে। ইতিমধ্যে সিলেট মহানগরে আওয়ামী লীগ সুসংহত অবস্থানে রয়েছে। বিগত পৌর, ইউনিয়ন নির্বাচনে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান সিলেট বিভাগের মধ্যনগর থেকে মাধবপুর পর্যন্ত চষে বেড়িয়েছেন। পাশাপাশি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়ার সময় অনেকেই তার সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু শফিকুর রহমান চৌধুরী তার সাংগঠনিক কর্ম দক্ষতা দেখিয়েছেন দাপটের সঙ্গে। সিলেট জেলার সব কটি উপজেলায় তিনি কোন্দলমুক্ত করে দলের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে চলেছেন। সিলেটের রাজনীতিতেও ইতিমধ্যে অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। আওয়ামী লীগের এবারের কাউন্সিলের তোড়জোড় শুরুর সঙ্গে সিলেটের রাজনীতিতে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের পুত্র আজিজুস সামাদ ডনের নাম আলোচনায় এসেছে। আওয়ামী লীগের এবারের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে পারেন জাতিসংঘ মিশনের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আবদুল মোমেন। তিনি ইতিমধ্যে সিলেটের রাজনীতিতে পদচারণা শুরু করেছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলয়ের নেতারা সিলেটের পরবর্তী নেতা হিসেবে ড. মোমেনকে ভাবতে শুরু করেছে। তাকে নিয়ে তারা রাজনৈতিক ময়দানে সরব রয়েছেন।-মানবজমিন