যাদের টাকায় স্বাবলম্বী বিমান তাদের জীবনের শেষ যাত্রায় ভাড়া তিনগুণ !
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ অক্টোবর ২০১৬, ৩:৫৫ পূর্বাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক, লন্ডন অফিস:
যাদের কষ্টার্জিত উপার্জনের টাকায় দেশের অর্থনীতি সচল থাকে তাদের জীবনের শেষ ইচ্ছা পূরণে খরচ করতে হয় তিনগুণ ! প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী ভাগ্যাহত মানুষগুলো নিজের দেশে চিরনিদ্রায় শায়িত হওয়ার আশা পূরণ করতে হলে ২ হাজার পাউন্ডের বেশী ভাড়া বাবত দিতে হয়। ভাগ্য বিরম্ভিত এসব মানুষের টাকায় পরিচালিত রাষ্ট্রায়াত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অনৈতিক ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির কারণে অনেক প্রবাসীর শেষ ইচ্ছা দেশের মাটি জোটেনা। অসহায় মানুষগুলোর আর্থিক অসঙ্গতি আর বিমানের ব্যবসায়িক মনোভাবের কারণে তাদের শেষ আশা নিরাশায় পরিনত হয়। অথচ বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের মোট রাজস্ব আয়ের বড় একটা অংশ আসে যুক্তরাজ্য বসবাসকারী বাংলাদেশীদের কাছ থেকে ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের এয়ারলাইন্স গুলো সরকারী বিশেষ অর্থের সহায়তায় তাদের ভাগ্য বিরম্ভিতদের লাশ বিনা খরচে পৌছানোর ব্যবস্থা করে । সেখানে বাংলাদেশীদের দিতে হয় আসল ভাড়ার তিনগুণ । মুসলিম দেশগুলোর সরকার তার জনগনের দুঃসময়ে পাশে থাকার অঙ্গীকারের অংশ হিসাবে বিশেষ ব্যবস্থায় এ অর্থের যোগান দিয়ে থাকে। অথচ ৯২ ভাগ মুসলমানের বসবাস বাংলাদেশ সরকার তার অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তির উৎস প্রবাসীদের শেষ ইচ্ছা পূরণে নিয়ে থাকে তিনগুন টাকা।
বিভিন্ন সুত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, প্রতিবছর ব্রিটেনে প্রায় ৩০০ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। তবে ব্রিটেন প্রবাসীদের বড় একটি অংশ ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করায় এদেশে মৃত্যুবরণকারীদের সঠিক সংখ্যা বের করা যায়নি। ইস্ট লন্ডন মসজিদ, ব্রিকলেন জামে মসজিদ, ম্যানচেষ্টার জামে মসজিদ, বার্মিংহাম জামে মসজিদ, ব্রাডফোর্ড জামে মসজিদ সুত্রে জানা যায়, প্রতি সপ্তাহেই কোন না কোন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। আর এসব মৃত্যুবরণ কারী ব্যক্তিদের শেষ ইচ্ছা থাকে দেশে নিজের প্রিয় পিতা, মাতা, দাদা দাদীসহ আত্বীয় স্বজনের পাশে শেষ ঘুম ঘুমানোর। কিন্তু দুই হাজার পাউন্ড খরচ করে দেশে যাওয়ার ক্ষমতা সবার হয়না বিমান বাংলাদেশের অনৈতিক মনোভাবের কারণে ।
বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের লন্ডন অফিসে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা সুরমানিউজ টোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, প্রতি বছর গড়ে একশ জনের লাশ তারা বহন করে থাকে । তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে ইস্ট লন্ডন মসজিদস্থ হাজী তাসলিম ফিউনারাল সার্ভিস ও ব্রাডফোর্ড শের আযাম ফিউনারাল সার্ভিস সুত্রে জানা গেছে, প্রতিটি মৃতদেহ বহনের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সময় ভেদে দুই হাজার থেকে বাইশ শত পাউন্ড পর্যন্ত দাবি করে বসে। তারা আরো জানায়, প্রতি বছর গড়ে ১০০ জনের লাশ তারা বাংলাদেশে পাঠিয়ে থাকে। এই সংস্থাটি ছাড়াও আরো দশের অধিক একই ধরনের প্রতিষ্ঠান এ ধরনের সার্ভিস দিয়ে থাকে। এসব সংস্থার হিসাব অনুসারে প্রতিবছর অনেক বাংলাদেশির মৃত্যু হয় যুক্তরাজ্য জুড়ে। বিমানের অনৈতিক মনোভাব আর অর্থনৈতিক অসঙ্গতির কারণে এখন অধিকাংশ বাংলাদেশীকে যুক্তরাজ্যেই সমাহিত করা হয়ে থাকে। এসেক্সের হেইনল্ট ফরেস্টের কাছে রয়েছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় কবরস্থান গার্ডেন অব পিস যেখানে লাশ সমাহিত করতে হলে মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় করতে হয় ।
জানা যায়, সরকারি খরচে প্রবাসীদের মরদেহ দেশে আনার দাবিতে গত ২৭ মার্চ, রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি গোলটেবিল মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছে প্রবাসি অধিকার ফোরাম। ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশী সাংবাদিকদের সংগঠন প্যারিস-বাংলা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে এই দাবিটি সামনে তুলে ধরা হয়। এই ক্লাবের সহযোগিতায় প্রবাসি অধিকার ফোরাম আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরেন।
ব্রিটেনের বাংলাদেশী ইসলামিক স্কলাররা সুরমানিউজ টোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, ইসলামিক রীতি অনুযায়ী কোন মুসলমান মৃত্যু বরণ করার পর পরই মৃত ব্যক্তির চোখ বন্ধ করে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। মুখমন্ডল সঠিক করে দেওয়ার নির্দেশনা ও রয়েছে পরিষ্কারভাবে। মুসলিম মৃত ব্যক্তিদের দাফনের ব্যাপারেও পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া আছে। মুসলিম বিধান অনুসারে একজন পুরুষ মৃত ব্যক্তির লাশ যে কোন পুরুষ ধর্মীয় অনুসারে গোসল এবং দাফন করতে পারেন। কিন্তু মৃত ব্যক্তি যদি মহিলা হন তাহলে তাকে যে কোন মহিলা গোসল করাতে পারলেও কবরে শোয়ানুর সময় শুধুমাত্র ঘনিষ্ঠ আত্বীয় স্বজন দ্বারা দাফন করার জন্য বলা হয়েছে। এদেশে অনেক বৃদ্ধা রয়েছেন যাদের ঘনিষ্ঠ আত্বীয় হয় বাংলাদেশে রয়েছেন অথবা কেউ নেই এসব ক্ষেত্রে ধর্মীয় রীতিনীতির ব্যাঘাত ঘঠছে । এ জন্য ব্রিটেনে বসবাসকারী কোন মানুষ যদি মারা যান তার লাশ বাংলাদেশে নিতে পারলে অন্তত ধর্মীয় বিধান অনুসারে দাফন করা যায় ।