সিলেটে যে প্রশ্ন সবার মুখে মুখে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ অক্টোবর ২০১৬, ৯:৫৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটের শেখঘাট, শেখ ছানাউল্লাহ্ মসজিদ। মাত্রই শেষ হয়েছে নামাজ। নামাজ শেষে মসজিদের বাইরে স্থানে স্থানে বয়োবৃদ্ধ মুসল্লিদের জটলা। রাজনীতির হিসাব নিকাশ ছাপিয়ে তাদের আলোচনায় কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস। মেয়েটির জন্য নামাজে প্রার্থনা করে এসেছেন। নামাজের পরপরই খাদিজার ওপর হামলাকারী বদরুল আলমের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনও করেছেন। সে আলোচনাই হচ্ছে। ডালপালা মেলছে আলোচনা। আলোচনায় এক সময় তীব্র হতাশা ঝরে পড়ে বয়সী কণ্ঠগুলো থেকে। আলোচনায় জড়ো হওয়ার তারুণ্য পেরিয়ে আসা যুবকরাও কণ্ঠ মেলালেন তাদের সঙ্গে। সবারই প্রশ্ন, এত লোকের ভিড়ে কি করে একটা মানুষ নির্মমতার এমন সুযোগ পেল। সবার সামনে একের পর এক কোপ দিয়ে যাচ্ছে একটা নির্দয় মানুষ, কেউ কেন এগিয়ে গেলো না মেয়েটিকে বাঁচাতে। বয়োবৃদ্ধদের বিশ্লেষণ, তরুণ প্রাণে এখন ভয় ঢুকে গেছে। সবার আগে নিজেদের নিরাপত্তার ভাবনাটা জেঁকে বসে তরুণদের মনে।
ছোট এ চিত্রটি যেনো পুরো সিলেটেরই। খাদিজা প্রসঙ্গ যখনই যেখানে আলোচনায় উঠে আসছে- তখনই একটি প্রশ্ন সবার হৃদয়ে ভিড় করে। কেউ কেন এগিয়ে এলো না? ভিডিওচিত্রে অনেকের উপস্থিতি, অনেকের কণ্ঠস্বর শোনা গেলেও খাদিজাকে রক্ষায় কাউকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়নি। বিষয়টা বারেবারেই পীড়া দিচ্ছে বয়সী সিলেটের সচেতন মানুষের মনে। কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা একজোট হলেই তো রুখে দেয়া যেতো বদরুলকে। বদরুলকে রুখলেনও শিক্ষার্থীরা। কিন্তু যখন আর কিছু করার নেই বদরুলের, তখনই তারা প্রতিরোধ গড়েন। ক্ষতবিক্ষত খাদিজা যখন কোনোমতে শ্বাসটি ধরে আছে তখন তারা এগুলেন। কেন একটু আগে শিক্ষার্থীরা তৎপর হলেন না- এমন আক্ষেপই সিলেটের বাতাসে।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল আজিজ হতাশ বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে। তিনি মনে করেন, সেদিন ছাত্ররা একটু সাহসী হলে হয়তো এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হতো না। দীর্ঘদিন এমসি কলেজে শিক্ষকতা করে আসা এ শিক্ষক বলছেন, তার ছাত্রছাত্রীদেরই তিনি দেখেছেন কোথাও একটু অন্যায় হলে, অন্যায়ের চেষ্টা হলে তারা তা রুখে দিয়েছে। তিনি মনে করেন, আগে ছেলেমেয়েরা যতটা সাহসী, যতটা প্রতিবাদী ছিল- এখনকার তরুণদের মনে সে সাহস নেই। তারা এখন ভিডিও করা, ছবি তোলাকেই সাহস মনে করছে। তারুণ্যের চেতনাই নষ্ট হয়ে গেছে বলে মনে করছেন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির এ এমিরিটাস অধ্যাপক। তার ভয়, এভাবে তরুণরা নিষ্প্রাণ হয়ে গেলে দেশ এগুবে কি করে?
মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হকের কণ্ঠ থেকেও হতাশারই সুর শোনা গেলো তরুণদের নিয়ে। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল হক মনে করেন, উপস্থিত শিক্ষার্থীরা বাধা দিলে এমসি কলেজের ঘটনাটি ঘটতো না। তিনি বলেন, অনেককেই বলতে শুনি হামলাকারীর হাতে চাপাতি থাকায় ভয়ে কেউ এগোয়নি। তিনি এ যুক্তিকে মানতেই চান না। তিনি বলেন, একাত্তরে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তারা যুদ্ধের জন্য ঘর ছেড়েছিলেন। সাহস করেছিলেন বলেই দেশ স্বাধীন হতে পেরেছে।