সেই দুর্ধর্ষ মাশরাফির ফিরে আসা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ অক্টোবর ২০১৬, ৫:০১ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ ‘নাসির, নাসির’ চিত্কারটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। ‘মাশরাফি, মাশরাফি’ স্লোগান দখল করে নিল সে জায়গা। ব্যাট হাতে ৪৪ রানের পর বল হাতেও ইংল্যান্ডের ইনিংসেও আঘাত আনলেন চারবার। এ তো মাশরাফিরই ম্যাচ!
আফগানিস্তান সিরিজের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেও খেলার সুযোগ হয়নি নাসিরের। তাঁকে দলে নিতে যেরকম ‘গণ-দাবি’ উঠেছিল, মাঠে নামার পর দর্শকদের তাকে স্বাগত জানানোটাই ছিল স্বাভাবিক। নাসির তাতে অনুপ্রাণিত হতে পারেন, অনুভব করে থাকতে পারেন চাপও। কিন্তু মাশরাফির ব্যাটে উড়ে গেল সব চাপ। নাসিরের ওপর থেকে, দুই শর নিচে অলআউটের শঙ্কায় দুলতে থাকা বাংলাদেশের ওপর থেকেও। ইনিংসের শেষ ১০ ওভারে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম প্রকম্পিত হলো ‘মাশরাফি মাশরাফি’ ধ্বনিতে।
মাঝে ব্যাটিংটা মাশরাফি ভুলেই গিয়েছিলেন বলে মনে হচ্ছিল। বেশি দূর যাওয়ার দরকার নেই। সর্বশেষ চার ইনিংসে তাঁর রান ৪, ২, ২, ১। অথচ স্লগ ওভারে এই মাশরাফিই কতবার যে বাংলাদেশের ভরসা হয়েছেন! ২০০৭-এ ভারতের বিপক্ষে হোম সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেটার কথা মনে আছে? এই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেই ২১ বলে করেছিলেন অপরাজিত ৪২। শুধু ২১ বলে ৪২-এর জন্য নয়, মাশরাফির সেদিনের ব্যাটিং মনে রাখার আরও কারণ আছে। আউট হওয়ার আগের ওভারে দীনেশ মঙ্গিয়ার বলে মেরেছিলেন পর পর চার ছক্কা। যুবরাজ সিংকে ছক্কা মেরেছিলেন তার আগের ওভারেও।
ওই ম্যাচ বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত না জিতলেও স্লগ ওভারে মাশরাফির ব্যাটে ঝড় উঠেছে, এমন অনেক ম্যাচেই জয় আছে বাংলাদেশের। সেসব ম্যাচের বেশ কয়েকটিতেই মাশরাফির ম্যান অব ম্যাচ হওয়া বলে দিচ্ছে জয়ের পেছনে তাঁর ব্যাটিং ঝড়ের কতটা ভূমিকা ছিল। সেই মাশরাফি প্রায় দুই বছর কোথায় যে ডুব দিয়ে থাকলেন! ২০১৪ এর নভেম্বরে ঢাকায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৫ বলে ৩৯ করেছিলেন। আজকের আগ পর্যন্ত মাঝের ১৩ ইনিংসে সর্বোচ্চ করেছিলেন ২১।
তার চেয়েও বড় কথা, মাশরাফির ব্যাট থেকে হারিয়ে গিয়েছিল মারকাটারি মেজাজ। এলোমেলো শট, পেস বোলিংয়ের সামনে সন্ত্রস্ত ভাব—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল আগের সেই ব্যাটিংটা বুঝি হারিয়েই গেছে তাঁর খেলা থেকে।
বোলিংয়ে সেই ধার নেই, ব্যাট হাতেও এলোমেলো; মাশরাফির নামের সঙ্গেই তো যায় না। অবশেষে ব্যাটে-বলে নিজের দিকে সবটুকু আলো কেড়ে নেওয়া সেই মাশরাফিই ফিরে এলেন আজ!
১৬৯ রানে ৭ উইকেট পড়ার পর উইকেটে আসেন। ৪৮তম ওভারে যখন আউট হলেন, স্কোরবোর্ডে ২৩১/৯। ২২ বলে ৪২ রানের ইনিংসে দুই বাউন্ডারির সঙ্গে তিন ছক্কা। ওয়ানডেতে মাশরাফির মোট ছক্কা হয়ে গেল ৫২টি। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তাঁর চেয়ে বেশি ছক্কা আছে কেবল তামিম ইকবাল (৬৪) ও মুশফিকুর রহিমেরই (৫৩)। এর পর তো বল হাতে টপাটপ উইকেট তুলে নিলেন একে একে। ২৬ রানে ইংল্যান্ডের প্রথম ৪ উইকেট পড়ল, তিনটিই তাঁর। শেষ উইকেটে ৪৫ রানের জুটি গড়ে যখন আবারও চোখ রাঙাচ্ছিল ইংল্যান্ড, সেই মাশরাফিই তুলে নিলেন। মুড়ে দিলেন ইংল্যান্ডের ইনিংস। ম্যাচ সেরা পুরস্কারে আজ কোনো প্রতিপক্ষ ছিল না তাঁর।